৮ বছরে আসামের বন্দিশিবিরে মারা গেছেন ২৬ জন

আসামের বন্দিশিবিরে আটক অবস্থায় গত ১৩ অক্টোবর মারা যান দুলাল চন্দ্র পাল নামের ৬৪ বছরের এক ব্যক্তি। তাঁর বাড়ি ছিল রাজ্যের ঢেঁকিয়াজুলির আলিসিঙ্গা গ্রামে। ভারতের জাতীয় নাগরিকপঞ্জিতে (এনআরসি) নাম না থাকায় বাংলাদেশি তকমা দিয়ে তাঁকে ডিটেনশন ক্যাম্পে পাঠানো হয়েছিল।
দুলাল চন্দ্র পালের পরিজন তাঁর দেহ সৎকারে অস্বীকার করে বিক্ষোভ প্রদর্শনে বসেন। ১০ দিন ধরে চলে সেই বিক্ষোভ। তাঁদের দাবি ছিল, যেহেতু দুলাল পালকে বিদেশি তকমা দিয়ে বন্দিশিবিরে আটক রাখা হয়েছিল, তাই তাঁকে নাগরিকত্ব দিয়ে সৎকারের ব্যবস্থা করতে হবে। না হলে তাঁর মরদেহ পাঠিয়ে দেওয়া হোক বাংলাদেশে। তাঁর আত্মীয়-পরিজন এই দেহ নেবেন না।
তবে আসামের বন্দিশিবিরে মর্মান্তিক মৃত্যুর কাহিনি এটাই প্রথম নয়। জানা গেছে, ২০১১ সাল থেকে মোট ২৬ জন মারা গেছে বন্দিশিবিরগুলোতে। নাগরিকপঞ্জি প্রকাশ পাওয়ার পর আসামের তেজপুর, গোয়ালপাড়া, শিলচর, ডিব্রুগড়, কোকড়াঝাড় ও জোরহাট জেলায় ছয়টি ডিটেনশন ক্যাম্পে রাখা হয় বিদেশি তকমা পাওয়া ব্যক্তিদের। সরকারি হিসাবে দেখা যাচ্ছে, ২০১১ সাল থেকে এসব বন্দিশিবিরে থাকা ২৬ বন্দির মৃত্যু হয়েছে।
জানা গেছে, এর মধ্যে তেজপুর ও গোয়ালপাড়ার শিবিরে ১০ জন করে বন্দি মারা গেছেন। শিলচরে তিনজন, কোকড়াঝাড়ে দুজন ও জোরহাটে একজন মারা গেছেন। তবে ডিব্রুগড় বন্দিশালায় এখন পর্যন্ত কেউ মারা যাননি। ওই সব বন্দিশিবিরে খাবারের অভাব ও কারারক্ষীদের অত্যাচারের অভিযোগ উঠেছে।
মৃতদের মধ্যে রয়েছেন সব বয়সের ও ধর্মের মানুষ। এই মৃতের তালিকায় ৪৫ দিনের শিশু থেকে ৮৬ বছরের প্রবীণ ব্যক্তিরা রয়েছেন। এর মধ্যে ২৪ জনের মৃত্যু হয়েছে তিন বছর আগে আসামে ক্ষমতায় আসা বর্তমান বিজেপি সরকারের আমলে। মৃতের তালিকায় রয়েছেন ১২ হিন্দু ও ১৩ জন মুসলিম। বাকিরা অন্যান্য ধর্মের। আসামের ছয়টি বন্দিশালা বিদেশি, বিশেষ করে বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী বন্দিদের রাখার জন্য তৈরি করা হয়েছিল।
গত ৩১ অগাস্ট আসামে নাগরিকপঞ্জি প্রকাশ করা হয়। তালিকা প্রকাশের আগে থেকেই এনআরসির বিরোধিতা করে আসছিল বিরোধীরা। তালিকা প্রকাশের পর এনআরসির বিরুদ্ধে সুর চড়ায় বিজেপিও।
আসামের প্রভাবশালী মন্ত্রী হেমন্ত বিশ্বশর্মা সেই সময় বলেছিলেন, যখন এতজন প্রকৃত ভারতীয় তালিকার বাইরে, তখন কীভাবে বলা যায় যে এই নাগরিকপঞ্জি অসমের মানুষের মঙ্গল করবে! কেউ কি তাঁদের কথা ভাবছেন?
এরপর আসামে চূড়ান্ত নাগরিকপঞ্জি প্রকাশিত হতেই দেখা যায়, তালিকা থেকে ১৯ লাখ ছয় হাজার ৬৫৭ জন আবেদনকারীর নাম বাদ গেছে। ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার অবশ্য বলেছিল, যাঁদের নাম চূড়ান্ত নাগরিক তালিকায় স্থান পায়নি, তাঁদের ট্রাইব্যুনালে আবেদন করতে সময় দেওয়া হবে। আবেদন করার সময়সীমা ৬০ থেকে বাড়িয়ে ১২০ দিন করা হবে।
এদিকে রাজনৈতিক সমীকরণ ঠিক রাখতে গতকাল সোমবার এনআরসি নিয়ে ফের মুখ খোলেন হেমন্ত বিশ্বশর্মা। তিনি বলেন, ভারতের নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল পাস হয়ে গেলে আসামে থাকা কোনো হিন্দু, বৌদ্ধ, জৈন ও খ্রিস্টানকে আর বন্দিশিবিরে রাখা হবে না। তবে বাকি সম্প্রদায়ের ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত নেবেন আদালত। তিনি আরো বলেন, বন্দিশিবিরগুলো আদালতের নির্দেশে তৈরি হয়েছে। সরকারের ইচ্ছায় নয়।