জম্মু-কাশ্মীরে মুসলিম শিক্ষক বরখাস্ত, ভারতের সবোর্চ্চ আদালতের উদ্বেগ
জম্মু-কাশ্মীরের একটি সরকারি কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের প্রভাষক ও আইনজ্ঞ অধ্যাপকের নাম জহুর আহমেদ বাটকে সাময়িক বহিষ্কারের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ভারতের সুপ্রিম কোর্ট। কেন্দ্রশাসিত প্রশাসন সম্প্রতি তাকে সাময়িক বহিষ্কারের আদেশ দেয়। বিষয়টি নজরে এলে ভারতের সর্বোচ্চ আদালত আজ সোমবার (২৮ আগস্ট) বিষয়টি খতিয়ে দেখতে কেন্দ্রীয় আইন কর্মকর্তা মনোজ সিনহাকে নির্দেশ দেন। একইসঙ্গে ৩৭০ অনুচ্ছেদ খারিজের বিরুদ্ধে সুপ্রিমকোর্টে হাজির হয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের সিদ্ধান্তের বিরোধিতার পরদিন ওই প্রভাষককে সাময়িক বরখাস্ত করা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন।
আইনজ্ঞ ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানের প্রভাষক জহুর আহমেদ ভাট গত সপ্তাহের বুধবার প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই ওয়াই চন্দ্রচূড়ের নেতৃত্বাধীন সুপ্রিম কোর্টের পাঁচ বিচারপতির সাংবিধানিক বেঞ্চের সামনে হাজির হন। সেখানে তিনি কেন্দ্রীয় সরকারের সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেন। এর দুদিন পর গত শুক্রবার জম্মু ও কাশ্মীর শিক্ষাবিভাগ তার বিরুদ্ধে সাময়িক বরখাস্তের আদেশ দিয়ে তা দ্রুত কার্যকরের কথা বলে। আদেশে জহুর আহমেদ ভাট জম্মু ও কাশ্মীর সরকারি কর্মচারীদের আচরণবিধি এবং ছুটির নিয়ম ভঙ্গের জন্য তাকে দায়ী করা হয়।
শিক্ষা বিভাগের প্রিন্সিপাল সেক্রেটারির জারি করা আদেশে বলা হয়েছে, ‘সাময়িক বরখাস্তের সময় ওই প্রভাষককে জম্মু স্কুল শিক্ষা অধিদপ্তরের কার্যালয়ে সংযুক্ত থাকতে হবে।"
জ্যেষ্ঠ আইনজীবী কাপিল সাইবাল এই আদেশ আদালতের নজরে আনেন। তিনি বলেন, ‘যিনি এখানে এসে পাঁচ মিনিট বিরোধিতা করেছিলেন...তাকে গত ২৫ আগস্ট সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। তিনি প্রতিষ্ঠান থেকে দুদিনের ছুটি নিয়েছিলেন এবং ফিরে গিয়েছিলেন, কিন্তু তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।
এরপর প্রধান বিচারপতি অ্যাটর্নি জেনারেল আর ভেঙ্কটারমণিকে বিষয়টি খতিয়ে দেখার নির্দেশ দেন। বলেন, ‘অ্যাটর্নি জেনারেল, এটা দেখুন। কোনো একজন আদালতে এসেছিলেন, তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। রাজ্য সরকারের সঙ্গে কথা বলুন।’ তিনি আরও বলেন, ‘যদি অন্যকিছু থেকে থাকে, তাহলে আলাদা কথা। কিন্তু এমন ঘনিষ্ঠ উত্তরাধিকারী আদালতে আসার কারণে কেন সাময়িক বহিষ্কার হলেন?’ সলিসিটর তুষার মেহতা বলেছিলেন, সাময়িক বহিষ্কারের আদেশটি অন্য ইস্যুর সঙ্গে জড়িত, কিন্তু বিরারপতি এস কে কাউলের নির্দেশের পর তিনি স্বীকার করেছেন, ‘এটা সঠিক ছিল না।’
বিচারপতি বি আর গাভাই বলেছেন, সরকারি পদক্ষেপটি প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য হতে পারে। তিনি বলেন, ‘এত স্বাধীনতার কী হবে...যদি এখানে উপস্থিতির কারণেই এমনটি ঘটে থাকে, তাহলে তা সত্যিই প্রতিশোধ।’
ভাট তার নিজের জন্য উপস্থিত হয়েছিলেন এবং পাঁচ মিনিট বিরোধিতা করেছিলন। তিনি আদালতকে আদালতকে বলেছিলেন যে, ২০১৯ সালের আগস্ট থেকে জম্মু ও কাশ্মীরের শিক্ষার্থীদের ভারতীয় রাজনীতি শেখানো কঠিন হয়ে উঠেছে, যখন কেন্দ্র ৩৭০ ধারা বাতিল করেছে বলে ছাত্ররা তাকে জিজ্ঞাসা করে, ‘আমরা কি এখনও গণতন্ত্রের মধ্যে আছি?’
ভাট তর্কে বলেন, জে অ্যান্ড কে তার বিশেষ মর্জাদা হারিয়েছে এবং ভারতীয় সংবিধানের নৈতিকতা লঙ্ঘন করে দুটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে বিভক্ত করা হয়েছে। এই পদক্ষেপটি ছিল সহযোগিতামূলক ফেডারেলিজম এবং সংবিধানের আধিপত্যের বিরুদ্ধে।’