গাজায় গণহত্যা বন্ধে ডোনাল্ড ট্রাম্প কি ব্যবস্থা নেবেন?
ফিলিস্তিনের গাজায় দীর্ঘ প্রতীক্ষিত যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ায় আপাতদৃষ্টিতে স্বস্তির পরিবেশ সৃষ্টি হলেও গাজার মানুষ যুদ্ধবিরতিকে শান্তির এক ক্ষণস্থায়ী সুযোগ হিসেবে দেখছে। ধারাবাহিক বোমা হামলা, জীবন ও সম্পদের ক্ষয়ক্ষতির পর এই যুদ্ধবিরতি যেন একটু স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলার সুযোগ করে দিয়েছে ফিলিস্তিনিদের। তবে পরিস্থিতি এখনও অনিশ্চিত ও নাজুক। কারণ একদিকে যুদ্ধবিরতির আগে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর ফের হামলার হুমকি এবং ফিলিস্তিন ইস্যুতে নবনির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্টের আগের অবস্থান, সব মিলিয়ে দেশটির অনেকেরই শঙ্কা, এই বিরতি হয়তো খুব দীর্ঘস্থায়ী হবে না।
আজ সোমবার (২০ জানুয়ারি) দ্বিতীয় দফায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষমতায় আসীন হতে যাচ্ছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। এরই মধ্যে ইসরায়েল-ফিলিস্তিন ইস্যুতে তার ভবিষ্যৎ ভূমিকা কী হতে পারে, তা নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে। তবে ট্রাম্পের আগের মেয়াদে ইসরায়েলের প্রতি আনুগত্য এবং ফিলিস্তিনের বিপক্ষে কর্মকান্ডতে সহিংসতা ও মানবিক সংকটের যে খুব একটা উন্নতি হবে সেটা বলা যায় না।
ট্রাম্পের পূর্ববর্তী অবস্থান
ডোনাল্ড ট্রাম্প তার প্রেসিডেন্সির সময় একাধিক নীতিগত সিদ্ধান্তের মাধ্যমে ইসরায়েলের প্রতি তার দৃঢ় সমর্থন প্রদর্শন করেন। ২০১৭ সালে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে জেরুজালেমকে ইসরায়েলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া তার সবচেয়ে আলোচিত সিদ্ধান্তগুলোর একটি। একই সঙ্গে তেল আবিব থেকে যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাস সরিয়ে জেরুজালেমে স্থাপন করার বিষয়টি ফিলিস্তিন ও আরব বিশ্বে তীব্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে।
ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্তকে ফিলিস্তিনি জনগণ ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো ফিলিস্তিনের বিরুদ্ধে একপেশে অবস্থান হিসেবে চিহ্নিত করেছিল। তার প্রশাসনের সময়ে “ডিল অফ দ্য সেঞ্চুরি” নামে একটি মধ্যপ্রাচ্য শান্তি পরিকল্পনা ঘোষণা করা হয়, যা কার্যত ইসরায়েলের অধিকারের প্রতি পক্ষপাতপূর্ণ বলে বিবেচিত হয়।
ফিলিস্তিনে বর্তমান সংকট ও ট্রাম্পের ভূমিকা
বর্তমান প্রেক্ষাপটে ফিলিস্তিনে মানবিক সংকট ব্যাপক আকার ধারণ করেছে। গাজায় ইসরায়েলি বোমা হামলার কারণে হাজার হাজার সাধারণ মানুষ, বিশেষত নারী ও শিশু প্রাণ হারিয়েছে। অসংখ্য মানুষ গৃহহীন হয়ে পড়েছে এবং জরুরি মানবিক সহায়তা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
বিশ্বজুড়ে এই সংকট নিয়ে উদ্বেগ দেখা দিলেও ডোনাল্ড ট্রাম্প এখন পর্যন্ত ফিলিস্তিন ইস্যুতে তেমন কোনো নির্দিষ্ট বক্তব্য দেননি। তবে ফিলিস্তিনে সহিংসতা বন্ধে তার সম্ভাব্য নীতিগত অবস্থান কী হবে, তা এখনও স্পষ্ট নয়।
বিশ্বজুড়ে প্রতিক্রিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা
দীর্ঘ আলোচনার পর রোববার থেকে গাজায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়েছে। তবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকাকে কেন্দ্র করে বিতর্ক থামছে না। কারণ ইসরায়েলের প্রতি তাদের সমর্থন তারা অব্যাহত রেখেছে, যা সংঘাতকে আরও দীর্ঘায়িত করবে বলে মনে করা হচ্ছে। আর ট্রাম্প ক্ষমতায় আসায় ফিলিস্তিন সংকট আরও জটিল আকার ধারণ করতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তার পূর্ববর্তী প্রশাসনের একপেশে নীতির প্রেক্ষিতে ট্রাম্পের নেতৃত্বে একটি ভারসাম্যপূর্ণ ভূমিকা আশা করা কঠিন।
ডোনাল্ড ট্রাম্পের রাজনৈতিক বাস্তবতা
ডোনাল্ড ট্রাম্প ২০২৪ সালের মার্কিন নির্বাচনের প্রচারণায় মূলত অভ্যন্তরীণ রাজনীতি, অর্থনীতি এবং অভিবাসন ইস্যুকে প্রাধান্য দিয়েছে। কিন্তু মধ্যপ্রাচ্যের সংকট বা ফিলিস্তিনে সহিংসতা নিয়ে তার কোনো স্পষ্ট পরিকল্পনা প্রচারণায় উঠে আসেনি।
ফলে ডোনাল্ড ট্রাম্প ফিলিস্তিনে গণহত্যা বন্ধে কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেবেন কি না, তা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। তবে এটি নিশ্চিত যে, মানবিক সংকট সমাধানে বিশ্বনেতাদের ঐক্যবদ্ধ প্রয়াসই এই সংকট নিরসনের একমাত্র পথ হতে পারে।