আরজি কর কাণ্ডে ‘সিবিআই অন্য আসামিদের ধরতে ব্যর্থ হয়েছে’
ভারতে আরজি কর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ৩৪ বছর বয়সী ইন্টার্ন চিকিৎসককে ধর্ষণ ও খুনের অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় আসামি সঞ্জয় রায়ের বিরুদ্ধে আমৃত্যু কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। আজ সোমবার (২০ জানুয়ারি) কলকাতার শিয়ালদহ সিভিল অ্যান্ড ক্রিমিনাল কোর্টের বিচারপতি অনির্বাণ দাস এ রায় দেন। তবে, এ রায়ে সন্তুষ্ট নন নিহত চিকিৎসকের বাবা-মা। তারা বলছেন, এ ঘটনায় আরও আসামি রয়েছে। সিবিআই তাদের গ্রেপ্তার করতে ব্যর্থ হয়েছে। সঠিক তদন্ত হয়নি। খবর এনডিটিভির।
অপরদিকে, আসামির সর্বোচ্চ সাজা বা মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার জন্য মামলাটি ‘বিরল ঘটনা’র ক্যাটাগড়িতে পড়ে না বলে জানিয়েছেন আদালত। যদিও, দেশটির গোয়েন্দা সংস্থা সেন্ট্রাল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন-সিবিআইয়ের পক্ষ থেকে ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনাকে বিরলতম ঘটনা আখ্যা দিয়ে আসামি সঞ্জয়ের সর্বোচ্চ সাজার অনুরোধ জানানো হয়েছিল।
বিচারক অনির্বাণ দাস আদালতে বলেন, নিহতের পরিবারকে ১৭ লাখ রুপি ক্ষতিপূরণ দিতে হবে পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে। ভুক্তভোগীর বাবা-মা তখন হাত জোড় করে আদালতে বলেন, তারা ক্ষতিপূরণ চান না, তারা চান ন্যায়বিচার। এরপর বিচারক বলেন, তিনি ক্ষতিপূরণের আদেশ দিয়েছেন আইন অনুযায়ী। তারা (ভুক্তভোগীর পরিবার) যেভাবে চান সেই অর্থ স্বাধীনভাবে ব্যবহার করতে পারবেন।
ভুক্তভোগীর পরিবারকে উদ্দেশ্য করে আদালত আরও বলেন, ‘এই অর্থ তাদের মেয়েকে ধর্ষণ ও হত্যার ক্ষতিপূরণ হিসেবে দেওয়া হয়নি। আইন অনুযায়ী দেওয়া হয়েছে।’
রায় দেওয়ার আগে আদালত সঞ্জয় রায়ের বক্তব্য শোনেন মামলার শেষ যুক্ততর্ক শুনানিতে। তখন আদালতের উদ্দেশে আসামি সঞ্জয় রায় বলেন, ‘আমি এটা করিনি। আমাকে ফাঁসানো হয়েছে। ওই সময় (ধর্ষণ ও হত্যা) অনেক কিছু নষ্ট হয়েছে ও ভেঙেছে। যদি আমি এ কাণ্ড করতাম তাহলে, আমার গলার রুদ্রাক্ষ মালা ছিঁড়ে যেত। কিন্তু মালা অক্ষত আছে। এখন মহামান্য আদালত আপনি বিচার করুন, আমাকে ফাঁসানো হয়েছে কি না।’
এরপর বিচারক জবাব দেন, সমস্ত সাক্ষ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে আমি এ বিচারের রায় দিচ্ছি। তিন ঘণ্টা ধরে আপনার কথা শুনেছি। আপনার আইনজীবীও আপনার পক্ষে যুক্তি দিয়েছেন। তবে, অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে।’
রায় ঘোষণার পর অভিযুক্তের বাবা-মা তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় জানিয়েছেন, তারা সিবিআইয়ের তদন্তে সন্তুষ্ট নন। তারা অভিযোগ করেন, এই অপরাধে জড়িত আরও আসামি রয়েছে। তাদের বিচারের আওতায় আনা হয়নি।
নিহত ডাক্তারের মা বলেন, ‘শুধু একজন ব্যক্তি এই অপরাধে জড়িত নয়। আরও আসামি রয়েছে। সিবিআই তাদের গ্রেপ্তার করতে ব্যর্থ হয়েছে। ভবিষ্যতে সমাজ থেকে এ ধরনের অপরাধ বন্ধ করার জন্য এমন আসামিদের বেঁচে থাকার অধিকার নেই।’
৩৪ বছর বয়সী ডাক্তার, আরজি কর হাসপাতালের একজন স্নাতকোত্তর প্রশিক্ষণার্থী ছিলেন। ঘটনার দিন তিনি নাইট শিফটে ছিলেন। পরদিন সকালে হাসপাতালের একটি সেমিনার কক্ষে তাকে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়। এই ঘটনাটি দেশব্যাপী বিক্ষোভের জন্ম দেয়। কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তার দাবিতে ডাক্তাররা কয়েকদিনের জন্য কাজ স্থগিত করে।