ট্রাম্পের ‘গাজা দখল’ পরিকল্পনায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ইসরায়েল

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ট ট্রাম্পের প্রস্তাবিত গাজা দখল ও ফিলিস্তিনি বাসিন্দাদের বাস্তুচ্যুত করার পরিকল্পনার প্রতি ‘প্রতিশ্রুতিবদ্ধ’ ইসরায়েল। স্থানীয় সময় সোমবার (১৭ জানুয়ারি) এমনটাই জানিয়েছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। তিনি বলেন, “মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ‘ভিন্ন গাজা’ গঠনের পরিকল্পনায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ইসরায়েল।”
এমন এক সময় নেতানিয়াহু এই মন্তব্য করলেন, যখন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও সৌদি আরবে অবস্থান করছেন। সেখানে তিনি ট্রাম্পের পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য আরব রাষ্ট্রগুলোর সমর্থন লাভের চেষ্টা চালাবেন। কারণ ইতোমধ্যে গাজার বাসিন্দাদের উচ্ছেদের পরিকল্পনায় মধ্যে প্রাচ্যে উত্তেজনা তৈরি করেছে।
আরব দেশগুলো ট্রাম্পের প্রস্তাবের কড়া বিরোধিতা করেছে। ফলে রুবিওর সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাত সফর আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। তিনি সোমবার সৌদি ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানের সঙ্গে রিয়াদে সাক্ষাৎ করেন। এর মধ্য দিয়ে মধ্যপ্রাচ্যের প্রথম সফর শেষ হবে।
মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের এক মুখপাত্র আলোচনার বিবরণে জানান, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও ক্রাউন প্রিন্স গাজায় যুদ্ধবিরতি বাস্তবায়ন এবং হামাসের হাতে আটক সব বন্দিকে মুক্ত করার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছেন। যার মধ্যে আমেরিকান নাগরিকরাও রয়েছে। তিনি বলেন, ‘পররাষ্ট্রমন্ত্রী এমন একটি ব্যবস্থা গঠনের গুরুত্ব তুলে ধরেন, যা গাজা ও আঞ্চলিক নিরাপত্তায় অবদান রাখবে।’
তবে গাজার জন্য ট্রাম্পের পরিকল্পনার বিকল্প হিসেবে একটি গালফ নেতৃত্বাধীন পুনর্গঠন তহবিল প্রস্তুতে চুক্তি করার বিষয়ে গুরুত্ব দিচ্ছে সৌদি আরব। যেখানে হামাসকে গাজার কর্তৃত্ব থেকে দূরে রাখা হবে।
সৌদি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, তারা ফিলিস্তিনিদের নিজ ভূমি থেকে উচ্ছেদ করার যেকোনো প্রচেষ্টার বিরোধিতা করে।
রুবিও সাম্প্রতিক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, আরব রাষ্ট্রগুলোর বিকল্প প্রস্তাবের পথ উন্মুক্ত রয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত ‘একমাত্র পরিকল্পনা, ট্রাম্প পরিকল্পনা’।
গাজা দখল ও ফিলিস্তিনিদের জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত করার প্রচেষ্টাকে আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন এবং জাতিগত নির্মূলের শামিল বলে নিন্দা জানিয়েছে মানবাধিকার গোষ্ঠীগুলো।

এদিকে, সোমবার ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাটজ ট্রাম্পের পরিকল্পনাকে সমর্থন জানিয়ে ঘোষণা করেন, তিনি ফিলিস্তিনিদের ‘স্বেচ্ছায় প্রস্থান’ সহায়তার জন্য একটি বিশেষ অধিদপ্তর গঠন করবেন।
ইতোমধ্যে ইসরায়েলের সরকারি সংস্থা সিওজিএটি একটি প্রাথমিক প্রস্তাবনা উপস্থাপন করে। এর মাধ্যমে গাজাবাসীকে অন্য দেশে যেতে ‘ব্যাপক সহায়তা’ দেওয়া হবে বলে জানানো হয়। সংস্থাটির বিবৃতিতে বলা হয়, ‘গাজাবাসীর প্রস্থানের জন্য সমুদ্র, আকাশ ও স্থলপথে বিশেষ প্রস্থানের ব্যবস্থা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে’
এদিকে সোমবার ইসরায়েলের নিরাপত্তা মন্ত্রিসভা গাজায় যুদ্ধবিরতির দ্বিতীয় পর্যায় নিয়ে আলোচনা করার কথা ছিল। দ্বিতীয় পর্যায়ে হামাস আরও কয়েক ডজন বন্দিকে মুক্ত দেওয়ার বিনিময়ে আরও ফিলিস্তিনি বন্দিদের মুক্তি দেওয়ার কথা ইসরায়েলের। এ ছাড়া স্থায়ী যুদ্ধবিরতি ও ইসরায়েলি বাহিনীকে গাজা থেকে প্রত্যাহারের বিষয় অন্তর্ভুক্ত থাকবে এই চুক্তিতে। যদিও এটি চূড়ান্ত হওয়ার পথ এখন অনেকটাই অনিশ্চিত।
ইসরায়েলি সরকারের কট্টর ডানপন্থি অর্থমন্ত্রী বেজালেল স্মোত্রিচ বলেছেন, যুদ্ধ চালিয়ে না গেলে তারা নেতানিয়াহুর জোট সরকার থেকে সরে দাঁড়াবেন।
গত ১৯ জানুয়ারি শুরু হওয়া যুদ্ধবিরতির প্রথম পর্যায়ের অংশ হিসেবে এখন পর্যন্ত ইসরায়েল থেকে অপহৃত ১৯ জন বন্দিকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে। মোট ৩৩ জন বন্দিকে ধাপে ধাপে মুক্তি দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। বিনিময়ে কয়েক শত ফিলিস্তিনিকে মুক্তি দিয়েছে ইসরায়েল। নেতানিয়াহু বলেছেন, যদি সব বন্দিকে মুক্ত করা না হয় তবে গাজায় ‘নরকের দরজা’ খুলে যাবে।