যেসব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের জন্য কানাডার নির্বাচনে নজর রাখা জরুরি

কানাডার সাধারণ নির্বাচনের প্রচারণা শুরু হয়েছে। এ নির্বাচনটি এক অভূতপূর্ব পরিস্থিতিতে মাত্র ৩৬ দিনের সংক্ষিপ্ত সময়সীমার মধ্যে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে।
নির্বাচনটিতে ভোটাররা শুধু স্থানীয় ইস্যু নয়, বরং দেশের সার্বভৌমত্ব এবং ভবিষ্যৎ সম্পর্কেও বড় সিদ্ধান্ত নেবেন। বিশেষ করে যখন প্রতিবেশী ও প্রধান অর্থনৈতিক অংশীদার যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্য যুদ্ধ শুরু করেছে এবং প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প কানাডাকে যুক্তরাষ্ট্রের ৫১তম রাজ্যে পরিণত করার ইঙ্গিত দিয়েছেন। খবর বিবিসির।
এখানে পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় রয়েছে যা নির্বাচনী প্রচারণার সময় নজর রাখতে হবে।
১. ট্রাম্পের প্রভাব
কানাডা ও যুক্তরাষ্ট্র দীর্ঘদিনের অর্থনৈতিক ও নিরাপত্তা সহযোগী এবং বিশ্বের দীর্ঘতম ‘অরক্ষিত’ সীমান্ত ভাগ করে নেওয়া দুই দেশ। কিন্তু যখন ট্রাম্প কানাডার বিরুদ্ধে ‘অর্থনৈতিক শক্তি’ ব্যবহারের ঘোষণা দেন, সীমান্তকে ‘কৃত্রিমভাবে আঁকা রেখা’ বলে অভিহিত করেন এবং উচ্চ শুল্ক আরোপ করেন, তখন এটি দুই দেশের সম্পর্কে বড় পরিবর্তন এনে দেয়।
এই কারণেই এবারের সাধারণ নির্বাচন শুধু কানাডার অভ্যন্তরীণ রাজনীতি নয়, বরং যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্কের ওপরও অনেকটা নির্ভর করছে।
ইতোমধ্যে, ট্রাম্পের হস্তক্ষেপের কারণে কানাডার রাজনীতিতে বড় পরিবর্তন এসেছে, যেখানে আগে কনজারভেটিভদের সহজ জয়ের আভাস থাকলেও এখন এটি লিবারেলদের সঙ্গে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ে পরিণত হয়েছে।
আগামী কয়েক সপ্তাহে ট্রাম্পের বক্তব্য ও সিদ্ধান্ত নির্বাচনী ফলাফলে বড় প্রভাব ফেলতে পারে।
২. একজন ব্যাংকার বনাম এক অভিজ্ঞ রাজনীতিক
কানাডার পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী যেই হোন, তাকে অবশ্যই ট্রাম্পের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখতে হবে।
এই নির্বাচনের মূল প্রতিযোগিতা হচ্ছে নতুন লিবারেল নেতা মার্ক কার্নি এবং কনজারভেটিভ নেতা পিয়ের পয়লিয়েভের মধ্যে।
৬০ বছর বয়সী কার্নি একজন প্রাক্তন কেন্দ্রীয় ব্যাংকার, যিনি রাজনীতিতে একেবারে নতুন। তিনি ব্যাংক অব ইংল্যান্ডের গভর্নর ছিলেন এবং সম্প্রতি জাস্টিন ট্রুডোর পদত্যাগের পর লিবারেলদের নেতৃত্ব গ্রহণ করেছেন।
অন্যদিকে, ৪৫ বছর বয়সী পয়লিয়েভ তরুণ হলেও অভিজ্ঞ রাজনীতিবিদ। মাত্র ২৫ বছর বয়সে তিনি সংসদ সদস্য হন এবং দুই দশকের বেশি সময় ধরে ফেডারেল রাজনীতিতে রয়েছেন।
তিনি ট্রুডোর জনপ্রিয়তা হ্রাস পাওয়ার সুযোগ নিয়ে কনজারভেটিভদের পক্ষে জনসমর্থন বাড়িয়েছেন এবং ‘কানাডা ভেঙে পড়েছে’ স্লোগান তুলে ধরেছেন। তবে সাম্প্রতিক সময়ে তার প্রচারণার কৌশলে কিছুটা পরিবর্তন এনে ‘কানাডা ফার্স্ট’ বার্তা দিচ্ছেন।

৩. বড় প্রশ্নগুলো গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে
প্রথমবারের মতো, কানাডার নির্বাচন শুধুমাত্র অভ্যন্তরীণ বিষয়ে সীমাবদ্ধ থাকছে না। বরং এবার দেশের সার্বভৌমত্ব, অর্থনৈতিক স্বাধীনতা এবং অনিশ্চিত ভবিষ্যতের জন্য কানাডার করণীয় কী হবে—এসব বড় প্রশ্ন উঠে আসছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এটি ১৯৮৮ সালের নির্বাচনের মতো হতে পারে, যখন কানাডা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষর করবে কিনা, সেই প্রশ্ন বড় ইস্যু ছিল।
এবার প্রধান দলগুলো উন্নয়ন ও স্বাধীনতার ওপর জোর দিচ্ছে—যেমন, আবাসন প্রকল্প, শক্তি ও সম্পদ উন্নয়ন, মার্কিন শুল্কের বিরুদ্ধে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা এবং প্রতিরক্ষা শক্তিশালীকরণ।
৪. জীবনযাত্রার ব্যয় এখনও গুরুত্বপূর্ণ
কানাডার জনগণের প্রধান উদ্বেগের বিষয়গুলো—মূল্যস্ফীতি, আবাসন সংকট, স্বাস্থ্যসেবা—এখনও রয়েই গেছে।
তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, বাণিজ্য যুদ্ধের মতো বড় সমস্যাগুলোর সামনে এগুলো কিছুটা কম গুরুত্বপূর্ণ হয়ে পড়েছে।
তাই দলগুলোকে এমন নীতি প্রণয়ন করতে হবে, যা জীবনযাত্রার ব্যয় সমস্যার সমাধান করবে, কিন্তু একই সঙ্গে বৃহৎ অর্থনৈতিক সংকটের মোকাবিলাও করবে।
৫. লিবারেলদের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি—কিন্তু কতদিন টিকবে?
সাম্প্রতিক জনমত জরিপে দেখা গেছে, লিবারেলরা কনজারভেটিভদের ২০ পয়েন্টের লিড কমিয়ে সমানে সমান অবস্থানে চলে এসেছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, এর তিনটি কারণ রয়েছে—
১. জাস্টিন ট্রুডোর জনপ্রিয়তা কমে যাওয়া এবং তার পদত্যাগ
২. নতুন লিবারেল নেতৃত্বের জন্য আগ্রহ বৃদ্ধি
৩. ডোনাল্ড ট্রাম্পের ফিরে আসা
এখন উভয় দলই একে অপরকে নেতিবাচকভাবে চিত্রিত করার চেষ্টা করছে।
কার্নি পয়লিয়েভকে ‘ট্রাম্প-সমর্থক’ বলে আখ্যায়িত করছেন, আর পয়লিয়েভ বলছেন, কার্নি ‘জাস্টিন ট্রুডোর মতোই’।
কনজারভেটিভদের শক্তিশালী সমর্থন রয়েছে এবং তাদের নির্বাচনী প্রচার কার্যক্রমও সুসংগঠিত।
অন্যদিকে, লিবারেলদের কাছে এখনও একটি বড় সুবিধা রয়েছে—তারা বর্তমান পরিস্থিতির ওপর নিজেদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছে এবং নতুন নেতৃত্ব জনসমর্থন পেতে শুরু করেছে।
এ ছাড়া, বামপন্থী এনডিপি এবং কুইবেকভিত্তিক ব্লক কেবেকোয়া জনপ্রিয়তা হারাচ্ছে।
তবে নির্বাচনের ফলাফল এখনও অনিশ্চিত এবং পরবর্তী কয়েক সপ্তাহের ঘটনাবলী চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নির্ধারণ করবে।