মার্কিন সাহায্য কমানোয় সেবা না পেয়ে মারা যাচ্ছে দক্ষিণ সুদানের শিশুরা

মার্কিন সাহায্য কমানোয় জীবন রক্ষাকারী ক্লিনিকগুলোয় সেবা না পেয়ে দক্ষিণ সুদানের শিশুরা কলেরায় আক্রান্ত হয়ে মারা যাচ্ছে। কয়েক মাইল হেঁটেও দেশটির বাসিন্দারা চিকিৎসা কেন্দ্রে পৌঁছাতে পারছে না।
গতকাল বুধবার (৯ এপ্রিল) একটি আন্তর্জাতিক এনজিও সতর্ক বার্তায় এ তথ্য জানিয়েছে। খবর এএফপির।
এএফপি জানায়, ২০১১ সালে স্বাধীনতার পর থেকে অত্যন্ত দরিদ্র দেশটি নিরাপত্তার সঙ্গে লড়াই করছে। সাম্প্রতিক সংঘর্ষের ফলে পাঁচ বছরের গৃহযুদ্ধের অবসান ঘটানো শান্তি চুক্তি হুমকির মুখে পড়েছে।
দেশটিতে কলেরার প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। সেপ্টেম্বর থেকে প্রায় ৪০ হাজার কলেরা আক্রান্তের খবর জানা গেছে।
ইউনিসেফ জানায়, এটিকে দেশের সংক্ষিপ্ত ইতিহাসের সবচেয়ে খারাপ প্রাদুর্ভাব হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
ব্রিটিশ দাতব্য সংস্থা ‘সেভ দ্য চিলড্রেন’ বুধবার জানায়, দক্ষিণ সুদানের কমপক্ষে পাঁচ তরুণের মৃত্যু হয়েছে। দেশটির পূর্বাঞ্চলীয় জোংলেই রাজ্যে জীবন রক্ষাকারী সেবা পেতে তারা ঘণ্টার পর ঘণ্টা হেঁটে যান।
দাতব্য সংস্থাটি পূর্ব আকোবো কাউন্টির ২৭টি ক্লিনিককে সহায়তা করেছিল। কিন্তু সংস্থাটি জানায়, ইউএসএআইডির সহায়তা কাটছাঁটের কারণে সাতটি ক্লিনিক স্থায়ীভাবে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। বাকি ২০টি আংশিক খোলা রয়েছে।
সংস্থাটি আরও জানায়, দেশব্যাপী প্রায় ৬০০টি ক্লিনিকের প্রায় ২০০ কর্মী ছাঁটাই করতে হয়েছে।
ইউএসএআইডির বার্ষিক বাজেট যার প্রায় ৪৩ বিলিয়ন ডলার, যা বিশ্বের মানবিক সাহায্যের প্রায় ৪০ শতাংশ। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ওই বাজেটের কাটছাঁট করায় বিশ্বজুড়ে এর ওপর প্রভাব পড়েছে।
২৪ বছর বয়সী পুরোনো কলেরা রোগী সারাহ বলেন, ‘আমরা আগে খুশি ছিলাম। অনেক ডাক্তার ও পর্যাপ্ত ওষুধ ছিল। তাই আমরা খুব বেশি কষ্ট পাইনি। কিন্তু এখন আমরা কষ্ট পাচ্ছি।’
স্বেচ্ছাসেবক স্বাস্থ্যকর্মী মাইকেল বলেছেন, ‘সাহায্য কাটছাঁটের পর থেকে রোগীরা ওষুধের অভাবে সংগ্রাম চালিয়েছে যাচ্ছে। আমরা রোগীদের কষ্ট দেখতে পাচ্ছি, কিন্তু তাদের সাহায্য করতে পারছি না।’
‘এখন একটি গুরুতর কলেরা প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে’ উল্লেখ করে মাইকেল বলেন, তারা শুধু রোগীদের খাবার স্যালাইন সরবরাহ করতে পারছেন।
এর আগে ইউনিসেফ জানায়, সেপ্টেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত প্রায় ৭০০ জন কলেরায় মারা গেছে। যার অর্ধেকই ১৫ বছরের কম বয়সী শিশু।
ইউনিসেফ জানায়, দক্ষিণ সুদানের ১০টি রাজ্যের মধ্যে নয়টি রাজ্য কলেরায় আক্রান্ত হয়েছে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে পূর্বাঞ্চলীয় জোংলেই রাজ্য।
দক্ষিণ সুদানের সেভ দ্য চিলড্রেনের কান্ট্রি ডিরেক্টর ক্রিস নিয়ামান্ডি এএফপিকে বলেন, এই অঞ্চলের পরিস্থিতি অত্যন্ত হৃদয়বিদারক। তিনি জোংলেইয়ের আকোবোর পূর্বাঞ্চলে একটি ভ্রমণের বর্ণনা দেন, যেখানে উপচে পড়া তাঁবুতে পর্যাপ্ত জায়গা না রাখায় অসুস্থ শিশুদের বাইরে গাছের নিচে শুয়ে রাখা হয়।
নিয়ামান্ডি এক বিবৃতিতে বলেন, ‘অন্যান্য দেশের ক্ষমতাধর ব্যক্তিদের নেওয়া সিদ্ধান্তের ফলে মাত্র কয়েক সপ্তাহের মধ্যে শিশু মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। এই নিয়ে বিশ্বব্যাপী নৈতিক ক্ষোভ সৃষ্টি হওয়া উচিত।’
নিয়ামান্ডি ‘দক্ষিণ সুদানে মানবিক বিপর্যয়ের প্রতি মনোযোগ দেওয়ার জন্য আহ্বান জানিয়ে বলেন, এটি এমন একটি দেশ যেখানে পাঁচজনের মধ্যে চারজনের বেঁচে থাকার জন্য সাহায্যের প্রয়োজন।’ নিয়ামান্ডি প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসেবে উত্তেজনা আর না বাড়ার এবং যাতে করে চিকিৎসা ব্যবস্থা আর জটিল না হয় তা নিশ্চিত করার আহ্বান জানান।
দেশের কিছু অংশে সম্প্রতি নতুন করে সহিংসতা দেখা দিয়েছে। প্রেসিডেন্ট সালভা কি ও তার দীর্ঘদিনের প্রতিদ্বন্দ্বী প্রথম ভাইস প্রেসিডেন্ট রিক মাচার উভয়ের মিত্র বাহিনীর মধ্যে সংঘর্ষে হাজার হাজার মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন।