ট্রাম্পের শুল্কারোপে বিশ্ব অর্থনীতিতে মন্দার শঙ্কা নেই : আইএমএফ

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাম্প্রতিক বাণিজ্য শুল্ক ঘোষণা বিশ্বব্যাপী বাণিজ্যিক ক্ষেত্রে বড় ধরনের অনিশ্চয়তা সৃষ্টি করলেও এর জেরে বিশ্ব অর্থনীতিতে মন্দা দেখা দেওয়ার সম্ভাবনা নাকচ করে দিয়েছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)।
গতকাল বৃহস্পতিবার (১৭ এপ্রিল) সংস্থাটি বিশ্ব অর্থনীতির গতিপ্রকৃতি নিয়ে প্রকাশিত এক পূর্বাভাসে এ আশার বাণী শোনান। আইএমএফের মতে, যদিও বাণিজ্য সংক্রান্ত অস্থিরতা বৃদ্ধির কারণে বিশ্বজুড়ে শেয়ারের দামে নিম্নগতি দেখা গেছে, বিভিন্ন দেশের মধ্যে পারস্পরিক আস্থার অভাব পরিলক্ষিত হচ্ছে, তবুও বিশ্ব অর্থনীতি বড় ধরনের মন্দার সম্মুখীন হবে না।
আইএমএফের পূর্বাভাসে স্পষ্ট করে বলা হয়েছে, ‘আমাদের নতুন প্রক্ষেপণ অনুযায়ী বিশ্ব অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি উল্লেখযোগ্যভাবে কমতে পারে, তবে আমরা কোনো মন্দার পূর্বাভাস দিচ্ছি না।’
গতকাল আইএমএফের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভা চলমান অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার প্রেক্ষাপটে সব দেশকে অভ্যন্তরীণ আর্থিক ব্যবস্থাপনার ওপর জোর দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘এই অনিশ্চিত পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রতিটি দেশকে অবশ্যই তাদের নিজ নিজ আর্থিক নীতি ও কাঠামোকে শক্তিশালী করার দ্বিগুণ প্রচেষ্টা চালাতে হবে।’
ইউরোপীয় দেশগুলোর উদ্দেশে জর্জিয়েভা বলেন, পরিষেবা খাতের অভ্যন্তরীণ বাণিজ্যের ক্ষেত্রে বিদ্যমান বিভিন্ন বাধা ও নিয়ন্ত্রণ শিথিল করতে হবে এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের একক বাজারকে আরও সুসংহত ও গভীর করতে হবে।
চীনের অর্থনৈতিক নীতির বিষয়েও পরামর্শ দিয়েছেন আইএমএফের এই শীর্ষ কর্মকর্তা। তিনি মনে করেন, চীনের উচিত তাদের সামাজিক সুরক্ষা বেষ্টনীকে আরও সম্প্রসারিত করা, যাতে সাধারণ মানুষ ভবিষ্যতের আর্থিক অনিশ্চয়তা নিয়ে কম উদ্বিগ্ন হয় এবং ‘সতর্কতামূলক সঞ্চয়ের’ প্রবণতা হ্রাস পায়।
অন্যদিকে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি প্রসঙ্গে ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভার পরামর্শ হলো দেশটির সরকারের ক্রমবর্ধমান জাতীয় ঋণ কমানো উচিত।
গত ২ এপ্রিল প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপর পারস্পরিক শুল্কারোপের ঘোষণা দেন। এর মধ্যে ন্যূনতম ১০ শতাংশ হারে একটি সর্বজনীন শুল্কও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে, যা ঘোষণার দিন থেকেই কার্যকর হয়। প্রাথমিকভাবে ৯ এপ্রিল থেকে নতুন উচ্চ শুল্ক কার্যকর হওয়ার কথা থাকলেও শেষ মুহূর্তে চীন ব্যতীত অন্যান্য দেশের জন্য তা ৯০ দিনের জন্য স্থগিত করা হয়। পরবর্তীতে ট্রাম্প প্রশাসন চীনসহ সব দেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে কম্পিউটার, মোবাইল ফোনসহ অন্যান্য ইলেকট্রনিক পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে ঘোষিত পাল্টা শুল্ক প্রত্যাহার করে নেয়।

ট্রাম্পের এই শুল্ক ঘোষণার পরপরই বিশ্ব পুঁজিবাজারে বড় ধরনের পতন দেখা যায় এবং সেই ধাক্কা এখনও পুরোপুরি কাটেনি। এই পরিস্থিতিতে কোনো কোনো অর্থনৈতিক সংস্থা বিশ্বে মন্দা দেখা দেওয়ার পূর্বাভাস দিয়েছে। এই অনিশ্চয়তার মুখে অনেক প্রতিষ্ঠান ইতোমধ্যে তাদের খরচ ও বিনিয়োগের পরিকল্পনা পুনর্বিবেচনা করতে শুরু করেছে। কিছু দেশ আবার ট্রাম্পের শুল্ক নীতির মোকাবিলার জন্য নিজস্ব কৌশল তৈরি করছে।
গত বুধবার বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা (ডব্লিউটিও) তাদের পূর্বাভাসে জানায়, ট্রাম্পের শুল্ক নীতির কারণে চলতি বছর বিশ্ব বাণিজ্যের পরিমাণ হ্রাস পেতে পারে। যুক্তরাজ্যের কেন্দ্রীয় ব্যাংকও একই ধরনের আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেছে, ক্রমবর্ধমান বাণিজ্যিক উত্তেজনা বিশ্ব অর্থনীতির প্রবৃদ্ধির ক্ষেত্রে একটি বড় ঝুঁকি তৈরি করেছে এবং এর ফলে আর্থিক অস্থিতিশীলতা দেখা দিতে পারে। এমনকি, ইউরোপীয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক (ইসিবি) ক্রমবর্ধমান বাণিজ্য উত্তেজনার কারণে তাদের প্রধান সুদের হার কমিয়েছে।