সম্ভাব্য উত্তরসূরিদের নাম ঘোষণা খামেনির : নিউইয়র্ক টাইমস
ইসরায়েলের অব্যাহত হামলার মুখে সম্ভাব্য উত্তরসূরি হিসেবে তিন জ্যেষ্ঠ ইমামের নাম ঘোষণা করেছেন ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি। তার মৃত্যুর পর এদের মধ্যে একজন ইরানের পরবর্তী সর্বোচ্চ নেতা হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করবেন। সংবাদমাধ্যম নিউইয়র্ক টাইমস ইরানি কর্মকর্তাদের বরাতে এই খবর জানিয়েছে।
কর্মকর্তারা জানান, নিরাপত্তার স্বার্থে বর্তমানে গোপন বাঙ্কারে অবস্থান করছেন আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি। সেখান থেকে একজন বিশ্বস্ত সহযোগীর মাধ্যমে কমান্ডারদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন। একইসঙ্গে অবস্থান গোপন রাখার জন্য সব ধরনের ইলেক্ট্রনিক যোগাযোগ স্থগিত রেখেছেন।
ওই কর্মকর্তারা আরও জানান, জরুরি যুদ্ধ পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য সামরিক কমান্ডদের বিভিন্ন স্তরে একাধিক উত্তরসূরি মনোনীত করেছেন খামেনি। যেন একজন নিহত হলে অন্যজন দ্রুত দায়িত্ব গ্রহণ করতে পারেন। এমনকি নিজের মৃত্যুর পর স্থলাভিষিক্ত হওয়ার জন্য তিনজন জ্যেষ্ঠ ধর্মীয় নেতাকে সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবেও মনোনীত করেছেন ইরানের এই সর্বোচ্চ নেতা।
সিএনএনের তথ্য অনুযায়ী, ইরানের সংবিধান অনুসারে, সর্বোচ্চ নেতা মারা গেলে তার উত্তরসূরি বেছে নিতে ৮৮ সদস্যের ইমাম পরিষদের বিশেষজ্ঞদের বৈঠক ডাকার বিধান রয়েছে। ১৯৭৯ সালে ইসলামিক বিপ্লবের পর থেকে এই প্রক্রিয়া মাত্র একবার ব্যবহৃত হয়েছে; ১৯৮৯ সালে ওই প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই খামেনি স্বয়ং সর্বোচ্চ নেতা নির্বাচিত হন। নিউইয়র্ক টাইমসকে ইরানি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, খামেনি চান তার মৃত্যুর পর ক্ষমতা হস্তান্তর প্রক্রিয়া যেন দ্রুত ও নিয়মতান্ত্রিকভাবে সম্পন্ন হয়।
এটি এই নেতার তিন দশকের শাসনের সবচেয়ে অনিশ্চিত মুহূর্তের এক স্পষ্ট ইঙ্গিত। যদিও ইরান তার প্রাথমিক ধাক্কা কাটিয়ে উঠেছে বলে মনে হচ্ছে। তারা নিজেদের পুনর্গঠিত করে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে প্রতিদিন পাল্টা হামলা চালাচ্ছে, যার মধ্যে একটি হাসপাতাল, হাইফা তেল শোধনাগার, ধর্মীয় ভবন ও বাড়িঘরে আঘাত হানার খবর পাওয়া গেছে।
সম্প্রতি ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাটজ ইরানের একটি হাসপাতালে ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পর সরাসরি ঘোষণা করেছেন, ‘খামেনিকে বাঁচিয়ে রাখা যাবে না।’ এর আগে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও খামেনিকে ‘সহজ লক্ষ্য’ হিসেবে উল্লেখ করলেও বর্তমানে তাকে হত্যার পরিকল্পনা প্রত্যাখ্যান করেছেন। তবে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু খামেনিকে লক্ষ্যবস্তু করার সম্ভাবনা একদম উড়িয়ে দেননি। বরং বলেছেন, ‘খামেনিকে হত্যা করলে সংঘাত আর বিস্তৃত হবে না, বন্ধ হবে।’
গত ১৩ জুন ইসরায়েল ইরানের সামরিক ও পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা শুরু করার পর থেকেই মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা চরম আকার ধারণ করেছে। যুক্তরাষ্ট্র প্রাথমিকভাবে এই হামলার সঙ্গে নিজেদের সম্পৃক্ততা থেকে দূরে রাখলেও সম্প্রতি ওই অঞ্চলে বিপুল সংখ্যক যুদ্ধবিমান ও নৌশক্তি মোতায়েন করেছে। যদিও প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ইরানের বিষয়ে তার চূড়ান্ত অবস্থান নিয়ে এখনও ধোঁয়াশা বজায় রেখেছেন, কখনও কূটনৈতিক সমাধানের কথা বলছেন, আবার কখনও ইসরায়েলের পাশে দাঁড়ানোর ইঙ্গিত দিচ্ছেন।
নিউইয়র্ক টাইমস আরও জানিয়েছে, ইসরায়েলি হামলায় ইরানের শাসক শ্রেণির চেইন অব কমান্ড মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হলেও এখনও কার্যকর আছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তথ্য প্রদান করা এসব কর্মকর্তা আয়াতুল্লাহর পরিকল্পনা সম্পর্কে প্রকাশ্যে কথা বলার অনুমতি না থাকায় নিজেদের পরিচয় গোপন রেখেছেন।