সিরিয়ায় গির্জায় আত্মঘাতী বোমা হামলা, নিহত ২২

সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কের একটি গির্জায় আত্মঘাতী বোমা হামলায় অন্তত ২২ জন নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও ৬৩ জন। দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে আজ সোমবার (২৩ জুন) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রোববার (২২ জুন) সন্ধ্যায় প্রার্থনার সময় দামেস্কের দোইলা এলাকায় গ্রিক অর্থোডক্স ‘প্রফেট এলিয়াস’ গির্জায় এক বন্দুকধারী প্রথমে গুলি ছোড়ে এবং পরে নিজের শরীরে থাকা বিস্ফোরক ভেস্টের বিস্ফোরণ ঘটায়।
তাদের দাবি, হামলাকারী ব্যক্তি জিহাদি সংগঠন ইসলামিক স্টেট (আইএস)-এর সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিল। যদিও এখনো পর্যন্ত এই হামলার দায় স্বীকার করেনি আইএস।
গির্জার অভ্যন্তরের ছবি ও ভিডিওতে দেখা গেছে, বিধ্বস্ত বেদি, ভাঙা কাচে ছেয়ে যাওয়া আসন এবং দেওয়ালে রক্তের দাগ।
প্রত্যক্ষদর্শী লরেন্স মা’মারি ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেন, “একজন ব্যক্তি গির্জায় ঢুকে গুলি ছুঁড়তে শুরু করে। লোকজন তাকে থামানোর চেষ্টা করছিল, তখনই সে নিজেকে উড়িয়ে দেয়।”
গির্জার কাছাকাছি একটি দোকানে থাকা আরেকজন জানান, প্রথমে গুলির শব্দ এবং পরে একটি বিস্ফোরণের আওয়াজ পান, যাতে আশপাশে কাচ ভেঙ্গে দেয়। তিনি বলেন, “গির্জার ভেতরে আগুন দেখা যাচ্ছিল, কাঠের বেঞ্চ ছিটকে দরজা পর্যন্ত এসে পড়েছিল।”
গত ডিসেম্বর ইসলামপন্থী বিদ্রোহীরা বাশার আল-আসাদের সরকারকে ক্ষমতা থেকে সরানোর পর দামেস্কে এটিই প্রথম বড় ধরনের আত্মঘাতী হামলা।
অ্যান্টিওক গ্রিক অর্থোডক্স প্যাট্রিয়ার্কেট এক বিবৃতিতে বলেছে, “আজ সন্ধ্যায় এক বিশ্বাসঘাতক সন্ত্রাসী হামলা আমাদের জীবন কেড়ে নিয়েছে, যারা প্রার্থনারত অবস্থায় শহীদ হয়েছেন।”
তারা জানিয়েছে, বিস্ফোরণটি গির্জার প্রবেশপথে ঘটে, ফলে নিহতদের মধ্যে অনেকে গির্জার ভেতরে এবং আশপাশের এলাকায় অবস্থান করছিলেন।

প্যাট্রিয়ার্কেট আরও দাবি করেছে, সিরিয়ার অন্তর্বর্তীকালীন প্রশাসন যেন গির্জাসমূহের পবিত্রতা রক্ষায় দায়িত্ব নেয় এবং সকল নাগরিকের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে।
সিরিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আনাস খাত্তাব একে "নিন্দনীয় সন্ত্রাসী হামলা" উল্লেখ করে জানান, ঘটনার তদন্তে বিশেষজ্ঞ দল কাজ শুরু করেছে।
তিনি আরও বলেন, “এই ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড সিরিয়ায় শান্তি প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টা থামাতে পারবে না।”
জাতিসংঘের সিরিয়া বিষয়ক বিশেষ দূত গিয়ার পেডারসন এই হামলার নিন্দা জানিয়ে সিরিয়ার জনগণকে সন্ত্রাস, উগ্রবাদ এবং বিদ্বেষের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানান।

যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ দূত টম ব্যারাক বলেন, “এই কাপুরুষোচিত হামলার কোনো স্থান নেই সেই সহনশীল ও অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজে, যা সিরিয়ার মানুষ গড়ে তুলতে চায়।”
উল্লেখ্য, আইএস পূর্বেও সিরিয়ায় খ্রিস্টানসহ সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে হামলা চালিয়েছে। ২০১৬ সালে তারা দামেস্কের শিয়া পবিত্র স্থান সাইয়্যেদা জয়নাব মাজারে বোমা হামলা চালিয়ে ৭০ জনকে হত্যা করেছিল।
জাতিসংঘের এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, সাম্প্রতিককালে সিরিয়ায় এক হাজার ৫০০ থেকে তিন হাজার আইএস সদস্য সক্রিয় রয়েছে এবং তারা দেশের রূপান্তরের সুযোগে নতুন করে হামলার পরিকল্পনা করছে।

বর্তমানে উত্তর-পূর্ব সিরিয়ার বিভিন্ন কারাগারে নয় হাজারের বেশি আইএস যোদ্ধা এবং ৪০ হাজারের বেশি আইএস-সংশ্লিষ্ট নারী ও শিশু আটক রয়েছে।