গাজা যুদ্ধে ইসরায়েলের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের জনসমর্থন কমছে : জরিপ

গাজার ওপর ইসরায়েলের সামরিক অভিযানের প্রতি মার্কিন জনসমর্থন উল্লেখযোগ্যভাবে কমে এসেছে বলে এক নতুন জরিপে দেখা গেছে। গবেষণা সংস্থা গ্যালাপ নতুন এই জরিপ করেছে।
জরিপ অনুযায়ী, বর্তমানে মাত্র ৩২ শতাংশ আমেরিকান এই সামরিক অভিযানকে সমর্থন করেন—২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরের তুলনায় যা ১০ শতাংশ কম। খবর আল জাজিরার।
স্থানীয় সময় মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) প্রকাশিত জরিপে আরও দেখা গেছে, ইস্যুটি রাজনৈতিকভাবে তীব্র বিভাজন সৃষ্টি করেছে। রিপাবলিকান দলের ৭১ শতাংশ সমর্থক ইসরায়েলের কর্মকাণ্ডকে অনুমোদন করলেও ডেমোক্র্যাটদের মধ্যে এ হার মাত্র ৮ শতাংশ।
৬০ শতাংশ আমেরিকান নাগরিক সামগ্রিকভাবে ইসরায়েলের সামরিক অভিযানের বিরোধিতা করছেন।
মেরিল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও ক্রিটিক্যাল ইস্যুস পোলের পরিচালক শিবলি টেলহামি আল জাজিরাকে বলেন, “এটি শুধু গাজা যুদ্ধ নয়—আমরা এখন এমন এক প্রজন্মের ভিত রচনা দেখতে পাচ্ছি, বিশেষ করে তরুণ আমেরিকানদের মধ্যে—যারা ইসরায়েলের চরিত্রকে গাজার ভয়াবহতার মধ্য দিয়ে মূল্যায়ন করছেন।”
তরুণদের মধ্যে ইসরায়েলের প্রতি বিরূপ মনোভাব আরও স্পষ্ট। ৩৫ বছরের কম বয়সী মাত্র ৯ শতাংশ জরিপ অংশগ্রহণকারী ইসরায়েলের সামরিক পদক্ষেপকে সমর্থন করেছেন এবং মাত্র ৬ শতাংশ ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর প্রতি ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশ করেছেন।
এ বছরের এপ্রিলে পিউ রিসার্চ সেন্টারের এক জরিপেও দেখা গেছে, ৫০ শতাংশের বেশি রিপাবলিকান (৫০ বছরের নিচে) ইসরায়েলকে নেতিবাচকভাবে দেখেন।
জনমতের এই আমূল পরিবর্তনের মধ্যেও যুক্তরাষ্ট্রের সরকার এখনও ইসরায়েলকে নিরঙ্কুশ সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। যুদ্ধ শুরুর পর থেকে যুক্তরাষ্ট্র বিলিয়ন ডলারের সামরিক সহায়তা দিয়েছে, একই সঙ্গে জাতিসংঘে কূটনৈতিকভাবে ইসরায়েলকে রক্ষা করেছে।
ডোনাল্ড ট্রাম্প থেকে শুরু করে জো বাইডেন পর্যন্ত সবাই গাজায় ইসরায়েলের সামরিক অভিযানে দৃঢ় সমর্থন দিয়েছেন, যা মানবাধিকার সংস্থাগুলোর মতে একটি গণহত্যার চিত্র বহন করে।
ইসরায়েল এখন পর্যন্ত ৬০ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে, গাজা উপত্যকায় বিধ্বংসী অবরোধ আরোপ করেছে এবং অধিকাংশ ভবন ধ্বংস করে দিয়েছে। জাতিসংঘ মঙ্গলবার জানিয়েছে, সেখানে "ক্ষুধা ও দুর্ভিক্ষের ব্যাপক প্রমাণ" পাওয়া যাচ্ছে।
জনমতের বিরোধিতার পরেও মার্কিন কংগ্রেসে ইসরায়েলের প্রতি দ্বিদলীয় সমর্থন অব্যাহত রয়েছে। চলতি মাসের শুরুতে ইসরায়েলকে দেওয়া ৫০০ মিলিয়ন ডলারের ক্ষেপণাস্ত্র সহায়তা আটকে দেওয়ার একটি প্রস্তাব প্রতিনিধি পরিষদে ৪২২-৬ ভোটে ব্যর্থ হয়।
অধ্যাপক টেলহামি মনে করেন, আমেরিকান ভোটারদের “অগ্রাধিকারের” কারণেই এই বৈপরীত্য। তিনি বলেন, বৈদেশিক নীতিকে সাধারণত আমেরিকান নির্বাচনগুলোতে মূল ইস্যু হিসেবে দেখা হয় না। গর্ভপাত, অর্থনীতি ও অস্ত্র নিয়ন্ত্রণের মতো অভ্যন্তরীণ বিষয়গুলোই ডেমোক্র্যাটদের মধ্যে প্রধান।
এ ছাড়া, এআইপ্যাক-এর মতো প্রভাবশালী ইসরায়েলপন্থী লবিগুলোর ভূমিকাও তিনি উল্লেখ করেন, যারা ডেমোক্রেটিক প্রাইমারিতে ইসরায়েলবিরোধী প্রার্থীদের হারাতে লক্ষ লক্ষ ডলার ব্যয় করে।
টেলহামি বলেন, এখন ‘ফিলিস্তিন’ বিষয়টি জনসচেতনতায় উঠছে। এটি কেবল আন্তর্জাতিক ইস্যু নয়, বরং আমেরিকানরা নিজেদের নৈতিক অবস্থান নিয়ে ভাবছে : “আমরা কী দাঁড়িয়ে আছি ন্যায়ের পক্ষে, নাকি এই নৃশংসতা চালানোর পক্ষে সহায়ক শক্তি হিসেবে?”
তিনি উদাহরণ হিসেবে নিউইয়র্কে ডেমোক্রেটিক মেয়র প্রাইমারিতে প্যালেস্টাইনের পক্ষে অবস্থান নেওয়া জোহরান মামদানির বিজয়কে উল্লেখ করেন।

টেলহামি বলেন, “অনেকে মনে করেছিলেন ইসরায়েল-ফিলিস্তিন ইস্যুতে তার অবস্থান সত্ত্বেও তিনি জনপ্রিয় হয়েছেন, কিন্তু বাস্তবে তার এই অবস্থানের কারণেই তিনি তরুণদের মধ্যে উন্মাদনা সৃষ্টি করতে পেরেছেন।”
এই প্রবণতা ইঙ্গিত দিচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্রে ইসরায়েল প্রশ্নে দীর্ঘমেয়াদী রাজনৈতিক ও সামাজিক বিভাজন আরও তীব্র হতে পারে।