ব্রাজিলের ওপর ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা ট্রাম্পের

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, তারা ব্রাজিলের সুপ্রিম কোর্টের বিচারক আলেকজান্দ্রে ডি মোরেসকে ‘বিচার-পূর্ব আটক’ অনুমোদন ও ‘মত প্রকাশের স্বাধীনতা’ দমন করার অভিযোগে শাস্তি দেবেন। এই ঘোষণার পরপরই মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প একটি নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করেছেন, যার মাধ্যমে ব্রাজিলের ওপর শুল্ক ৫০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে।
বিচারক মোরেস ব্রাজিলের সাবেক ডানপন্থি রাষ্ট্রপতি জাইর বলসোনারো ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে ২০২২ সালের নির্বাচনে হেরে যাওয়ার পর অভ্যুত্থানের ষড়যন্ত্রের অভিযোগের তদন্তের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। বলসোনারো এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ও বিচারক মোরেসকে ‘স্বৈরশাসক’ বলে অভিহিত করেছেন।
ট্রাম্প এই মাসের শুরুতে ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিও লুলা দা সিলভাকে একটি চিঠি পাঠিয়েছিলেন, যা তিনি সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করেন। সেই চিঠিতে ট্রাম্প ব্রাজিলকে হুমকি দিয়েছিলেন যে, তারা যদি মার্কিন প্রযুক্তি সংস্থাগুলোর ওপর আক্রমণ করা বন্ধ না করে ও বলসোনারোর বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ না থামায়, তাহলে তাদের ওপর বেশি শুল্ক চাপানো হবে।
শুল্ক সংক্রান্ত নির্বাহী আদেশে কমলার রস, কিছু বিমানের যন্ত্রাংশ ও জ্বালানি পণ্যসহ ব্রাজিলের বেশ কয়েকটি প্রধান রপ্তানিকে উচ্চ কর থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। তবে এই আদেশে ব্রাজিলের রাজনৈতিকভাবে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত নিপীড়ন, ভীতি প্রদর্শন, হয়রানি, সেন্সরশিপ ও বলসোনারোর বিরুদ্ধে মামলার সঙ্গে সরাসরি শুল্ক আরোপের কথা বলা হয়েছে। ব্রাজিল হুমকি দিয়েছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক আরোপিত যেকোনো শুল্কের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
চীনের পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ব্রাজিলের দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্য অংশীদার, তাই এই শুল্ক বৃদ্ধি দক্ষিণ আমেরিকার এই দেশটির ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলবে। ব্রাজিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ১৫তম বৃহত্তম বাণিজ্য অংশীদার ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি করা প্রধান পণ্যগুলোর মধ্যে রয়েছে খনিজ জ্বালানি, বিমান ও যন্ত্রপাতি। অন্যদিকে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ব্রাজিল থেকে গ্যাস, পেট্রোলিয়াম, লোহা ও কফি আমদানি করে।
বুধবার (৩০ জুলাই) মার্কিন অর্থমন্ত্রী স্কট বেসেন্ট বিচারক মোরেসের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা ঘোষণার সময় অভিযোগ করেন, মোরেস যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রাজিলের মানুষ এবং ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মিথ্যা হয়রানি চালাচ্ছেন। বেসেন্ট আরও বলেন, এই বিচারক মতপ্রকাশের স্বাধীনতা দমনে জোরজবরদস্তি, মানুষের অধিকার লঙ্ঘন করে যখন তখন আটক করা ও সাবেক প্রেসিডেন্ট জাইর বলসোনারোর বিরুদ্ধে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে মামলা চালানোর জন্য দায়ী। আজকের এই পদক্ষেপ পরিষ্কার করে দেয় যে, যারা মার্কিন স্বার্থ ও আমাদের নাগরিকদের স্বাধীনতার জন্য হুমকি, ট্রেজারি বিভাগ তাদের জবাবদিহি নিশ্চিত করবে। এ বিষয়ে মন্তব্যের জন্য বিবিসি বিচারক মোরেসের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে।
বিচারক মোরেস শুধু বলসোনারোর বিরুদ্ধে তদন্তই করেননি, তিনি কিছু সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্টও বন্ধ করার নির্দেশ দিয়েছিলেন। কারণ সেগুলো ভুল তথ্য ছড়াচ্ছিল। ট্রাম্পের নিজের কোম্পানি ‘ট্রুথ সোশ্যাল’ প্ল্যাটফর্মও ব্রাজিলের এই নির্দেশের বিরুদ্ধে আদালতে লড়ছে।
ব্রাজিল এক সময় ইলন মাস্কের এক্স (আগের টুইটার) সাময়িকভাবে নিষিদ্ধ করেছিল। কারণ, ২০২২ সালের নির্বাচনের ভুল তথ্য ছড়ানো অ্যাকাউন্টগুলো বন্ধ করতে প্ল্যাটফর্মটি রাজি হয়নি। গত মাসেই ব্রাজিলের সুপ্রিম কোর্ট রায় দিয়েছে, সোশ্যাল মিডিয়া কোম্পানিগুলো তাদের প্ল্যাটফর্মে প্রকাশিত বিষয়বস্তুর জন্য দায়ী থাকবে।

জুলাইয়ের শুরুতে, ট্রাম্প বলসোনারোর বিরুদ্ধে চলা মামলাকে নিজের আইনি মামলার মতোই বলেছিলেন। ট্রাম্প মন্তব্য করেন, এটি একটি রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের ওপর হামলার চেয়ে কম কিছু নয়— এমন কিছু যা সম্পর্কে আমি খুব ভালো জানি! এর জবাবে বলসোনারো মার্কিন প্রেসিডেন্টকে তার সমর্থনের জন্য ধন্যবাদ জানান।