জাতিসংঘের সমালোচনার মুখেও গাজা দখল পরিকল্পনায় অনড় নেতানিয়াহু

জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের জরুরি বৈঠকে গাজা সিটি “দখল” করার ইসরায়েলের পরিকল্পনা নিয়ে তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েছেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। তবে তিনি দাবি করেছেন, এই পরিকল্পনাই যুদ্ধ শেষ করার “সেরা উপায়” এবং এটি “খুব দ্রুত” বাস্তবায়ন হবে। খবর বিবিসির।
স্থানীয় সময় রোববার (১০ আগস্ট) এক সংবাদ সম্মেলনে নেতানিয়াহু বলেন, এই অভিযান গাজাকে “হামাসের হাত থেকে মুক্ত করবে”। তিনি অভিযোগ করেন, গাজায় আটক ইসরায়েলি জিম্মিদের “ইচ্ছাকৃতভাবে অনাহারে রাখা হচ্ছে” এবং ইসরায়েল গাজাবাসীকে অনাহারে রাখছে—এমন অভিযোগ অস্বীকার করেন।
জাতিসংঘ বৈঠকে যুক্তরাজ্য, ফ্রান্সসহ একাধিক দেশ পরিকল্পনাটি বাতিলের আহ্বান জানিয়ে সতর্ক করে বলেছে, এটি “আন্তর্জাতিক মানবিক আইন লঙ্ঘন” হতে পারে। ডেনমার্ক, গ্রিস ও স্লোভেনিয়াসহ আরও কয়েকটি দেশ জানায়, এই পরিকল্পনা জিম্মিদের মুক্তি নিশ্চিত করবে না, বরং তাদের জীবনের ঝুঁকি বাড়াবে।
চীন গাজার জনগণের ওপর “সমষ্টিগত শাস্তি”কে অগ্রহণযোগ্য বলে উল্লেখ করে, আর রাশিয়া “উন্মত্তভাবে যুদ্ধ বাড়ানো” থেকে সতর্ক করেছে। জাতিসংঘের সহকারী মহাসচিব মিরোস্লাভ জেনকা বলেন, এই পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে গাজায় নতুন বিপর্যয় নেমে আসবে, যা পুরো অঞ্চলে প্রভাব ফেলবে।
জাতিসংঘের মানবিক দপ্তরের রমেশ রাজাসিংহাম জানান, গাজার খাদ্যসংকট আর আগত নয়, বরং এখন “এটি সরাসরি অনাহার”।
যুক্তরাষ্ট্র অবশ্য ইসরায়েলকে সমর্থন জানিয়েছে। মার্কিন রাষ্ট্রদূত ডরোথি শে বলেন, যুক্তরাষ্ট্র জিম্মি মুক্তি ও যুদ্ধ বন্ধে “নিরলসভাবে” কাজ করছে, কিন্তু বৈঠকটি সেই প্রচেষ্টাকে ক্ষুণ্ন করছে। তিনি অভিযোগ করেন, কিছু দেশ এই বৈঠককে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগ তুলতে ব্যবহার করছে, যা “সম্পূর্ণ মিথ্যা”।
পরে নেতানিয়াহুর কার্যালয় জানায়, তিনি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে ইসরায়েলের পরিকল্পনা নিয়ে কথা বলেছেন। এদিকে, হাজারো ইসরায়েলি রাস্তায় নেমে এই পরিকল্পনার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করেছে, কারণ তারা মনে করে এটি জিম্মিদের জীবনের জন্য হুমকি।
নেতানিয়াহু জানান, সেনাবাহিনীকে গাজা সিটির দুটি “অবশিষ্ট হামাস ঘাঁটি” এবং আল-মাওয়াসি এলাকার একটি কেন্দ্রীয় অংশ ধ্বংসের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি তিনি গাজায় ত্রাণ সহায়তা বাড়াতে তিন ধাপের পরিকল্পনা ঘোষণা করেন—এর মধ্যে নিরাপদ করিডোর তৈরি, আকাশপথে ত্রাণ সরবরাহ এবং বিতরণ কেন্দ্রের সংখ্যা বাড়ানো অন্তর্ভুক্ত।
জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, মে মাসের শেষ থেকে বিতরণকেন্দ্রগুলোতে খাদ্য নিতে গিয়ে এক হাজার ৩৭৩ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। নেতানিয়াহু দাবি করেন, হামাস ত্রাণ ট্রাক লুট করেছে এবং অনেক গুলি হামাসই চালিয়েছে।
গাজায় এখনও প্রায় ২০ জন ইসরায়েলি জিম্মি জীবিত আছে বলে ধারণা করা হয়। নেতানিয়াহু বলেন, “আমরা কিছু না করলে, তাদের উদ্ধার করা সম্ভব হবে না।”
গাজার অপুষ্ট শিশুদের ছবি নিয়ে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনের সমালোচনা করে তিনি বলেন, কিছু ছবি “নকল”। যদিও গাজায় আন্তর্জাতিক সাংবাদিকদের অবাধে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হয়নি, নেতানিয়াহু দাবি করেন, গত দুই দিন ধরে বিদেশি সাংবাদিকদের ঢোকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

হামাস নিয়ন্ত্রিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, শনিবার থেকে অপুষ্টি ও অনাহারে আরও পাঁচজন মারা গেছেন, যা মোট সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২১৭ জনে। ২০২৩ সাল থেকে ইসরায়েলি সামরিক অভিযানে মোট মৃতের সংখ্যা ৬১ হাজারের বেশি।