যে কারণে জাপানে বাড়ছে শতবর্ষী মানুষের সংখ্যা

সম্প্রতি জাপানে শতবর্ষী মানুষের সংখ্যা রেকর্ড এক লাখে পৌঁছেছে। দেশটির স্বাস্থ্য, শ্রম ও কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, এর মধ্যে প্রায় ৮৮ শতাংশই নারী। জাপানের এই অস্বাভাবিক দীর্ঘায়ু কেবল একটি কাকতালীয় ঘটনা নয়, বরং এর পেছনে রয়েছে সুনির্দিষ্ট কিছু কারণ।
স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস
জাপানিদের দীর্ঘায়ুর অন্যতম প্রধান কারণ হলো— তাদের ঐতিহ্যবাহী খাদ্যাভ্যাস। তাদের খাবারে সাধারণত প্রচুর পরিমাণে তাজা মাছ, সামুদ্রিক শৈবাল, শাকসবজি ও ফল থাকে। মাছে থাকা ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড ও সবজিতে থাকা ভিটামিন এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট তাদের সুস্থ থাকতে সাহায্য করে।
এ ছাড়াও, তারা কম তেল ও মসলা ব্যবহার করে খাবার সেদ্ধ, ভাপিয়ে বা হালকা ভেজে খায়, যা অতিরিক্ত ক্যালরি গ্রহণ থেকে বিরত রাখে। ঐতিহ্যবাহী জাপানি রান্নায় সয়াবিন, মিসো ও তাফু-এর ব্যবহারও বেশি।
উন্নত স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা
জাপানের স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা বিশ্বের অন্যতম উন্নত। প্রত্যেক নাগরিকের জন্য স্বাস্থ্যবীমা বাধ্যতামূলক ও দেশের যেকোনো হাসপাতাল এবং ক্লিনিকে তা ব্যবহার করা যায়। নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষার ওপরও জোর দেওয়া হয়, যার ফলে রোগ প্রাথমিক পর্যায়েই ধরা পড়ে ও চিকিৎসা সহজ হয়। বয়স্কদের জন্য বিশেষায়িত চিকিৎসা পরিষেবাও রয়েছে, যা তাদের সুস্থ জীবন নিশ্চিত করে।
সচল জীবনধারা ও সংস্কৃতি
স্বাস্থ্যকর খাদ্যের পাশাপাশি জাপানিদের দীর্ঘায়ু জীবনের পেছনে সচল জীবনধারার বড় ভূমিকা রয়েছে। তারা প্রতিদিন হাঁটা, সাইকেল চালানো ও হালকা ব্যায়ামের মতো শারীরিক কার্যকলাপে সক্রিয় থাকে।

এছাড়াও জাপানি সংস্কৃতিতে সম্প্রদায় বা কমিউনিটির ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বয়স্ক ব্যক্তিরা সামাজিকভাবে সক্রিয় থাকেন এবং বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন, যা তাদের মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সাহায্য করে।
জাপানিরা বিশ্বাস করে, ‘ইকিগাই’ বা জীবনের লক্ষ্য মানুষকে প্রতিদিন সকালে বিছানা থেকে উঠতে অনুপ্রাণিত করে। এই দর্শন জীবনের প্রতি তাদের ইতিবাচক মনোভাব ধরে রাখতে সাহায্য করে, যা দীর্ঘায়ুর জন্য খুবই জরুরি।