যে কারণে নাইজেরিয়ান নাইটক্লাবে বাথরুম সাজানোর প্রতিযোগিতা

মার্বেলের দেওয়াল, আকর্ষণীয় লাইট ও সারি সারি আয়না দিয়ে সাজানো বাথরুম। নাইজেরিয়ার নাইটক্লাবগুলোতে এখন এমন চিত্রই দেখা যায়। গ্রাহকদের, বিশেষ করে নারীদের সেলফি তোলার জন্য আকর্ষণীয় করে সাজানো হচ্ছে এই বাথরুমগুলো। বাথরুম সেলফি কোনো গুরুত্বপূর্ণ আলোচনার বিষয় না হলেও, নাইজেরিয়ার ক্লাবগুলোতে এটি প্রতিযোগিতার কেন্দ্রে অবস্থান করছে।
আফ্রিকার সবচেয়ে জনবহুল এই দেশটির ক্লাবগুলো বাথরুমের সাজসজ্জাকে ব্যবসার একটি গুরুত্বপূর্ণ কৌশল হিসেবে দেখছে। বাথরুমকে নান্দনিকভাবে সাজিয়ে ক্লাবগুলো মূলত বিনা খরচে প্রচারণার সুযোগ পাচ্ছে। কারণ মানুষজন এসব বাথরুমের ছবি সামাজিক মাধ্যমে পোস্ট করছে, যা ক্লাবের জন্য বিজ্ঞাপন হিসেবে কাজ করছে।
লাগোসের জনপ্রিয় নাইটক্লাব জাজার সহকারী জেনারেল ম্যানেজার জনি ফ্রাঞ্জেজ বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেন, সাজসজ্জা একটি বিশাল ভূমিকা পালন করে। বিশেষ করে নাইজেরিয়ার নারীদের জন্য। এজন্য আমরা বাথরুমগুলোক যতটা সম্ভব আকর্ষণীয়ভাবে তৈরি করার চেষ্টা করি।
কমিয়েবার্বি নামে একজন জনপ্রিয় ইনফ্লুয়েন্সার বলেন, তিনি বন্ধুদের সঙ্গে কোনো নতুন জায়গায় গেলে প্রথমেই বাথরুমে যান ছবি তোলার জন্য।
দেশটির বাথরুম সাজানোর এই প্রবণতা এখন শুধু লাগোসেই সীমাবদ্ধ নেই। দেশটির রাজধানী আবুজা থেকে শুরু করে রক্ষণশীল কানো শহরেও ছড়িয়ে পড়েছে। এসব বাথরুমে প্রায়শই মার্বেল, সোনালি আভা ও নানারকম ঝাড়বাতি ব্যবহার করা হচ্ছে। কোনো কোনো ক্লাবে বাথরুমের দেয়ালে একটি বোতাম চাপলে একটি ছোট জানালা দিয়ে বিনামূল্যে শ্যাম্পেন চলে আসে।
আবুজার ‘এ বার কল্ড পেপারে‘ নারীদের বাথরুমের ঠিক পাশেই একটি ‘সেলফি রুম‘ রয়েছে। যেখানে মনমোহক নকশার দেয়াল ও একাধিক আয়না সাজানো রয়েছে। স্টেফানি নামের এক ২৬ বছর বয়সী নারী জানান, ছবি তোলার জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো একটি উপযুক্ত অ্যাঙ্গেল খুঁজে বের করা।

এই প্রবণতা নাইজেরিয়ার উত্তর অংশের মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ শহর কানোতেও ছড়িয়ে পড়েছে। সেখানকার ‘অ্যান্টিকা‘ লাউঞ্জের ক্রেতারা শালীন পোশাকে থাকলেও বাথরুমে ঢুকে তারা দক্ষিণের ক্লাবগুলোর মতোই সেলফি তুলতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন।
এই নতুন প্রবণতা নিয়ে ক্লাবগুলোর মধ্যে এক ধরনের প্রতিযোগিতা চলছে। লাগোসের আরেকটি জনপ্রিয় ক্লাব ‘রোকোকোর‘ প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ঘাদা গাইথ এএফপিকে বলেন, আমরাই এই ট্রেন্ডের উদ্ভাবক! আমাদের ক্লাব খোলার দুই সপ্তাহ আগে বাথরুমের একটি ছবি সামাজিক মাধ্যমে পোস্ট করা হয়েছিল। এর মাত্র দুই ঘণ্টা পরেই প্রায় ২০০টি বুকিংয়ের অনুরোধ আসে।তখন অনেকে বাথরুমকে রেস্টুরেন্ট মনে করে বুকিং দিয়েছিল, কারণ ছবিতে কোনো টয়লেট দেখা যাচ্ছিল না, বরং একটি ক্রিস্টাল ঝাড়বাতিই আকর্ষণীয় করে তুলেছিল সেই বাথরুমকে।