ইসির অভ্যন্তরেই কোনো লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নেই : মাহবুব তালুকদার

নির্বাচন কমিশনের অভ্যন্তরেই কোনো লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নেই বলে অভিযোগ করেছেন জ্যেষ্ঠ নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার। আজ রোববার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে নিজ দপ্তরে লিখিত বক্তব্যে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন তিনি।
মাহবুব তালুকদার বলেন, ‘এই নির্বাচনে নির্বাচন কমিশনের যেভাবে দায়িত্ব পালন করা প্রয়োজন, তা হচ্ছে না। শিডিউল ঘোষণার পর থেকে আজ পর্যন্ত যে তিনটি কমিশন সভা অনুষ্ঠিত হয়, তার কোনোটিতে ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচনের আচরণবিধি, অনিয়ম বা প্রার্থীদের অভিযোগ সম্পর্কে কোনো আলোচনা হয়নি এবং কোনো কমিশন সভায় এসব বিষয় এজেন্ডাভুক্ত হয়নি।’
মাহবুব তালুকদার আরো বলেন, ‘আগামী ২৮ জানুয়ারি যে সভা অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে, তাতেও ঢাকা সিটি করপোরেশন সম্পর্কে কোনো বিষয় এজেন্ডাভুক্ত নয়। অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে বলতে হচ্ছে, ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচন সম্পর্কে আমি গত ৯, ১৩, ১৬ ও ২০ জানুয়ারি যে চারটি ইউও নোট দিয়েছি, তা রীতিমতো উপেক্ষা করা হয়েছে এবং আমলে নেওয়া হয়নি। এসবের বিষয়বস্তু সম্পর্কে কোনো আলোচনা হয়নি বা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাও গৃহীত হয়নি। যদি আমার বক্তব্য অগ্রহণযোগ্য হয়, তাহলেও আমাকে তা জানানো উচিত ছিল। গত ১৬ জানুয়ারি ইউও নোটের মাধ্যমে কমিশন সচিবালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব এবং ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের দুই রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে আমি প্রার্থীদের বিভিন্ন অভিযোগ সম্পর্কে তথ্যাদি জানাতে বলেছিলাম। এসব অভিযোগের বিষয়ে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, ২০ জানুয়ারির মধ্যে আমার কাছে পেশ করার জন্য নির্দেশ দিয়েছিলাম। কিন্তু আমার সেই নির্দেশ উপেক্ষিত হয়েছে এবং কোনো তথ্যই আমাকে সরবরাহ করা হয়নি।’
জ্যেষ্ঠ এই নির্বাচন কমিশনার বলেন, ‘নির্বাচন কমিশনে রাজনৈতিক দল বা প্রার্থীর পক্ষ থেকে আসন্ন সিটি করপোরেশন নির্বাচন সম্পর্কে যেসব অভিযোগে করা হয়েছে বা অভিযোগপত্র দেওয়া হয়েছে, তা নিয়ে কমিশনে কোনো প্রকার আলোচনা ও সিদ্ধান্ত নেওয়ার লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। এসব অভিযোগের পেছনে যে অসন্তোষ আছে, তা বিস্ফোরিত হলে সিটি করপোরেশন নির্বাচন যথোপযুক্তভাবে অনুষ্ঠিত হবে না, যা কোনোভাবেই কাম্য নয়। এর দায়ভার নির্বাচন কমিশনকে বহন করতে হবে।’
মাহবুব তালুকদার বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন সভায় আমার প্রস্তাব বা সুপারিশ সংখ্যাগরিষ্ঠতার কারণে অগৃহীত হয়। আমাকে সংখ্যালঘিষ্ঠ হিসেবে না দেখে আমার বক্তব্যের বিষয়বস্তুর মেরিটকে বিবেচনায় নেওয়া সমীচীন বলে মনে করি। আমার ধারণা, কমিশন সভায় আমার বক্তব্য প্রদানের স্থান সংকুচিত হয়ে পড়েছে। নির্বাচন কমিশনের অভ্যন্তরেই কোনো লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নেই। আমরা নির্বাচন কমিশনের স্বাধীনতা ও মর্যাদা রক্ষা করতে চাই। আমাদের কর্মকাণ্ডে তা দৃশ্যমান হওয়া বাঞ্ছনীয়।’
নিজ দপ্তরে লিখিত বক্তব্য দেওয়ার পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাব দেন নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার। সরকারি দল সব সময় একটা কথা বলে, আপনি বিএনপির পারসাস সার্ভ করার জন্য বসেছেন, আপনার পদত্যাগ করা উচিত—এমন প্রশ্নের জবাবে মাহবুব তালুকদার বলেন, ‘যে কেউ যেকোনো কিছু বলতে পারে, যেকোনো তকমা আমার পেছনে লাগানো যেতে পারে; কিন্তু আমার অতীত ইতিহাস যাঁরা জানেন, তাঁরা কখনো বলবেন না যে আমি কোনো নির্দিষ্ট দলের। যে মুহূর্ত থেকে আমি এই চেয়ারে বসেছি, সে মুহূর্ত থেকে আমি কোনো দলের নই। কোনো দলের সঙ্গে আমার কোনো সম্পর্ক নেই। কারো সঙ্গে কোনো মতবাদের সঙ্গে আমার সম্পর্ক নেই। আমি আমার বিবেক দ্বারা পরিচালিত। এটা তাদের রাজনৈতিক বিষয় হতে পারে। কিন্তু আমি সেগুলো অতিক্রম করে যেতে চাই।’
মাহবুব তালুকদার বলেন, ‘আমি আচরণবিধি সম্পর্কে যে চারটি নোট দিয়েছিলাম, সেগুলো উপেক্ষিত হয়েছে। কিন্তু এ সম্পর্কে আমার করণীয় সেটা সময়ই বলে দেবে, এ মুহূর্তে কিছু বলতে পারব না। নির্বাচন যখন হবে, তখন দেখবেন আইনশৃঙ্খলা আমাদের নিয়ন্ত্রণে আছে কিনা। তবে রাজনৈতিক বিষয়ে মন্তব্য দেওয়া আমার পক্ষে সম্ভব না।’
প্রচার-প্রচারণায় আচরণবিধি লঙ্ঘন হচ্ছে, আপনারা চুপ কেন—এমন প্রশ্নের জবাবে এই কমিশনার বলেন, ‘আমি তো চুপ না। আমি স্পষ্টভাবে আচরণবিধি সম্পর্কে অভিমত বলেছি। সুতরাং এই প্রশ্নের আলাদা জবাব হয় না। আমার চোখের সামনে কেবল ঢাকাবাসী নয়, আমি এ দেশের নীরব জনগোষ্ঠীর ভাষা যেটা অশ্রুত, সেই অশ্রুত ভাষা শোনার জন্য আমি চেষ্টা করি তাদের কী ভাষ্য।’
নিজেদের (কমিশন) মধ্যে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড না থাকলে ভোটের মাঠে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড কীভাবে থাকবে—এমন প্রশ্নের জবাবে মাহবুব তালুকদার বলেন, ‘আমরা তো এক মেশিনে তৈরি না। আমাদের পাঁচজনের পাঁচ রকম মত হতেই পারে। অনেক বিষয় রয়েছে পারস্পরিক সমঝোতার মাধ্যমে একটা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করি। সেটাই স্বাভাবিক। কোনো কোনো বিষয়ে ভিন্নমত থাকে। সেটা কারো ওপর চাপিয়ে দিতে পারি না। গণতান্ত্রিক দেশে ভিন্নমত থাকতেই পারে। কমিশনের সাধারণত সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতেই সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। সেখানে সংখ্যালঘিষ্ঠ হিসেবে আমার প্রস্তাব হয়তো গৃহীত হয় না।’