কাজীরহাট ফেরিঘাটে ভিড়, অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের অভিযোগ

ঈদের ছুটি শেষে কর্মজীবী মানুষের ঢাকামুখী ঢল এখনও অব্যাহত আছে। এরই মধ্যে আজ শুক্রবার ঈদের পর ছুটির দিন হওয়ায় কাজীরহাট ফেরিঘাটে যাত্রীদের ব্যাপক ভিড় লক্ষ্য করা গেছে।
শুক্রবার সকালে পাবনা বেড়া উপজেলার কাজীরহাট ফেরিঘাটে গিয়ে দেখা যায়, কাজীরহাট-আরিচা নৌপথে চলাচলকারী চারটি ফেরির মধ্যে একটি নষ্ট হওয়ায় প্রতিটি ফেরিতে যাত্রীরা পা রাখারও জায়গা পাচ্ছে না।
ছুটি শেষে উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন জেলার মানুষ ঢাকায় ছুটছে। গণপরিবহন বন্ধ থাকায় বিভিন্ন ধরনের যানবাহনে তারা কাজীরহাট ঘাটে এসে নামছে। ফেরির স্বল্পতায় যাত্রীরা ঘণ্টার পর ঘণ্টা তীব্র রোদ ও গরম উপেক্ষা করে ঘাটে অপেক্ষা করছে। আরিচা থেকে কাজীরহাটে ফেরি এসে ভেড়ামাত্রই যাত্রীরা তাতে হুড়মুড়িয়ে উঠছে। এভাবে উঠতে গিয়ে দুর্ঘটনায় আহত হচ্ছে অনেকে। অনেকে আবার তীব্র গরমে অসুস্থ হয়েও পড়ছে। গাদাগাদি করে ফেরি ওঠার ফলে ন্যূনতম স্বাস্থ্যবিধির তোয়াক্কা করছে না কেউ।
কাজীরহাট ঘাটে ফেরিতে নদী পারাপারের টিকিটমূল্য ২৫ টাকা হলেও যাত্রীদের কাছ থেকে ৩৫ টাকা করে আদায়ের অভিযোগ উঠেছে।
এদিকে বিআইডব্লিউটিসি সূত্রে জানা গেছে, এই নৌপথে প্রতিদিন চারটি করে ফেরি যাওয়া-আসা করত। কিন্তু গত মঙ্গলবার (১৮ মে) থেকে একটি ফেরি নষ্ট। মেরামতের জন্য ফেরিটি কারখানায় পাঠানো হয়েছে। ফলে তিনটি ফেরি দিয়ে যাত্রী ও যানবাহন পারাপার বেশ কঠিন হয়ে পড়েছে।
রাশেদ হাসান নামের শিক্ষার্থী ঈদের ছুটি কাটিয়ে নাটোর থেকে আজ সকালে ঢাকার উদ্দেশে রওনা দেন। ফেরিঘাটে পৌঁছার পর ইজারাদারের মনোনীত প্রতিনিধিদের বাধার মুখে পড়েন তিনি। তার কাছ থেকে ফেরিতে নদী পারাপারের টিকিটের জন্য ৩৫ টাকা আদায় করা হয়।
রাশেদ আক্ষেপ করে বলেন, ‘নাটোর থেকে কখনও বাসে আবার কখনও সিএনজিচালিত অটোরিকশায় ভেঙে ভেঙে ঘাট পর্যন্ত এসেছি। প্রতিটি যানবাহনেই বেশি ভাড়া দিতে হয়েছে। ভেবেছিলাম সরকারি ফেরিতে আসল ভাড়ায় পার হওয়া যাবে। কিন্তু এখানেও ভাড়া বেশি নিল।
স্কুলশিক্ষক আব্দুর রাজ্জাক ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘‘ঈদের পর স্ত্রী ও সন্তানদের নিয়ে ঢাকা যাওয়ার জন্য এসেছি। এমনিতেই ফেরি কম থাকায় দেড় ঘণ্টা তীব্র রোদের মধ্যে বসে থাকতে হয়েছে। এর ওপর ওরা ভাড়াও বেশি নিল। তিনি আরও বলেন, টিকিটের মূল্য ১০০ টাকা দাবি করলেও আমাদের দিতে হবে। উপায় তো আর নেই। ফেরির সংখ্যা বাড়িয়ে আমাদের কষ্ট না দিয়ে যদি বেশি ভাড়া নিত, তবু না হয় সহ্য হতো।’
ঘাট এলাকার একাধিক ব্যক্তি জানায়, স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানসহ প্রভাবশালীদের যোগসাজশেই টিকিটের মূল্যের চেয়ে কায়দা করে ১০ টাকা বেশি নেওয়া হচ্ছে। এতে প্রতিদিন লাখ লাখ টাকা অবৈধ ইনকাম করে তারা ভাগবটোয়ারা করে নিচ্ছে।
তবে এ ব্যাপারে রূপপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আবুল হাসেম উজ্জ্বলের সঙ্গে কথা হলে তিনি জানান, ‘অতিরিক্ত ভাড়া নেওয়ার বিষয়ে আমিও শুনেছি। তবে নিষেধ করা হয়েছে, মনে হয় আর নিচ্ছে না।’
এ ব্যাপারে বিআইডব্লিউটিসি ফেরি সার্ভিসের টিকিট বিক্রির দায়িত্বে থাকা কাজিরহাট ঘাট এলাকার ইজারাদারের প্রতিনিধি পল্লব হোসেন দাবি করেন, ভাড়া এক টাকাও বেশি নেওয়া হচ্ছে না। ঘাটে ১২ জন টিকিট বিক্রেতা রয়েছেন এবং তারা সরকার নির্ধারিত ২৫ টাকা করেই আদায় করছেন।
নগরবাড়ী নৌপুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ পুলিশ পরিদর্শক জাহাঙ্গীর হোসেন খান বলেন, ‘বেশি ভাড়া নেওয়ার অভিযোগ আমাদের কাছেও এসেছে। অভিযোগ পেয়েই ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে বিষয়টি জানিয়েছি। আর নিরাপদে ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে যাত্রীরা যাতে ফেরিতে উঠতে ও নামতে পারে সে ব্যাপারে আমরা আন্তরিকভাবে কাজ করে যাচ্ছি।’
বিআইডব্লিউটিসির আরিচা কার্যালয়ের উপমহাব্যবস্থাপক জিল্লুর রহমান বলেন, ‘গত মঙ্গলবারের (১৮ মে) আগ পর্যন্ত আমাদের চারটি ফেরি পালা করে কাজীরহাট-আরিচা নৌপথে চলত। কিন্তু যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে একটি ফেরি ডকে পাঠানোয় এখন তিনটি ফেরি চলছে। এতে ফেরি কমে যাওয়ায় ফেরিগুলোতে চাপ বেড়েছে। মেরামতের জন্য পাঠানো ফেরিটি ফিরে না এলে আপাতত ফেরি বাড়ানোর আর কোনো উপায় নেই। ভাড়া বেশি নেওয়ার ব্যাপারে বিচ্ছিন্ন কিছু অভিযোগ পেয়ে আমরা তাদের (ইজারাদার) নিষেধ করে দিয়েছি।’