কোন মিস্ত্রি নাও বানাইছে...

বর্ষা মৌসুমের শুরুতেই পাবনা বেড়া ও সুজানগর উপজেলার পদ্মা-যমুনা ও হুরাসাগর এলাকায় ভারি বর্ষণ ও বৃষ্টিতে ব্যাপক পানি বাড়ছে। সঙ্গে সঙ্গে এ এলাকায় নতুন নৌকা তৈরি ও আগের পুরাতন নৌকা মেরামতের কাজ শুরু হয়েছে। ফলে স্থানীয় নৌ-কারিগররা ব্যস্ত সময় পার করছেন।
বর্ষা মৌসুমের কিছুটা আগেই নদীর পানি থই থই করছে। তাই নৌকা ব্যবসার সঙ্গে জড়িতরা আগাম প্রস্তুতি নেওয়ায় মিস্ত্রীদের কদরও বেড়েছে।
স্থানীয় সূত্র জানায়, ছয়টি নদী ও অর্ধশতাধিক বিলবেষ্টিত পাবনার বেড়া ও সুজানগর উপজেলার রয়েছে অর্ধশতাধিক চরাঞ্চল। তার মধ্যে প্রায় বাইশটি চরে রয়েছে মানুষের বসবাস। কয়েক হাজার পরিবারের বসবাস এসব চরে শুকনো মৌসুমে যোগাযোগের জন্য পায়ে হাঁটার পথ থাকলেও বর্ষা মৌসুমে তা একেবারেই থাকে না। জীবন ও জীবিকার জন্য নৌকা যেন নিত্য দিনকার অপরিহার্য জিনিস। প্রতিটি গ্রাম প্রতিটি বাড়ি যেন একেকটি আলাদা আলাদা দ্বীপ। তাই বর্ষা মৌসুমে যোগাযোগের জন্য নৌকাই একমাত্র ভরসা। এখানকার প্রতিটি পরিবারেই রয়েছে একটি করে নৌকা। এসব নৌকাই তাদের চলাচলের একমাত্র ভরসা। করোনা পরিস্থিতির কারণে ছেলেমেয়েদের স্কুলে যাওয়াআসা বন্ধ থাকলেও জীবন জীবিকার জন্য বা জরুরি প্রয়োজনে হাসপাতালে পৌঁছানো সব কাজেই প্রয়োজন হয় নৌকার।
তাছাড়া মাছ ধরা তো আছেই। তাই এ মৌসুমে নৌকা কেনা ও পুরাতন নৌকা মেরামতের ধুম পড়ে যায় বেড়া ও সুজানগর উপজেলায়। এই দুটি উপজেলার ১১টি ইউনিয়নেই নৌকার ব্যবহার হয়। তার মধ্যে হাটুরিয়া-নাকালিয়া ইউনিয়ন, কৈটলা, নতুন ভারেঙ্গা, পুরান ভারেঙ্গা, নগরবাড়ী, রূপপুর, ঢালারচর, নাজিরগঞ্জ সাতবাড়িয়া এসব ইউনিয়নে সবচেয়ে বেশি ব্যাবহার হয়।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, এরই মধ্যে চরগুলোর বেশিরভাগ এলাকা ডুবে গেছে। বেড়া উপজেলার নাকালিয়া বাজার সংলগ্ন যমুনা নদীর পারে পুরাতন নৌকা মেরামত করতে ব্যস্ত সময় পার করছে নৌকা কারিগররা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এ উপজেলায় প্রায় ২৫ থেকে ৩০টি কারখানায় নৌকা তৈরি হয়। যে সমস্ত নৌকা ব্যবহারের একেবারেই অনুপযোগী সেগুলোর কাঠ দিয়ে তৈরি করছে চৌকি। নৌকার কাঠের তৈরি চৌকি খুব টেকসই হওয়ায় এর চাহিদা ও দাম বেশি।
এ ব্যাপারে ফজলাল মিস্ত্রী এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘বর্ষা আসার আগেই প্রায় সব নৌকাই ঠিকঠাক করে আলকাতরা দেওয়া হয়। আর একেবারেই ভাঙাচোরা নৌকার কাঠ দিয়ে আমরা চৌকি বানিয়ে বিক্রি করি। তিন হাজার থেকে পাঁচ হাজার টাকার চৌকি এখানে পাওযা যায়। এসব চৌকি ৫০ থেকে ৬০ বছরেও ঘুনে ধরে না, নষ্টও হয় না।’
উপজেলার আমিনপুর বাজার বাসস্ট্যান্ডের আশরাফুল ইসলামের কারখানায় দেখা যায় নৌকা তৈরির ব্যস্ততা। তাঁর পাঁচটি কারখানায় ২০ জন মিস্ত্রী কাজ করছে। তৈরি নৌকাগুলো সারিসারি রাখা হয়েছে। আর নিজে ব্যস্ত নতুন নৌকা তৈরিতে। তাঁর কাছ থেকে জানা যায় কম দামের নৌকা তৈরিতে জল কড়ই, ডেম্বুল, কদম ইত্যাদি কাঠ ব্যবহার করা হয়। যার দাম পরে দুই হাজার ৫০০ থেকে সাইজ অনুসারে ছয় হাজার টাকার নৌকা তৈরি হচ্ছে। আর প্লেনসিটের তৈরি নৌকা আট হাজার টাকা থেকে ১৫ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়।’
তবে এবার করোনার জন্য এনজিও বন্ধ থাকায় টাকার অভাবে বেশি করে কাঠ কিনে নৌকা বানাতে পারেনি বলে জানান তিনি।
নৌকা কিনতে আসা চরনাগদাহ চরের বাসিন্দা শেখ আলী এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘দুই সপ্তাহ আগেই নৌকা কেনার দরকার আছিল। এহন না কিনে আর পারছি না। গরুর ঘাস কাটা, মাছ ধরা ও পারাপারের জন্য নৌকা কিনতে আসছি। নৌকা ছাড়া বর্ষায় আমরা অচল।’
পাবনার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক শাহেদ পারভেজ বলেন, ‘নদীবেষ্টিত মানুষের অন্যতম বাহন নৌকা। পাবনার পদ্মা ও যমুনা তীরবর্তী এলাকায় এখন নৌকা তৈরির ধুম পড়েছে। তাদের কীভাবে সহায়তা করা যায় তা নিয়ে প্রশাসন কাজ করছে।