কোয়ারেন্টিন করা হবে শুনেই বাসায় তালা মেরে হাওয়া

কোয়ারেন্টিন করা হবে শোনেই বাসায় তালা দিয়ে পালিয়েছেন সিলেটের শহীদ শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যাওয়া সেই নারীর স্বজনরা। দেশে ফেরা লন্ডন প্রবাসী ওই নারীর দাফন হয় পুলিশ পাহারায়। দাফন শেষে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ওই নারীর বাসায় গিয়ে দেখেন সেখানে তালা ঝুলছে।
আজ রোববার বিকেলে নগরীর শামীমাবাদ এলাকায় ওই নারীর বাসায় পুলিশ নিয়ে যান জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের একজন ম্যাজিস্ট্রেট। সেখানে গিয়ে তাঁরা কাউকে পাননি। দরজা তালাবদ্ধ দেখতে পান।
ওই নারীর বয়স ছিল ৬১ বছর। গত ৪ মার্চ যুক্তরাজ্য থেকে দেশে ফেরেন। করোনাভাইরাসের উপসর্গ দেখা দেওয়ায় গত ২০ মার্চ তাঁকে শহীদ শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতালের আইসোলেশনে রাখা হয়। গতকাল শনিবার দিবাগত রাত সাড়ে ৩টার দিকে ওই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।
দেশে করোনাভাইরাস সংক্রমনের পর সিলেটের ওই হাসপাতালটিকে আইসোলেশন সেন্টার হিসেবে ঘোষণা করা হয়। জ্বর, সর্দি, কাশি ও শ্বাসকষ্টতে ভোগা ওই নারীর অবস্থার অবনতি হলে তাঁকে আইসোলেশনে নেওয়া হয়। আজ রোববার সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) দল সিলেটে গিয়ে করোনাভাইরাস পরীক্ষার জন্য তাঁর রক্তের নমুনা সংগ্রহের কথা ছিল। তবে তার আগেই তিনি মারা যান।
দুপুরে সংক্রমণ বিধি মেনে সিলেটের মানিক পীর গোরস্থানে তাঁর দাফন করা হয়। এর পরই সিভিল সার্জন ঘোষণা দেন, ওই নারীর স্বজন ও তাঁর কাছাকাছি আসা সবাইকে কোয়ারেন্টিন করা হবে। এই ঘোষণার পরই বাসায় তালা দিয়ে পালিয়েছেন মারা যাওয়া সেই নারীর স্বজনরা।
সিলেটের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবুল কালাম বলেন, ‘বিকেলে পুলিশ নিয়ে আমাদের একজন ম্যাজিস্ট্রেট নগরীর শামীমাবাদে ওই নারীর বাসায় গিয়েছিলেন। তবে বাসায় গিয়ে তাঁরা কাউকে পাননি। দরজা তালাবদ্ধ ছিল। তবে ওই নারীর একজন স্বজনের সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথা বলে সবাইকে বাসায় আসতে বলা হয়েছে। আমরা পরে আবার গিয়ে খোঁজ নেব।’
নগরীর কোতয়ালি থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) সৌমেন মৈত্র বলেন, ‘ম্যাজিস্ট্রেটের সাথে পুলিশের একটি দল ওই বাসায় যায়। তবে বাসায় কাউকে পাওয়া যায়নি।’
শামীমাবাদ এলাকার অবস্থান সিলেট সিটি করপোরেশনের ১০ নং ওয়ার্ডে। ওই ওয়ার্ডের কাউন্সিলর তারেক উদ্দিন তাজ বলেন, ‘মারা যাওয়া নারীর মূল বাড়ি সুনামগঞ্জ জেলার জগন্নাথপুরে। তিনি শামীমাবাদে ভাড়া থাকতেন। স্বামীর সাথে দেশে এসেছেন তিনি। তাঁদের সন্তানরা যুক্তরাজ্যে রয়েছেন। এই বাসায় তাদের নাতি সম্পর্কিত আরেকজন স্বজন থাকেন। তবে সদ্য যুক্তরাজ্য থেকে ফেরায় প্রতিবেশী কারো সাথে তাদের তেমন কোনো সখ্য ছিল না। দেশে আসার পর তিনি জগন্নাথপুরে গ্রামের বাড়িতেও কিছুদিন ছিলেন বলে শুনেছি।’
রোববার দুপুরে নগরীর মানিকপীর গোরস্তানে কড়া নিরাপত্তার সাথে দাফন সম্পন্ন হয়। এ সময় সিলেটের সিভিল সার্জন ডা. প্রেমানন্দ মণ্ডলসহ পুলিশের কয়েকজন সদস্য উপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়া মারা যাওয়া নারীরও একজন স্বজন সেখানে ছিলেন। দাফন শেষে সিভিল সার্জন প্রেমানন্দন মণ্ডল বলেন, ‘মৃত নারী নভেল করোনাভাইরাসে (কোভিড-১৯) আক্রান্ত কি না তা নিশ্চিত হতে তার মুখের লালার নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে।’ তিনি আরো বলেন, ‘ঝুঁকি এড়াতে ওই নারীর স্বজন ও তার কাছাকাছি আসা সবাইকে কোয়ারেন্টিন করা হবে। তার গ্রামের বাড়ির স্বজনদেরও কোয়ারেন্টিন করা হবে। সিভিল সার্জনের এই ঘোষণা শোনেই বাসায় তালা দিয়ে পালিয়ে যান ওই নারীর স্বজনরা।’
মারা যাওয়া নারীর পরিবারকে বাধ্যতামূলক হোম কোয়ারেন্টিনে থাকতে বলা হলেও শামীমাবাদ এলাকাকে লকডাউন করার সিদ্ধান্ত হয়নি বলে জানিয়েছেন সিলেটের জেলা প্রশাসক কাজী এমদাদুল ইসলাম।