ধানমন্ডি থানার মামলায় ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ইভ্যালির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মো. রাসেল এবং তাঁর স্ত্রী প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান শামীমা নাসরিনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ডের আবেদন করা হয়েছে।

গত রোববার এক ব্যবসায়ী বাদী হয়ে ৩৫ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ এনে রাসেল-শামীমাসহ সাত-আটজনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। আজ মঙ্গলবার সেই মামলায় রাসেল ও শামীমাকে সাত দিন করে রিমান্ডের আবেদন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট থানার সাধারণ নিবন্ধন কর্মকর্তা (জিআরও) মুন্সী মোহাম্মদ কামরুল।

জিআরও এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘এরই মধ্যে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দুই আসামিকে এই মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে সাত দিনের রিমান্ডের আবেদন করেছেন। ঢাকার অতিরিক্ত মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট হাসিবুল হকের আদালতে রিমান্ডের শুনানি হবে।’

গত বৃহস্পতিবার বিকেলে মো. রাসেল এবং তাঁর স্ত্রী শামীমা নাসরিনকে রাজধানীর মোহাম্মদপুরের স্যার সৈয়দ রোডের বাসা থেকে গ্রেপ্তার করে র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব)।

এর আগের দিন বুধবার দিবাগত রাতে রাজধানীর গুলশান থানায় একজন গ্রাহক রাসেল ও শামীমা নাসরিনের বিরুদ্ধে প্রায় সোয়া তিন লাখ টাকা প্রতারণা, আত্মসাৎ ও হত্যার হুমকির অভিযোগে মামলা করেন। এর পরই এই অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।

ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আতিকুল ইসলাম গত শুক্রবার গুলশান থানার মামলায় দুজনের তিন দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেছিলেন। সেই রিমান্ড আজ শেষ হচ্ছে। দুপুরের পর তাদের আদালতে হাজির করা হবে বলে জানান সংশ্লিষ্ট থানার সাধারণ নিবন্ধন কর্মকর্তা (জিআরও) মো. আলমগীর হোসেন।

গুলশান থানার মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ওহিদুল ইসলাম আজ দুপুরে এনটিভি অনলাইনকে বলেন, আসামিদের আদালতে পাঠানো হয়েছে। নতুন করে রিমান্ড আবেদন করা হয়নি। তবে তাদের কারাগারে আটক রাখার আবেদন করা হয়েছে।

ইভ্যালির সিইও মো. রাসেল এবং তাঁর স্ত্রী প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান শামীমা নাসরিনকে গ্রেপ্তারের পর এক ব্রিফিংয়ে র‍্যাবের পক্ষ থেকে বলা হয়, ‘দেশি বা আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের কাছে দায়সহ প্রতিষ্ঠানটি বিক্রি অথবা দায় মেটাতে না পারলে প্রতিষ্ঠানটি দেউলিয়া ঘোষণার পরিকল্পনা নিয়েছিলেন সিইও রাসেল।’ র‍্যাবের লিগাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য জানিয়েছেন।

খন্দকার আল মঈন আরও বলেন, ‘রাসেল জানিয়েছেন, তিনি পরিকল্পিতভাবে এই ব্যবসাটি করে আসছিলেন। এটি পরিবার নিয়ন্ত্রিত ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান ছিল। প্রতিষ্ঠানের গঠনতন্ত্রে স্বচ্ছতা ছিল না। তা ছাড়া প্রতিষ্ঠানে কোনো জবাবদিহিতাও ছিল না। ফলে ক্রমান্বয়ে প্রতিষ্ঠানটির দায় বৃদ্ধি পেতে থাকে। এবং বর্তমানে এই অচলাবস্থা সৃষ্টি হয়। ইভ্যালির নেতিবাচক ব্যবসায়িক স্ট্র্যাটেজি উন্মোচিত হওয়ায় অনেক সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান এবং গেটওয়ে প্রতিষ্ঠান ইভ্যালি থেকে সরে এসেছে। ব্যবসায়িক উত্তরণ নিয়ে তিনি নিজেও সন্দিহান ছিলেন। এর উত্তরণের ব্যাপারে তিনি আমাদের কোনো সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা বলতে পারেননি।

র‍্যাব বলছে, ‘ইভ্যালির ব্যবসায়িক অবকাঠামো সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, ভাড়া করা স্পেসে ধানমণ্ডিতে প্রধান কার্যালয় এবং কাস্টমার কেয়ার স্থাপিত হয়। একইভাবে ভাড়া করা স্পেসে আমিন বাজার ও সাভারে দুটি ওয়্যারহাউজ চালু করা হয়। কোম্পানিতে একপর্যায়ে প্রায় দুই হাজার ব্যবস্থাপনা স্টাফ এবং এক হাজার ৭০০ অস্থায়ী কর্মচারী নিয়োগ ছিল, যা ব্যবসায়িক অবনতিতে বর্তমানে যথাক্রমে স্টাফ এক হাজার ৩০০ জনে এবং অস্থায়ী পদে প্রায় ৫০০ জন কর্মচারীতে এসে দাঁড়িয়েছে। কর্মচারীদের একপর্যায়ে মোট মাসিক বেতন বাবদ দেওয়া হতো প্রায় পাঁচ কোটি টাকা; যা বর্তমানে এক দশমিক পাঁচ কোটিতে দাঁড়িয়েছে বলে জানিয়েছেন গ্রেপ্তার দুজন। গত জুন থেকে অনেকের বেতন বকেয়া রয়েছে। তিনি ও তাঁর স্ত্রী পদাধিকারবলে নিজেরা মাসিক পাঁচ লাখ টাকা করে বেতন নিয়ে থাকেন।’