পি কে হালদারের পলায়ন নিয়ে হাইকোর্টের ক্ষোভ
![](http://103.16.74.218/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2020/06/16/hc.jpg)
বহুল আলোচিত প্রশান্ত কুমার হালদারের (পি কে হালদার) বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে না পারায় দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ও বাংলাদেশ ব্যাংকের ভূমিকায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন হাইকোর্ট। আদালত বলেছেন, পি কে হালদার ও তাঁর সহযোগীরা মোটা অঙ্কের টাকা নিয়ে পালিয়েছে। অথচ তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বাংলাদেশ ব্যাংক বা দুদক কিছুই করতে পারল না। বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক প্রতিষ্ঠান সংক্রান্ত বিভাগের দায়িত্বশীল নির্বাহী পরিচালক ও উপপরিচালকেরা পিপলস লিজিংসহ বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে মধু খেয়েছে। পিপলস লিজিংয়ে এত কিছু ঘটে গেল, অথচ তারা কিছুই করেনি। এ সময় আদালত বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক নির্বাহী পরিচালক শাহ আলমকে ‘চোর’ ও ‘ডাকাত’ বলে সম্বোধন করেন। দুদক প্রসঙ্গে আদালত বলেন, পি কে হালদারের বিষয়ে আমরা আদেশ দিলাম সেই কবে। আর, জানুয়ারিতে এসে দুদক বলল, পি কে হালদার পালিয়ে গেছে।
পিএলএফএস লিমিটেড অবসায়ন সংক্রান্ত মামলার শুনানিকালে গতকাল মঙ্গলবার বিচারপতি মুহাম্মদ খুরশীদ আলম সরকারের হাইকোর্টের কোম্পানি বেঞ্চ এ মন্তব্য করেন। এ সময় আদালত বাংলাদেশ ব্যাংক, ঋণগ্রহীতা ও তাঁদের আইনজীবীদের বক্তব্য শোনেন।
পরে আদালত পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত তিনটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানে ‘অনিয়ম-দুর্নীতিতে’ দায়ীদের চিহ্নিত করার পাশাপাশি দায় নিরূপণ করতে কমিটি করে দিয়েছেন।
তিনটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান হলো- বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফাইন্যান্স কোম্পানি লিমিটেড (বিআইএফসি), পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফাইনান্সিয়াল সার্ভিসেস লিমিটেড ও ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যন্ড ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস লিমিটেড।
বাংলাদেশের ব্যাংকের পক্ষ থেকে পাঁচ সদস্যের ‘কারণ উদঘাটন’ (ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং) কমিটির সুপারিশ করা হলে তার সঙ্গে সাবেক সচিব ও একজন বিচারককে যুক্ত করে সাত সদস্যের কমিটি চূড়ান্ত করে দেন হাইকোর্ট। বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর এ কে এম সাজেদুর রহমান খানকে সভাপতি ও বৈদেশিক মুদ্রা পরিদর্শন বিভাগের উপমহাব্যবস্থাপক মো. সারোয়ার হোসেনকে কমিটির সদস্যসচিব করা হয়েছে।
কমিটির সদস্যেরা হলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক এ কে এম ফজলুর রহমান, ফাইন্যান্সিয়াল স্ট্যাবিলিটি ডিপার্টমেন্টের মহাব্যবস্থাপক মো. কবির আহাম্মদ এবং ব্যাংক পরিদর্শন বিভাগ-৪-এর মহাব্যবস্থাপক মো. নুরুল আমীন।
আর আদালত যে দুজনকে কমিটিতে যুক্ত করেছেন, তাঁরা হলেন- সাবেক জেলা ও দায়রা জজ মহিদুল ইসলাম ও সাবেক সচিব নুরুর রহমান।
আদালতে বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার তানজিব উল আলম, ঋণগ্রহীতাদের পক্ষে অ্যাডভোকেট গাজী মোস্তাক আহমেদ এবং পিপলস লিজিং এর সাময়িক অবসায়কের পক্ষে ব্যারিস্টার মেজবাহুর রহমান।
এদিকে, নন-ব্যাংকিং আর্থিক প্রতিষ্ঠান পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস (পিএলএফএস) লিমিটেড যাতে চালু থাকে সেজন্য কী পদক্ষেপ নেওয়া যায়, সে বিষয়ে দুদক চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ ব্যাংকের গর্ভনর ও সিকিউরিটি এক্সচেঞ্জ কমিশনের (এসইসি) চেয়ারম্যানের বক্তব্য শুনবেন হাইকোর্ট। আগামীকাল বৃহস্পতিবার ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে তাঁদের বক্তব্য শুনবেন আদালত।
এর আগে গত ২১ জানুয়ারি এক আদেশে পিপলস লিজিং থেকে পাঁচ লাখ টাকার ওপরে ঋণগ্রহীতাদের মধ্যে যারা খেলাপি হয়েছেন এমন ২৮০ জনকে তলব করেন হাইকোর্ট। তাঁদের মধ্যে ১৪৩ জনকে হাজির হতে বলা হয়। এই আদেশে নির্ধারিত দিনে ৫১ জন হাজির হন। আর, ৩২ জন সময় চেয়ে আদালতে আবেদন করেন। ১৪৩ জনের মধ্যে বাকি যাঁরা হাজির হননি তাঁদের দুই সপ্তাহের আদালতে সশরীরে হাজির হতে বলা হয়েছে। অন্যথায় তাঁদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হবে বলে আদালত বলেছেন। এ ছাড়া ১৩৭ জনের হাজিরের জন্য আগামীকাল দিন ধার্য রয়েছে।
পিপলস লিজিংয়েল সাময়িক অবসায়ক (প্রবেশনাল লিক্যুডেটর) মো. আসাদুজ্জামান খানের করা এক আবেদনে পিপলস লিজিং-এর প্রায় ৫০০ জনের বেশি ঋণগ্রহীতার একটি তালিকা দাখিল করা হয়। এই তালিকা দাখিলের পর পাঁচ লাখ টাকা এবং তার ওপরে নেওয়া ঋণগ্রহীতাদের মধ্যে যারা খেলাপি হয়েছে, এমন ২৮০ জনকে শোকজ করেন ও তাদের হাজির হয়ে ব্যাখ্যা দিতে নির্দেশ দেন।