ফ্রিল্যান্সিংয়ে ঝুঁকছে ভৈরবের শত শত তরুণ-তরুণী
![](http://103.16.74.218/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2021/11/22/bhairab-freelancing-pic-1.jpg)
কিশোরগঞ্জের ভৈরব উপজেলার শত শত তরুণ-তরুণী ফ্রিল্যান্সিংয়ে ঝুঁকছে। আয় করছে মাসে লাখ টাকা। উচ্চ শিক্ষিত, কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, গৃহিণীরা নিজেদের ঘরে বসে একক বা গ্রুপ ভিত্তিতে বিভিন্ন কাজের মাধ্যমে আয় করছে। ফলে নিজেদের ব্যক্তিগত আর্থিক স্বচ্ছলতার পাশাপাশি পারিবারিক ও সামাজিক উন্নয়নেও ভূমিকা রাখছে তারা।
এ ছড়াও কোনো কোনো ফ্রিল্যান্সার স্থানীয় অন্য উদ্যোক্তাদের সঙ্গে নিয়ে গড়ে তুলেছে ‘ফ্রিল্যান্সার ট্রেনিং সেন্টার’। এসব সেন্টারে শত শত শিক্ষার্থীরা পছন্দ করা কাজের প্রশিক্ষণ নিয়ে ঢুকছে বিশ্ববাজারে। এ ছাড়াও উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে ফ্রিল্যান্সিং প্রশিক্ষণ কর্মশালার আয়োজন করা হয়েছে বলে জানালেন ভৈরব উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) লুবনা ফারজানা।
ভৈরব পৌর শহরের কালিপুর উত্তর পাড়ার ফ্রিল্যান্সার মোয়াজ্জেম হোসেন মঞ্জু। তিনি সরকারি তিতুমীর কলেজ থেকে প্রথম শ্রেণিতে অনার্স-মাস্টার্স সম্পন্ন করেছেন। ২০১০ সাল থেকে তিনি ফ্রিল্যান্সিং শুরু করেন। মঞ্জুর টিমের সদস্যদের মাঝে রয়েছেন তাঁর স্ত্রী, তিন ভাবি এবং দুই ভাতিজা। তিনি বলেন, ‘আর্থিকভাবে নিজের সাফল্যের জন্য ফ্রিল্যান্সিং একটি সম্ভাবনাময় খাত। তবে এজন্য ফ্রিল্যান্সারকে দক্ষ হতে হবে। যেহেতু এটি একটি বিশ্ববাজার, তাই বিভিন্ন দেশের কর্মীদের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে কাজ নিতে হয়। তাই যিনি ঠিক সময়ে উত্তম কাজটি করতে পারবেন, তিনিই পরবর্তীতে কাজ পাবেন।’
![](http://103.16.74.218/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2021/11/22/bhairab-freelancing-pic-2.jpg)
ফজলে রাব্বি। শহরের কমলপুর এলাকার ছেলে। স্থানীয় হাজী আসমত কলেজের অনার্স চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী। শুরুটা পাঁচ বছর আগে। তিনি কাজ করছেন টুডি অ্যানিমেশন অ্যান্ড মোশন গ্রাফিক্স, ভিডিও মেকিং অ্যান্ড এডিটিং, টি শার্ট ডিজাইন অ্যান্ড সেলিংসহ ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের কিছু সেকশন নিয়ে। তিনি জানান, ভৈরবে যারা ফ্রিল্যান্সিংয়ে জড়িত আছেন, তারা একটা গ্রুপ তৈরি করেছেন। এখানে ১০০ জন মেম্বার আছেন। ভৈরবে যারা বেশ কয়েক বছর ধরে এই কাজ করছেন বা সফলতা পেয়েছেন এমন অনেকেই ওই গ্রুপের সদস্য। নিজেদের মধ্যে নেটওয়ার্ক তৈরি করে গ্রুপ ভিত্তিক কাজ করা এবং স্থানীয়ভাবে কমিউনিটি বিল্ডআপ করার জন্য এই গ্রুপটি তৈরি করেছেন তারা। কমিউনিটির মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে নিজেদের মধ্যে লিঙ্কআপ তৈরি করা। একজন আরেকজনকে সাহায্য করে একটা সফল ফ্রিল্যান্সার কমিউনিটি তৈরি করা। যারা নতুন তাদেরকে বিভিন্ন নির্দেশনা দেওয়া এবং একসঙ্গে সবাই মিলে এগিয়ে যাওয়া।
শহরের আমলাপাড়া এলাকার মেয়ে সাদিয়া অনামিকা। পড়ছেন সরকারি জিল্লুর রহমান মহিলা কলেজে। করোনাকালে কলেজ বন্ধ থাকায় ২০২০ সালের শুরুতে অনলাইনে তিনি প্রশিক্ষণ নেন গ্রাফিক্স ডিজাইনের উপর। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুককে ভিত্তি করে তিনি কাজ করছেন।
এদিকে ফ্রিল্যান্সিংয়ের বিভিন্ন কাজ শেখাতে ভৈরবে গড়ে উঠেছে বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান। এসব প্রতিষ্ঠানে প্রতি ব্যাচে শতাধিক তরুণ-তরুণী কাজ শিখছেন।
এমন একজন উদ্যোক্তা ও প্রশিক্ষক মো. সোহাগ মিয়া জানান, একজন শিক্ষার্থী একাডেমিক শিক্ষার পাশাপাশি প্রযুক্তি বিষয়ে শিক্ষা গ্রহণ করে নিজেকে দক্ষ হিসেবে গড়ে তুলতে পারে। বর্তমানে যে যতো বেশি প্রযুক্তি বিষয়ে দক্ষ, সে ততো বেশি নিজেকে অনেক দূর এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে।
![](http://103.16.74.218/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2021/11/22/bhairab-freelancing-pic-4.jpg)
ফ্রিল্যান্সিং একটি মুক্ত পেশা হিসেবে উল্লেখ করে সোহাগ জানান, ঘরে বসে নিজের ইচ্ছে মতো আয় করার একটি উত্তম পথ ফ্রিল্যান্সিং। যে কোনো একটি বিষয়ে ভালোভাবে প্রশিক্ষণ নিয়ে একজন মানুষ নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারেন।
ইউএসএ ভিত্তিক ই-কর্মাস প্রতিষ্ঠান চিপ এর বাংলাদেশের কান্ট্রি ম্যানেজার স্বরূপ আমিন। তিনি একটি প্রশিক্ষন প্রতিষ্ঠানের পরামর্শক। তিনি জানান, ফ্রিল্যান্সিং একটি সম্ভাবনাময় কর্মক্ষেত্র। একজন দক্ষ ফ্রিল্যান্সার ইচ্ছে করলে এক রাতেই ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা আয় করতে পারেন। সে ক্ষেত্রে তাকে ভালো স্কিলড হ্যান্ড হতে হবে।
এ বিষয়ে ইউএনও লুবনা ফারজানা বলেন, ‘বিশাল এই বিশ্ববাজারে প্রবেশ করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করছে ফ্রিল্যান্সাররা। নতুনদের প্রশিক্ষিত করতে বেশ কয়েকটি প্রশিক্ষণ সেন্টারও গড়ে উঠেছে। সরকারিভাবে এখানকার ছেলে-মেয়েদের প্রশিক্ষণ দিতে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।’
ডাটা এন্ট্রি, লিড জেনারেশন, গ্রাফিক্স ডিজাইন, ওয়েব ডিজাইন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট, মোবাইল অ্যাপ ডিজাইন, এসইও, ডিজিটাল মার্কেটিং, ই-কমার্স ডিজাইন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট, টুডি এনিমেশন অ্যান্ড মোশন গ্রাফিক্স, ভিডিও মেকিং অ্যান্ড এডিটিং ইত্যাদি কাজ জানা থাকা যেকোনো একজন ফ্রিল্যান্সার ফ্রিল্যান্সিং শুরু করতে পারেন। তিনি নেটে সার্চ করে মার্কেট প্লেসে গিয়ে বিভিন্ন ফ্রিল্যান্সিং সাইটে ঢুকে কাজ নিতে পারেন।