বিএনপির নেতৃত্বে আন্দোলনে থাকবে কল্যাণ পার্টি

বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট সক্রিয় থাকুক বা না থাকুক কল্যাণ পার্টি বিএনপির নেতৃত্বেই আন্দোলনে অংশগ্রহণ করবে। আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে রাজধানীর গুলশানে বিএনপির সঙ্গে মতবিনিময় শেষে এ প্রতিশ্রুতি দেন দলটির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম বীরপ্রতীক।
এসময় আন্দোলনের সময় জরুরিভিত্তিতে সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে একটি কাঠামো তৈরি করার জন্য বিএনপিকে আহ্বান জানান তিনি।
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলামের সঙ্গে মতবিনিময় করেন কল্যাণ পার্টির ১১ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল। আজ বৃহস্পতিবার বিকেল ৪টার দিকে বৈঠকটি শুরু হয়ে ৫টায় শেষ হয়।
বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের সামনে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল বলেন, ‘বর্তমান সরকার জোর করে ক্ষমতা দখল করে আছে। তাদের ক্ষমতা থেকে সরাতে এবং দুঃসহ পরিস্থিতি থেকে পরিত্রাণ পেতে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর ঐক্যের জন্য কাজ করছে বিএনপি। আজকে দলের ধারাবাহিক মতবিনিময়ের অংশ হিসেবে কল্যাণ পার্টির সঙ্গে সংলাপ করেছে বিএনপি।’
আলোচনার বিষয়বস্তু সম্পর্কে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি, বিদেশে নির্বাসিত তারেক রহমানে দেশে ফিরিয়ে আনা ও ৩৫ লাখ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার আমাদের সবচেয়ে বড় দাবি।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘যারা আন্দোলনে অংশগ্রহণ করবেন, তাদের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে একটি সরকার গঠন করা হবে। পরবর্তীতে আলোচনার ভিত্তিতেই রাষ্ট্রের সমস্যাগুলোকে সমাধান করতে হবে।’
বৈঠকে দ্বিতীয় পর্যায়ে আলোচনার বিষয়বস্তু সম্পর্কে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘রাষ্ট্রের যেসব প্রতিষ্ঠানগুলোকে ধ্বংস করে ফেলা হয়েছে, বিচার বিভাগ, সংবিধানসহ অন্যান্য বিষয়গুলোকে যেসব সংস্কার দরকার, সে সংস্কারগুলো মতৈক্যের ভিত্তিতে আমরা গ্রহণ করব।’
বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘এই সরকারের বিরুদ্ধে কার্যকর আন্দোলন গড়ে তোলার বিষয়ে আমাদের সঙ্গে কল্যাণ পার্টি একমত হয়েছি। আন্দোলন গড়ে তুলে সরকারকে পদত্যাগে বাধ্য করতে হবে।’
এরপর মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম বীর প্রতীক বলেন, ‘ইতোমধ্যে বিএনপি মতবিনিময় শুরু করেছে। আমরা দশটি বছর একসঙ্গে চলছি। আমরা আপ্রাণ চেষ্টা করেছি বিএনপির অনুকূলে আন্দোলনে ও বুদ্ধিবৃত্তিক জায়গায় থাকতে।’
সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম বলেন, ‘আজকেও আমরা বিএনপিকে প্রস্তাব দিয়েছি। বিএনপির মহাসচিব যেমনটি বলেছেন; আমরা একমত হয়েছি বর্তমান একনায়কতান্ত্রিক সরকারকে সরানো—এটা রাজনীতিতে প্রধান অগ্রাধিকার। এটা বাস্তবায়নের জন্য করণীয় হচ্ছে সকলকে সঙ্গে নিয়ে আন্দোলন গড়ে তোলা। কল্যাণ পার্টি প্রস্তাবে বলেছে, যদি ২০ দলীয় জোটকে সক্রিয় করা সম্ভব না হয়, যেকোনো কারণে, তাহলে আমরা যুগপৎ আন্দোলন করতে প্রস্তুত। এটাও বলেছি, জোটকে সক্রিয় করার কাজে অথবা জোটের মধ্যে বিভিন্ন আরও তলগুলোকে একত্রিত করতে আমরা সহযোগিতা করতে প্রস্তুত।’
কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান উল্লেখ করেন, আমরা নীতিগতভাবে একমত হয়েছি, আগামী নির্বাচনে নতুন সংসদ যখন হবে, আগে থেকেই জনগণের কাছে আমরা ওয়াদাবদ্ধ থাকব—সংবিধান সংস্কার করতে হবে, প্রয়োজনীয় আরও সংস্কার করতে হবে।’
সৈয়দ মুহাম্মদ ইব্রাহিমের পরামর্শ, ‘আন্দোলনের পরবর্তীতে জনগণকে সম্পৃক্ত করতে, বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মকে সম্পৃক্ত করতে।’ তারমধ্যে মেধাবী তরুণদের নির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়ার জন্যও পরামর্শ দেন তিনি।
কল্যাণ পার্টি প্রতিনিধি দলে ছিলেন স্থায়ী কমিটির সদস্য মোহাম্মদ ইলিয়াস, ফোরকান ইব্রাহিম, মহাসচিব আব্দুল আউয়াল মামুন, অতিরিক্ত মহাসচিব নুরুল কবির পিন্টু, ভাইস-চেয়ারম্যান আলী হোসাইন ফরায়েজী, সভাপতি ঢাকা মহানগর দক্ষিণ মাহমুদ খান, যুগ্ম মহাসচিব রাশেদ ফেরদৌস সোহেল মোল্লা, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ফয়সাল মেহেদী, সাংগঠনিক সম্পাদক ইব্রাহিম খান সাদাত, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক জাহিদ আবেদিন।
এর আগে গত ২৪ মে মাহমুদুর রহমান মান্নার নেতৃত্বাধীন নাগরিক ঐক্য, ২৭ মে জোটের শরিক লেবার পার্টির সঙ্গে আলোচনা করেছেন বিএনপি নেতারা। এরপর মঙ্গলবার (৩১ মে) গণসংহতি আন্দোলন ও গতকাল বুধবার বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সঙ্গে মতবিনিময় করেন তারা।