ভ্যাকসিন ছাড়া করোনা নির্মূল দুরূহ : স্বাস্থ্যমন্ত্রী
স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক, এমপি বলেছেন, ভ্যাকসিন প্রয়োগ করা ছাড়া এই করোনাভাইরাস দেশ থেকে একেবারে নির্মূল করা দুরূহ কাজ। ইতোপূর্বের ইতিহাসও একই কথা বলে। ভ্যাকসিন প্রয়োগের ফলেই এর আগে পৃথিবী থেকে পোলিও, প্লেগসহ অন্যান্য মহামারিগুলো বিদায় নিয়েছে।
আজ মঙ্গলবার রাজধানীর র্যাডিসন হোটেলের ব্লু হলে ‘বিশ্ব এনটিডি দিবস উদযাপন’ উপলক্ষে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও অ্যাসেন্ড বাংলাদেশ আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, ভ্যাকসিন প্রয়োগে দেশে এখন কিছু মানুষ বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে। এই বিভ্রান্তির ফলে শুরুতে মানুষের মনে ভয়ের শঙ্কা থাকলেও এখন ধীরে ধীরে তা কেটে যাচ্ছে। কারণ, ভ্যাকসিনের প্রথম দুই দিন প্রয়োগের ফলে দেখা যাচ্ছে, এখনো ভ্যাকসিন গ্রহণকারী কারো শরীরে তেমন কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা যায়নি। সরকার আগে থেকেই বলেছে এই ভ্যাকসিন নিরাপদ ও ঝুঁকিমুক্ত। তবে, ব্যাপক মানুষের শরীরে প্রয়োগের পরে দুই একজনের দেহে সামান্য পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা যেতেও পারে। কারণ, পৃথিবীর সব ভ্যাকসিনই এ রকম স্বল্পমাত্রায় মৃদু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। তবে, কোনোভাবেই ভ্যাকসিন গ্রহণ করা থেকে মানুষকে বিরত থাকতে উৎসাহ দেওয়া যাবে না। এতে করোনাভাইরাস থেকে দেশকে মুক্ত করতে আরো বেশি সময় লাগবে।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী আজকের দিবসটির তাৎপর্য তুলে ধরে আরো বলেন, ‘বিশ্বে বর্তমানে ১৭০ কোটি মানুষ এনটিডিতে আক্রান্ত। বর্তমানে বিশ্ব ২০টি রোগকে এনটিডি হিসেবে আখ্যায়িত করেছে। এর মধ্যে বাংলাদেশ ১৩টি রোগকে দেশ থেকে নির্মূল করতে সক্ষম হয়েছে। অবশিষ্ট সাতটির মধ্যে জলাতঙ্ক, কালাজ্বর, কুষ্ঠরোগ দেশ থেকে বিদায়ের পথে রয়েছে। এগুলোর মধ্যে দেশে বর্তমানে সর্প দংশনে বছরে প্রায় সাত লাখ মানুষ আক্রান্ত হয় এবং বছরে প্রায় ছয় হাজার মানুষের মৃত্যু হয়। এটিকে সরকার বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছে। অধিক আক্রান্ত স্থানে বেশি করে অ্যান্টিভেনম পাঠানো হয়েছে। আশা করা যায়, ২০২৩ সালের মধ্যেই বাকি রোগগুলো থেকেও দেশ মুক্ত হতে সক্ষম হবে।’
সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিব মো. আবদুল মান্নান বলেন, ‘ফেব্রুয়ারি থেকে সারা দেশে একযোগে করোনা ভ্যাকসিন দেওয়া হবে। সরকারের টাকায় কেনা একটি ভ্যাকসিন যেন অপচয় বা নষ্ট না হয় সে ব্যাপারে কঠোর নজরদারি রাখা হচ্ছে।’
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম বলেন, ‘এই করোনা মহামারিতেও এনটিডি রোধে সরকার যে ভূমিকা রেখে চলেছে এতে আগামী ২০২৩ সালের মধ্যেই অন্তত দুটি এনটিডি রোগকে দেশ থেকে নির্মূল করা সম্ভব হবে।’
রোগ নিয়ন্ত্রণ ও সংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার লাইন ডাইরেক্টর অধ্যাপক ডা. নাজমূল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য দেন বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, স্বাচিপের সভাপতি অধ্যাপক ডা. ইকবাল আর্সলান ও মহাসচিব অধ্যাপক ডা. এম এ আজিজ, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বাংলাদেশ প্রতিনিধি বারদান জং রানাসহ অনেকেই।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন এনসিডিসির লাইন ডাইরেক্টর অধ্যাপক ডা. মো. রোবেদ আমিন।