মর্গে পোড়া লাশের গন্ধ, বাইরে স্বজনদের আহাজারি
![](http://103.16.74.218/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2021/07/09/rupgonj_fire-9.jpg)
নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে জুস কারখানায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় নিহত ৫২ জনের মধ্যে আজ ৪৯ জনের লাশ নিয়ে আসা হয়েছে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে। মর্গের ভেতর থেকে পোড়া লাশের গন্ধ ভেসে আসছে। আর মর্গের বাইরে স্বজনদের আহাজারিতে ভারি হয়ে উঠেছে আশপাশের পরিবেশ।
মর্গের ভেতর থরে থরে সাজানো হয়েছে ৪৯টি মরদেহ। পোড়া লাশের গন্ধে ভারি হয়ে উঠেছে সেখানকার বাতাস। এই বাতাস আরও ভারি করে তুলেছে লাশ নিতে আসা স্বজনদের কান্নার আওয়াজ। লাশগুলো এত বেশি পুড়ে গেছে যে, মুখ দেখে চেনার উপায় নেই। ফলে স্বজনরা নিহত ব্যক্তির ছবি নিয়ে হাজির হয়েছে মর্গে।
![](http://103.16.74.218/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2021/07/09/rupgonj_fire-1.jpg)
স্বজনরা নিহত ব্যক্তির ছবি দেখিয়ে পুলিশের কাছে আকুতি জানাচ্ছে লাশটি ফিরে পেতে। কিন্তু লাশ চেনার উপায় তো নেই। সেজন্য পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) স্বজনের ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করছে। ডিএনএ পরীক্ষা করে লাশের সঙ্গে মিললে বুঝিয়ে দেওয়া হবে লাশ।
শুক্রবার বিকেলে ঢামেক মর্গে লাশ নিয়ে আসা হয় নারায়ণগঞ্জ থেকে। পাঁচটি গাড়িতে করে এসব লাশ আনা হয়। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক বাচ্চু মিয়া বলেন, এখন পর্যন্ত মোট ৪৯টি লাশ নিয়ে আসা হয়েছে এখানে। লাশের ময়নাতদন্ত করা হবে।
![](http://103.16.74.218/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2021/07/09/rupgonj_fire-10.jpg)
মর্গের ভেতরে ঢুকে দেখা যায়, আব্দুল্লাহ নামের একজন লাশের প্যাকেট গুনছিলেন। তিনি মর্গের কর্মচারী।
কথা প্রসঙ্গে আব্দুল্লাহ বলছিলেন, ‘লাশগুলো চেনা যাচ্ছে না। সারা শরীর পুড়ে গেছে। এই লাশ চিনতে হলে ডিএনএ পরীক্ষা করতে হবে। লাশ পুড়ে যাওয়াতে প্রচণ্ড গন্ধ বের হচ্ছে। এত বেশি গন্ধ বের হচ্ছে যে, সাধারণ মানুষ এখানে এসে দাঁড়াতে পারবে না।’
![](http://103.16.74.218/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2021/07/09/rupgonj_fire-12.jpg)
লাশের খোঁজে মর্গে এসেছেন মো. আব্বাস, মো. ইউসুফ, ফয়সাল, ফজলু ও ইউসুফ নামের পাঁচজন। তারা পাঁচজনই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটা ওই ভবনের পঞ্চমতলায় কাজ করতেন। ওই তলায় মোট ১৮ জন লাচ্চা সেমাই বানানোর কাজ করতেন। আগুন লাগার পর ১২ জন নিচের দিকে নেমে যান। আর বাকি ছয়জন তালা ভেঙে উঠে যান ছাদে। ওই ছয়জনের পাঁচজন এসেছেন মর্গে। এসেছেন নিচে নেমে যাওয়া ওই ১২ সহকর্মীর লাশ খুঁজতে।
এদের মধ্যে মো. আব্বাস বলেন, ‘আমরা পাঁচজন এসেছি ১২ জনের লাশ খুঁজতে। পুলিশ বলছে, ডিএনএ পরীক্ষা করাতে হবে। ওদের পরিবারের লোকজন আসতেছে এখানে। চোখের সামনেই এতগুলো মানুষের মৃত্যু মেনে নিতে পারছি না। আমরাও মরে যেতে পারতাম। আমরা তালা ভেঙে ছাদে উঠার পর ফায়ার সার্ভিস আমাদেরকে দড়ি দেয়। তারপর আমরা দড়ি বেয়ে নিচে নামি।’
![](http://103.16.74.218/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2021/07/09/rupgonj_fire-3_0.jpg)
নারায়ণগঞ্জ থেকে ঢামেক মর্গে পুত্রবধূ আমেনা বেগমকে খুঁজতে এসেছেন রাহিমা বেগম। তিনি কাঁদতে কাঁদতে বলছিলেন, ‘আমেনার একটি ছেলে রয়েছে চার বছরের। নাম রাফিন হোসেন। রাফিন এখনও জানে না, তার মা মারা গেছে আগুনে পুড়ে। এখন আমি রাফিনকে কী জবাব দেব? আমার ছেলেটাও প্রায় পাগল হয়ে গেছে। আমার বৌমার ভাই এসেছে এখানে ডিএনএর নমুনা দিতে।’ বলতে বলতে আবার কেঁদে উঠেন রাহিমা।
গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে এই কারখানায় অগ্নিকাণ্ড ঘটে। আগুন লাগার পর পরই গোটা ভবনে লেলিহান শিখা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে এবং ফায়ার সার্ভিসের ১৮টি ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ শুরু করে।
![](http://103.16.74.218/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2021/07/09/rupgonj_fire-11.jpg)
আজ শুক্রবার বিকেল পর্যন্ত ৫২ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। এর মধ্যে গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে তিনজন এবং আজ শুক্রবার দুপুরের পর আরও ৪৯ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। এসব লাশ ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।