মেট্রোরেলের দুই মাস : ২৬ মার্চ আরও ৬ স্টেশন চালুর প্রস্তুতি
রাজধানীতে চালু হওয়া স্বপ্নের মেট্রোরেল উদ্বোধনের দুই মাস পূর্ণ হয়েছে আজ মঙ্গলবার (২৮ ফেব্রুয়ারি)। উত্তরা উত্তর দিয়াবাড়ী স্টেশন থেকে কমলাপুর পর্যন্ত মোট ১৬টি স্টেশন মেট্রোরেলের। তবে পরীক্ষামূলকভাবে এখন পর্যন্ত তিনটি স্টেশন চালু হয়েছে। আগামী ২৬ মার্চ আরও ৬টি স্টেশন চালু হওয়ার কথা রয়েছে। সকাল সাড়ে ৮টা থেকে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত মাত্র চার ঘণ্টা চলছে পরীক্ষামূলকভাবে এ রেল। সপ্তাহে মঙ্গলবার চলাচল বন্ধ থাকছে।
সাধারণ যাত্রী নিয়ে সীমিত পর্যায়ে বাণিজ্যিকভাবে ঢাকায় মেট্রোরেলের চলাচল শুরু হয় গত বছরের ২৯ ডিসেম্বর। প্রথমে আগারগাঁও থেকে উত্তরা (উত্তর) স্টেশন পর্যন্ত চালু হলেও এ মাসে মিরপুর-১২ নম্বর বাসস্ট্যান্ডসংলগ্ন মেট্রোরেলের পল্লবী স্টেশন চালু হয়। এখন পর্যন্ত ওই তিনটি স্টেশনেই যাত্রাবিরতি করছে মেট্রোরেল।
ভবনে আটকা শেওড়াপাড়া স্টেশনের নির্মাণ কাজ
আগামী ২৬ মার্চের মধ্যে উত্তরা সেন্টার ও মিরপুর-১০ নম্বর স্টেশন, উত্তরা দক্ষিণ, মিরপুর-১১, কাজীপাড়া ও শেওড়াপাড়া চালু হওয়ার কথা রয়েছে। তবে শেওড়াপাড়া স্টেশনে গিয়ে দেখা যায়, একপাশের সিঁড়ি এখনও তৈরি হয়নি। রাস্তার কোল ঘেঁষে ভবন থাকায় স্টেশন থেকে ওঠা নামার সিঁড়ি নির্মাণ করা যাচ্ছে না। ফুটপাত ঘেঁষে ভবনটিতে সুয়েটার ফ্যাক্টরি রয়েছে। রাস্তার পথ এতটাই সরু এটিতে সিঁড়ির কাজ করা যাচ্ছে না। উভয় রাস্তার মুখে গেট বন্ধ করে রাখা হয়েছে। নিরাপত্তাকর্মীরা পাহারা দিচ্ছেন ব্যবহার বন্ধে। তবে একটি সিঁড়ি নির্মাণের কাজ অসমাপ্ত রয়েছে। পাশে বসে থাকা নিরাপত্তাকর্মী মনিরুল ইমলাম এনটিভি অনলাইনকে বলেন, জায়গা সংকুলান না হওয়ায় কাজ বন্ধ রয়েছে। তবে শুনেছি ভবন মালিকদের ভবন ভাঙার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ এন ছিদ্দিক বলেন, ২০২২ এর শেষে এসে আমরা মেট্রোরেল চালু করেছি। ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে মতিঝিল এবং ২০২৫ সালের জুনে কমলাপুর পর্যন্ত চালু হবে মেট্রোরেল।
শেওড়াপাড়া স্টেশনটির বিষয়ে ভবন মালিকদের নোটিশ করা হয়েছে, ফুটপাত থেকে উভয়পাশে মোট ৬ ফুট রাস্তা ভাঙ্গা হবে। স্টেশনের দুই পাশে ছয় ফুট করে ভেঙে ফেলা হবে। এরপর সমস্যা হবে না।
মেট্রোরেলে মোট ১৬টি স্টেশন হলো- উত্তরা-উত্তর, উত্তরা সেন্টার, উত্তরা দক্ষিণ, পল্লবী, মিরপুর-১১, মিরপুর-১০, কাজীপাড়া, শেওড়াপাড়া, আগারগাঁও, বিজয় সরণি, ফার্মগেট, কারওয়ান বাজার, শাহবাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, সচিবালয়, মতিঝিল ও কমলাপুর।
পুরোপুরি চালুর অপেক্ষায় যাত্রীরা
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ‘মেট্রোরেলের উত্তরা উত্তর স্টেশন থেকে আগারগাঁও স্টেশন পর্যন্ত মানুষ আসা-যাওয়া করছে। দুটি স্টেশনে লাইন ধরে মানুষ টিকেট কাটছে। তবে অফিস খোলার দিনের তুলনায় শুক্র ও শনিবার মানুষ বেশি আসা-যাওয়া করছে।
দায়িত্বরত-কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলে জানা যায়, এখন পর্যন্ত পরীক্ষামূলক চলছে। তাই ৬০ ভাগ বন্ধের দিন মানুষ শখের বশে এবং ৪০ ভাগ মানুষ প্রয়োজনে মেট্রোরেল ভ্রমণ করছে। মেট্রোরেলের চড়া রফিকুল ইসলাম নামের এক যাত্রী এনটিভি অনলাইনকে বলেন, বাচ্চাদের আনন্দ দিতে নিয়ে এসেছি। ট্রেনে উঠে আনন্দ পাচ্ছি। মনে হচ্ছে বিদেশে আছি।
অপর যাত্রী মারুফ বলেন, মতিঝিল পর্যন্ত চালু হলে অফিসে মানুষ যাতায়াত করতে পারবে। তখন ভিড় বাড়বে।’
গত ২৮ ডিসেম্বর মেট্রোরেলের লাইন-৬-এর উত্তরা থেকে কমলাপুর পর্যন্ত ২১ কিলোমিটারে উড়াল রেলপথের মধ্যে উত্তরার (দিয়াবাড়ী) অংশ থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত অংশের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শুরুতে শুধু দুই প্রান্তের (উত্তরা ও আগারগাঁও) স্টেশন থেকে যাত্রী আনা-নেওয়া করলেও গত ২৫ জানুয়ারি পল্লবী স্টেশনও চালু করা হয়। আগামী ডিসেম্বর নাগাদ দিয়াবাড়ি উত্তরা স্টেশন থেকে মতিঝিল পর্যন্ত চালু হওয়ার কথা রয়েছে। দেশের গণপরিবহণে যুক্ত হল বৈদ্যুতিক যানবাহন, যা দেশের সাধারণ মানুষের কাছে একেবারেই নতুন।
২০১২ সালে প্রকল্প হাতে নিয়ে দশ বছরের মাথায় চালু হয় এই মেট্রোরেল। যদিও প্রথম ধাপে উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত অংশের উদ্বোধন করা হয়। চলতি বছরের ডিসেম্বরে আগারগাঁও থেকে মতিঝিল পর্যন্ত এবং ২০২৫ সালের মধ্যে চালু হবে মতিঝিল থেকে কমলাপুর সম্পূর্ণ মেট্রোরেল প্রকল্প।
ট্রেন চালানোর জন্য বিদ্যুৎ নেওয়া হচ্ছে জাতীয় গ্রিড থেকে। ঘণ্টায় দরকার হবে ১৩ দশমিক ৪৭ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ। এর জন্য উত্তরা, পল্লবী, তালতলা, সোনারগাঁও ও বাংলা একাডেমি এলাকায় পাঁচটি বিদ্যুৎ উপকেন্দ্র থাকবে।
মেট্রোরেল প্রকল্পের শুরু যেভাবে
রাজধানীর যানজট কমানোর পাশাপাশি দ্রুত যাতায়াতের উদ্দেশে ২০১২ সালে নেওয়া মেট্রোরেল প্রকল্প বাস্তবায়নে ২০১৩ সালে জাপান সরকারের প্রতিষ্ঠান জাইকার সঙ্গে ঋণচুক্তি করে সরকার। এরপর সম্ভাব্যতা যাচাই ও নকশা প্রণয়ন শেষে কাজ শুরু হয় ২০১৭ সালে। উড়াল ও পাতাল মিলিয়ে মোট ছয় ধাপে প্রকল্প বাস্তবায়নের পরিকল্পনা নিয়ে কাজ শুরু হয়। এরমধ্যে এমআরটি লাইন-৬, এমআরটি লাইন-১, এমআরটি লাইন-৫ এ দুই রুট রয়েছে নর্দার্ন ও সাউদার্ন, এমআরটি লাইন-২, এমআরটি লাইন-৪।
উত্তরা এলাকার দিয়াবাড়ীতে মেট্রোরেল ডিপো নির্মাণের মধ্য দিয়ে শুরু হয় ভৌত অবকাঠামো নির্মাণের কাজ। এমআরটি লাইন-৬-এর আওতায় উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত ১১ দশমিক ৭৩ কিলোমিটার মেট্রোরেল পথের উদ্বোধন হয় গত ২৮ ডিসেম্বর। পরিকল্পনা অনুযায়ী, মতিঝিল পর্যন্ত আগামী ডিসেম্বরে চালুর কথা রয়েছে। ডিএমটিসিএলের প্রতিবেদন অনুযায়ী, এই অংশের অগ্রগতি ৮৫ দশমিক ৭৬ শতাংশ।
প্রাথমিক পরিকল্পনায় উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত ২০ দশমিক ১০ কিলোমিটার নির্মাণের কথা ছিল। পরে সংশোধন করে মতিঝিল থেকে কমলাপুর পর্যন্ত ১.১৬ কিলোমিটার বাড়ানো হয়। এমআরটি লাইন-৬-এর আওতায় এই অংশের কাজ শুরু করতে গত বছরের ২৮ নভেম্বর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর করে সরকার। শুরুতে মূল প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয় ২১ হাজার ৯৮৫ কোটি টাকা।
যেখান থেকে ওঠানামা করা যাবে
সড়ক পরিবহণ মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, মেট্রোরেলের চূড়ান্ত রুট হচ্ছে উত্তরার তিন ধাপ, পল্লবী, রোকেয়া সরণির পশ্চিম পাশ দিয়ে (চন্দ্রিমা উদ্যান-সংসদ ভবন) খামারবাড়ি হয়ে ফার্মগেট-সোনারগাঁও হোটেল-শাহবাগ-টিএসসি-দোয়েল চত্বর-তোপখানা রোড থেকে বাংলাদেশ ব্যাংক পর্যন্ত।
সম্পূর্ণ রুটে ১৬টি স্টেশন থাকছে। এগুলো হচ্ছে—উত্তরা উত্তর, উত্তরা সেন্টার, উত্তরা দক্ষিণ, পল্লবী, মিরপু-১১, মিরপুর সেকশন-১০, কাজীপাড়া, শেওড়াপাড়া, আগারগাঁও, বিজয় সরণি, ফার্মগেট, কারওয়ান বাজার, শাহবাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ সচিবালয় ও মতিঝিল।
মেট্রোরেলে উঠতে যা করতে হয়
মেট্রোরেলের প্রতিটি স্টেশনই তিনতলা। প্রথম তলা পেরিয়ে দ্বিতীয় তলায় রয়েছে কর্মকর্তাদের অফিস কক্ষ, টিকেট কাউন্টার ও ওয়েটিং রুম। এখান থেকেই টিকেট সংগ্রহ করতে হবে।
গন্তব্যে যাতায়াতের জন্য টিকেট কাটার দুটি পদ্ধতি রয়েছে— সিঙ্গেল বা একক ও পারমানেন্ট। টিকেট সংগ্রহের আগে যাত্রীকে প্রথমে মনিটরে ভাষা নির্বাচন করতে হবে। ইংরেজি ও বাংলা দুটি ভাষা রয়েছে, যে ভাষায় আপনি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করবেন সেটা নির্বাচনের পর একক বা পারমানেন্ট (এমআরটি পাস) নির্বাচন করতে হবে। এরপর আসবে গন্তব্যের তালিকা। কোন স্টেশন পর্যন্ত কত ভাড়া সে তালিকা থাকবে। সেখান থেকে যাত্রীকে গন্তব্য স্টেশন নির্বাচন করতে হবে। এরপর কয়টি টিকেট সংগ্রহ করবেন সে তালিকা আসবে। এরপর প্রয়োজনীয় টিকেট, গন্তব্য স্টেশন নির্বাচন করে ‘ওকে’ বাটনে টাচ করলেই মেশিন টাকা দিতে বলবে। টাকা দেওয়ার পর টিকেট বা এমআরটি পাস বেরিয়ে আসবে। এই পদ্ধতি অনুসরণ করে মেট্রোরেলের টিকেট সংগ্রহ করতে পারবেন। একজন যাত্রী একবারে পাঁচটির বেশি টিকেট সংগ্রহ করতে পারবেন না।
অন্যদিকে, এমআরটি পাস পদ্ধতিতে একটি স্মার্ট কার্ডের মাধ্যমে যতবার খুশি যাতায়াত করা যাবে। তবে, সেক্ষেত্রে কার্ডটি সময়মতো রিচার্জ করে রাখতে হবে। ২০ টাকা থেকে শুরু করে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত রিচার্জ করে নিতে পারবেন। প্রত্যেক মেট্রোস্টেশনে থাকা টিকেট ভেন্ডর মেশিনের মাধ্যমেই রিচার্জ করা যাবে। টিকেট সংগ্রহ করে যেতে হতে তৃতীয় তলায়।
যাত্রীদের সুবিধার কথা চিন্তা করে তিন ধরনের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে প্রতিটি স্টেশনে। সিঁড়ি, এস্কেলেটরের পাশাপাশি বয়স্ক ও বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন ব্যক্তিদের জন্য রাখা হয়েছে লিফট।
দ্বিতীয় তলা থেকে টিকেট সংগ্রহ শেষ করে সিঁড়ি বা লিফটের মাধ্যমে পৌঁছাতে হবে তৃতীয় তলায়। টিকেট চেকইনের বিষয়টি দ্বিতীয় তলাতেই শেষ করা হবে। টিকেট চেক হবে ডিজিটাল উপায়ে। যদি কেউ না পারেন তাহলে নিরাপত্তাকর্মীরা যাত্রীদের সহযোগিতা করবেন।
তৃতীয় তলাতেই মেট্রোর মূল প্ল্যাটফর্ম। এই প্ল্যাটফর্মে নির্দিষ্ট সময় পর পর ট্রেন এসে থামবে। অটোমেটিক দরজা খুলে যাবে। যাত্রীরা নামবেন, উঠবেন। গন্তব্য স্টেশনে ট্রেন থামবে। যাত্রীরা নেমে এমআরটি পাস পাঞ্চ করলেই দরজা খুলে যাবে। এরপর বেরিয়ে যেতে পারবেন। সিঙ্গেল এন্ট্রির কার্ডে ভ্রমণের মেয়াদ একবার। আর দশ বছর মেয়াদি কার্ডের যাত্রীরা বার বার ভ্রমণ করতে পারবেন। ভ্রমণের দূরত্বে ভাড়া অনুযায়ী অটোমেটিক টাকা কেটে নেবে।
মেট্রোরেলে কোন পর্যন্ত গুণতে হবে কত ভাড়া
মেট্রোরেলে যাতায়াতের জন্য প্রতি কিলোমিটারে পাঁচ টাকা ধরে সর্বনিম্ন ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে ২০ টাকা। ভাড়ার তালিকা অনুযায়ী, উত্তরা নর্থ স্টেশন থেকে উত্তরা সাউথ স্টেশন পর্যন্ত ভাড়া ২০ টাকা। মিরপুর-১১ নম্বর স্টেশন পর্যন্ত ৩০ টাকা, কাজীপাড়া স্টেশন পর্যন্ত ৪০ টাকা, শেওড়াপাড়া স্টেশন পর্যন্ত ৫০ টাকা, আগারগাঁও স্টেশন পর্যন্ত ৬০ টাকা, ফার্মগেট পর্যন্ত ৭০ টাকা, শাহবাগ পর্যন্ত ৮০ টাকা, সচিবালয় পর্যন্ত ৯০ টাকা এবং কমলাপুর পর্যন্ত ভাড়া হবে ১০০ টাকা। স্মার্ট কার্ডের মাধ্যমে যাত্রীরা মেট্রোরেলের ভাড়া পরিশোধ করতে পারবেন।
তবে, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধারা বিনা ভাড়ায় মেট্রোরেলে ভ্রমণ করতে পারবেন। এ ছাড়া বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন ব্যক্তিদের প্রতিটি সিঙ্গেল ট্রিপের বিশেষ ছাড়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
একসঙ্গে কত যাত্রী উঠতে পারবে
প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানান, শুরুতে উত্তরা থেকে বিরতিহীন চলবে আগারগাঁও স্টেশন পর্যন্ত। আগামী ২৬ মার্চ থেকে তা সবগুলো স্টেশনে থামবে। মেট্রোরেলের প্রতি কোচে ৪৮ জন করে যাত্রী বসতে পারে। মাঝখানের চারটি কোচ হচ্ছে মোটরকার। এতে বসার ব্যবস্থা আছে ৫৪ জনের। সব মিলিয়ে একটি ট্রেনে বসে যেতে পারবে ৩০৬ জন। প্রতিটি কোচ সাড়ে নয় ফুট চওড়া। মাঝখানের প্রশস্ত জায়গায় যাত্রীরা দাঁড়িয়ে ভ্রমণ করতে পারবে। দাঁড়ানো যাত্রীদের ধরার জন্য ওপরে হাতল এবং স্থানে স্থানে খুঁটি আছে। সব মিলিয়ে একটি ট্রেনে বসে ও দাঁড়িয়ে সর্বাধিক দুই হাজার ৩০৮ জন যাত্রী চড়তে পারবে। মেট্রোরেল পুরোপুরি বিদ্যুৎচালিত। সংকেত, যোগাযোগসহ ১৭ থেকে ১৮টি ব্যবস্থা ট্রেন চলার ক্ষেত্রে কাজ করে।
প্রথম প্রকল্প ব্যয়
২০১২ সালের ১৮ ডিসেম্বর সরকারের অন্যতম অগ্রাধিকার মেট্রোরেল প্রকল্প জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটিতে (একনেক) অনুমোদন লাভ করে। ২০ দশমিক ১০ কিলোমিটার দীর্ঘ এ প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয়েছিল ২১ হাজার ৯৮৫ কোটি ৫৯ লাখ টাকা। এর মধ্যে জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সির (জাইকা) প্রকল্প ঋণ ৭৫ শতাংশ এবং বাংলাদেশ সরকারের নিজস্ব অর্থায়ন ২৫ শতাংশ।
২০১৬ থেকে এই পরিকল্পনার বাস্তবায়ন শুরু হয়। এ প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য ১৬ হাজার ৫৯৫ কোটি টাকা ঋণ দিচ্ছে জাইকা। বাকি পাঁচ হাজার ৩৯০ কোটি টাকার জোগান দিচ্ছে বাংলাদেশ সরকার। মেট্রোরেল প্রকল্প লাইনের পুরো কাজ আটটি প্যাকেজে ভাগ করা হয়েছে।
পরিসর ও ব্যয় বৃদ্ধি
পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, চলমান মেট্রোরেল প্রকল্পের ব্যয় সাড়ে ১১ হাজার কোটি টাকা বাড়ানো হয়েছে। পাশাপাশি সময় বেড়েছে দেড় বছর। ২০১২ সালে অনুমোদন পাওয়া মেট্রোরেল লাইন-৬-এর মূল ব্যয় ধরা হয়েছিল ২১ হাজার ৯৮৫ কোটি টাকা। এতে অর্থায়ন করে উন্নয়ন সংস্থা জাইকা।
শুরুতে উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত ২০ দশমিক ১০ কিলোমিটার মেট্রোরেল নির্মাণের কথা ছিল। পরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনায় মতিঝিল থেকে কমলাপুর রেলস্টেশন পর্যন্ত আরও ১.১৬ কিলোমিটার যোগ হয়ে লাইনের দৈর্ঘ্য হয় ২১.২৬ কিলোমিটার। নতুন কাজের কারণে ব্যয় বেড়ে হয় ৩৩ হাজার ৪৭২ কোটি টাকা। প্রস্তাব অনুমোদনের ফলে প্রকল্পের মোট সময় লাগবে ১৩ বছর। ২০১২ সাল থেকে শুরু হয়ে আগামী ২০২৪ সালের জুনে এর কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। তবে, সংশোধিত প্রকল্প প্রস্তাব অনুসারে, কাজ শেষ হবে ২০২৫ সালের ডিসেম্বরে। প্রকল্পের ব্যয় বেড়ে হয়েছে ৩৩ হাজার ৪৭২ কোটি টাকা।