মোংলার প্রধান কাঁচা বাজার ১৩ সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রণে

পবিত্র মাহে রমজান ও করোনা পরিস্থিতিতেও সাধারণ মানুষের রেহাই মিলছে না মোংলার প্রধান কাঁচা বাজারের ১৩ সিন্ডিকেটের কবল থেকে। করোনা প্রাদুর্ভাবে শ্রমিক অধ্যুষিত এখানকার মানুষগুলো যখন কর্মহীন হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে, তখনই মোংলার প্রধান এ কাঁচা বাজারের পণ্যের ঊর্ধ্বগতিতে স্থানীয়রা আরো অসহায় হয়ে পড়েছে।
সিন্ডিকেটের বেপরোয়া বাজার নিয়ন্ত্রণই ভোগাচ্ছে তাদের। এ নিয়ে সম্প্রতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে অভিযোগ দিলেও কোনো প্রতিকার মেলেনি। বরং এতে সিন্ডিকেট আরো বেপরোয়া হয়ে উঠেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মোংলা পৌর শহরের অন্তত ২০ হাজার মানুষ প্রতিদিন কাঁচা বাজার করে থাকে। করোনা ভাইরাস সংক্রমণ রোধে রোজার কয়েকদিন আগে কাঁচা বাজারটি স্থানীয় প্রশাসন স্থানান্তরিত করে শহরের খোলা জায়গায় হ্যালিপ্যাডে সরিয়ে আনে স্থানীয় প্রশাসন। বাজারটি সরিয়ে আনার আগে কাঁচা পণ্যের দাম ঊর্ধ্বগতির মধ্যে কিছুটা সহনশীল থাকলেও সম্প্রতি তরিতরকারির দাম বেপরোয়াভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে করে এই মাহে রমজান ও করোনা দুর্যোগের সময় ক্রেতা সাধারণের নাভিশ্বাস অবস্থা হয়েছে।
করোনার সংক্রমণ থেকে রক্ষায় সরকারি নির্দেশনায় মোংলা বাজারের নিত্য প্রয়োজনীয় দোকানপাট ছাড়া বেশিরভাগ ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। বাণিজ্যিক জাহাজ, ইপিজেড ও শিল্পকলকারখানায় কমে গেছে কর্মসংস্থান। লবণ পানি অধ্যুষিত মোংলায় সবজি চাষ না হওয়ায় রমজান ও করোনা দুর্যোগ পরিস্থিতিতেও নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের বিশেষ করে কাঁচা সবজির অতিরিক্ত বাড়তি দামের কারণে অসহায় হয়ে পড়েছে গরিব আর নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের মানুষগুলো।
ক্রেতা সাধারণের অভিযোগ,কাঁচাবাজার কেন্দ্রিক গড়ে ওঠা ১৩ সিন্ডিকেটের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে তারা।
আর খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন,তারাও অসহায় সিন্ডিকেটের কাছে। সিন্ডিকেটের বেঁধে দেওয়া দামের চেয়ে কোনো খুচরা দোকানদার কম দামে পণ্য বিক্রি করতে পারে না। বর্তমান সময়ে প্রান্তিক চাষিরা সবজির তেমন দাম না পেলেও অভিযোগ উঠেছে মোংলার ১৩ জনের সংঘবদ্ধ দুটি পৃথক সিন্ডিকেট আড়তদার চক্রের বিরুদ্ধে। তারা কেনার চেয়ে কয়েকগুণ বেশি দামে মোংলার প্রধান বাজারে কাঁচাপণ্য খুচরা দোকানদারদের কাছে বিক্রি করছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারীর সদস্যদের হাত থেকে রক্ষা পেতে সিন্ডিকেট পণ্যের কেনার মূল রশিদ পরিবর্তন করে বেশি দাম লেখিয়ে বিকল্প স্লিপ তৈরি করে থাকে বলেও অভিযোগ রয়েছে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, এ সিন্ডিকেটের অন্যতম সদস্য হলো রফিক, কামরুল, জাহিদ, সুমন, বাদল, জামাল, নাসির, কবির, ফিরোজ, আলু শাজাহান, মান্নান, আবদুল গণি ও কালু। কেজিপ্রতি কোনো কোনো পণ্যে ১৫ থেকে ২০ টাকা পর্যন্ত বাড়তি দামে পণ্য কিনতে বাধ্য করছে খুচরা ব্যবসায়ীদের। যার ফলে খুচরা দোকানদের হাত ঘুরে ক্রেতাদের সে পণ্য কিনতে হচ্ছে আরো বেশি দামে।
রাজনৈতিক পরিচয় বহনকারী ওইসব সিন্ডিকেটের হোতারা দেখাচ্ছে নানা অজুহাত। অল্প দিনের ব্যবধানে এ চক্রের সদস্যরা আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ বনে গেছে।
কয়েকজন সাধারণ ক্রেতা ও খুচরা দোকানদার অভিযোগ করে বলেন, কয়েকজন পাইকার মিলে সিন্ডিকেট করে খুলনা থেকে কাঁচামাল এনে অনেক বেশি দামে তাদের তা কিনতে বাধ্য করে। ফলে পণ্যের কেনাদাম অনেক বেশি ও তাদের সামান্য লাভ মিলিয়ে অন্যান্য স্থানের চেয়ে এখানে সবজির দাম বেশি পড়ে যায়।
খুচরা ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, খুলনা থেকে পেশীশক্তির জোরে প্রভাবশালী এ সিন্ডিকেটচক্র সাধারণ ব্যবসায়ীদের কাঁচাপণ্য কিনে আনতে দেয় না। তাদের বেঁধে দেওয়া দামেই খুচরা দোকানদারদের পণ্য বিক্রি করতে বাধ্য হতে হয়।
এ নিয়ে সম্প্রতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে অভিযোগ দিলেও কোনো প্রতিকার মেলেনি। বরং এতে সিন্ডিকেট আরো বেপরোয়া হয়ে উঠেছে।
এদিকে পাইকারি আড়ৎদাররা অতিরিক্ত দাম নেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, তারা খুবই স্বল্প পরিমাণ লাভ করে খুচরা ব্যবসায়ীদের কাছে পণ্য বিক্রি করেন। আড়ৎদারদের মধ্যে কোনো সিন্ডিকেট নেই।
এ ব্যাপারে মোংলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. রাহাত মান্নান মোংলা বাজারে কাঁচা বাজারের সবজির দাম বেশি এমনটা স্বীকার করে বলেন, ‘মোংলা বাজারে নিত্য কাঁচাপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে বাজার কেন্দ্রিক সিন্ডিকেটটি যতই প্রভাবশালী হোক না কেন তা চিহ্নিত করে তাদের আইনের আওতায় আনা হবে।’