ময়মনসিংহে হজ ব্যবসার অন্তরালে মানবপাচারের অভিযোগ

ময়মনসিংহের ‘সাদমান ট্রাভেলস’ নামের একটি হজ এজেন্সির বিরুদ্ধে হজ নীতিমালার বাইরে লোক পাঠানো ও ওমরাহ ভিসায় মানবপাচারের অভিযোগ উঠেছে। নীতিমালা ভঙ্গ করার অভিযোগে এরই মধ্যে সৌদি সরকার তাদের কাছে রাখা জামানতের টাকা বাজেয়াপ্ত করেছে।
এদিকে, মন্ত্রণালয়ের হজ অনুবিভাগের জ্যেষ্ঠ সহকারি সচিব আমিনুর রহমান গত ৩১ মে ওমরাহ যাত্রীদের ফেরত না আসার কারণ জানতে চেয়ে এক চিঠিতে সংশ্লিষ্ট এজেন্সির দ্বারা পাঠানো ওমরাহ যাত্রীদের দেশে ফেরত আনার বাধ্যবাধকতা রয়েছে বলে উল্লেখ করেন। এ ছাড়া সেসব ওমরাহ যাত্রীরা ফেরত না আসায় সাতদিনের মধ্যে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়ে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের বিধান স্মরণ করিয়ে দেন। স্বরাস্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের পর্যালোচনার আলোকেই এই চিঠি ইস্যু করেছে হজ মন্ত্রণালয়ের অনুবিভাগ।
ময়মনসিংহ কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি, তদন্ত) বলেন, এ বিষয়ে থানায় করা একটি সাধারণ ডায়েরি তদন্ত করছে পুলিশ।
অভিযোগ ওঠে, ‘সাদমান ট্রাভেলস’ লাইসেন্স না থাকা সত্ত্বেও বেআইনিভাবে ওমরাহর জন্য সৌদি আরবে লোক পাঠাচ্ছে। আর সে সব লোকের অনেকেই দেশে ফিরছেন না। এজেন্সিটির সহায়তায় যাত্রীরা সৌদি আরব গিয়ে পাসপোর্টসহ গায়েব হয়ে যাচ্ছেন।
তাঁদের মধ্যে ময়মনসিংহের হালুয়াঘাটের বাসিন্দা বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (বাকৃবি) স্নাতকোত্তর শ্রেণির ছাত্র শেখ মিজানুর রহমান, কুমিল্লার দেবীদ্বারের আল আমিন ও নওগাঁর পত্নীতলার মো. রিয়াজুল হক রয়েছেন।

ওই এজেন্সির মাধ্যমে বাকৃবির দুই শিক্ষার্থীসহ তিনজন ওমরাহর নামে সৌদিতে গেলেও তাঁরা আর দেশে ফিরে আসেননি। ছাত্রদের অভিভাবক ছাড়া ওমরাহতে পাঠানোর ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। কিন্তু জালিয়াতির মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানটি ওমরাহর ভিসা নেয়।
প্রত্যেকেই একসঙ্গে ‘সাদমান ট্রাভেলস’-এর মাধ্যমে চলতি বছরের ২৩ জানুয়ারি ওমরাহর ভিসা নিয়ে সৌদি আরব যান। তাঁদের ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ার তারিখ ছিল এ বছরের ২২ ফেব্রুয়ারি।
নিজ প্রতিষ্ঠানের ওমরাহ লাইসেন্স না থাকা সত্ত্বেও ঘোষণা দিয়ে দেদারছে ওমরাহর নামে গুরুতর অপরাধমূলক ব্যবসায় যুক্ত থাকার অভিযোগ ওঠে প্রতিষ্ঠানটির কর্ণধার ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. হাসানুজ্জামানের বিরুদ্ধে।
হজ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, কোনো প্রতিষ্ঠানের হজের লাইসেন্স থাকলেও সে প্রতিষ্ঠান ওমরাহ করার জন্য লোক পাঠাতে পারে না। ওমরাহর জন্য লোক পাঠাতে হলে প্রতিষ্ঠানটিকে ওমরাহর আলাদা লাইসেন্স নিতে হয়। কিন্তু সাদমান ট্রাভেলস স্থানীয় পত্রিকায় এবং ক্যাবল টিভি নেটওর্য়াক ও বিভিন্ন অনলাইন নিউজ পোর্টালসহ তাদের ব্যবহৃত মোবাইল ফোনের ওয়েলকাম টিউনের মাধ্যমে ২০ ও ২১ সালের ওমরাহর জন্য লোক পাঠানোর প্রচারণা অব্যাহত রেখেছে।
হজ নীতিমালা অনুযায়ী, সৌদি আরবে পৌঁছানোর পর সংশ্লিষ্ট হজ এজেন্সির কাছে পাসপোর্ট জমাদানের নিয়ম রয়েছে। পরবর্তী সময়ে দেশে ফেরার ফ্লাইট যেদিন নিশ্চিত হবে, সেদিন তাদের হাতে পাসপোর্ট ফেরত দিতে হবে। কিন্তু ‘সাদমান ট্রাভেলস’ ওই তিনজনের পাসপোর্ট জমা না রেখে তাঁদের পালিয়ে যেতে সহায়তা করেছে। ফলে তাঁদের আর দেশে ফিরে আসেন নি।
এ বিষয়ে এজেন্সিটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. হাসানুজ্জামান স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের চিঠির বিষয়ে কিছু জানেন না বলে জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘এরই মধ্যে সৌদি সরকার আমাদের জামানত থেকে প্রায় ১৬ লাখ টাকা বাজেয়াপ্ত করেছে। ওই তিনজন ওমরাহর জন্য যাওয়ার আগে আমাদের মসজিদে একাধিকবার তাবলিগ করেছেন। তাঁরা এ রকম করবেন, বুঝতে পারিনি। ওই তিনজনের বিষয়টি মানবপাচার হলেও সব হয়েছে আমার অজ্ঞাতে। আমি তাঁদের দেশে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছি।’
এদিকে, এ ঘটনার তিন মাস অতিবাহিত হলেও ওই এজেন্সির বিরুদ্ধে দৃশ্যত কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি।