নিলক্ষায় আ. লীগের ২ লাঠিয়াল বাহিনীর মধ্যে সংঘর্ষ

নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলার নিলক্ষার চরে আবারও ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়েছে আওয়ামী লীগের দুই নেতার লাঠিয়াল বাহিনী। গতকাল রোববার তারা স্থানীয় সংসদ সদস্য সাবেক মন্ত্রী রাজিউদ্দিন আহম্মেদ রাজু ও পুলিশের উপস্থিতিতে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। এতে তিনজন গুলিবিদ্ধসহ কমপক্ষে ২০ জন আহত হয়েছে।
গত নভেম্বর মাসে অনুষ্ঠিত নিলক্ষা ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন সাবেক চেয়ারম্যান রায়পুরা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুল হক সরকার। আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন নিলক্ষা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তাজুল ইসলাম। এলাকার দাঙ্গাবাজ হিসেবে পরিচিত ও প্রভাবশালী গোষ্ঠীর লোকজন বিভক্ত হয়ে নির্বাচন করেন দুই প্রার্থীর পক্ষে। তাজুল ইসলাম নির্বাচনে প্রার্থী হিসেবে নতুন মুখ হলেও আওয়ামী লীগ দলীয় মনোনয়ন ও প্রভাব বিস্তারের কারণে জিতে যান নির্বাচনে। পরাজিত হন একাধিকবারের নির্বাচিত চেয়ারম্যান আবদুল হক সরকার।
এরপর ১২ নভেম্বর থেকে নিলক্ষায় দুই পক্ষের মধ্যে টেঁটা ও বন্দুক যুদ্ধ শুরু হয়। তিনদিনের সহিংসতায় মামুন, মানিক, খোকন ও শাহজাহান নামের চার ব্যক্তি নিহত হয়। এর মধ্যে মামুন, মানিক ও খোকন খুনের ব্যাপারে রায়পুরা থানায় আজো কোনো মামলা রুজু হয়নি। বাধ্য হয়ে নিহতের স্বজনরা আদালতে হত্যা মামলার অভিযোগ করেছেন। তবে মোটা অঙ্কের লেনদেনের মাধ্যমে শাহজাহান খুনের ঘটনায় নিজ আত্মীয়স্বজনকে আসামি করে চেয়ারম্যান তাজুলের সমর্থক রাজিব একটি মামলা করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। নরসিংদী জেলা প্রশাসন গত ১৮ নভেম্বর থেকে নিলক্ষার চরে ১৪৪ ধারা জারি করে। এরপরও মাঝে মধ্যে দুই পক্ষের মধ্যে থেমে থেমে টেঁটা ও ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটছে।
নিলক্ষার একাধিক বাসিন্দা জানান, উভয়পক্ষের মধ্যে বিবাদ মীমাংসার জন্য গতকাল দুপুরে নিলক্ষায় রওনা হন স্থানীয় সংসদ সদস্য রাজিউদ্দিন আহম্মেদ রাজু। ইউনিয়নের হরিপুর এলাকায় তাজুল ইসলামের পক্ষের লাঠিয়াল রাজিব বাহিনীর লোকজন হক সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আবদুল হকের সমর্থকদের বাড়িঘরে এলোপাতাড়ি হামলা চালায়। এ সময় বেশ কয়েকটি ঘরে অগ্নিসংযোগও করে তারা। মীমাংসার পরিবর্তে ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে সংসদ সদস্য ও পুলিশের সামনেই দুই পক্ষ সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। এতে হরিপুর এলাকায় ক্ষুব্ধ নারী-পুরুষ টেঁটা, বটিসহ লাঠিসোঁটা নিয়ে এমপি রাজিউদ্দিন রাজুকে ঘিরে ফেলে। সেই সঙ্গে প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলে আবদুল হকের লোকজন। রাজিব বাহিনীর কর্মকাণ্ডে সাংসদ ক্ষিপ্ত হন এবং ক্ষতিগ্রস্তদের কাছে দুঃখ প্রকাশ করে দ্রুত নিলক্ষা ছেড়ে চলে আসেন। এরপর থেকেই শুরু হয় রাজিব বাহিনীর ও আবদুল হকের সমর্থক শহীদ বাহিনীর মধ্যে টেঁটা ও বন্দুক যুদ্ধ। আজ সোমবার সন্ধ্যা পর্যন্ত দুই পক্ষের মধ্যে থেমে থেমে নিলক্ষার হরিপুর, বীরগাঁওসহ বেশ কয়েকটি এলাকায় সংঘর্ষ হয়।
তবে এমপি রাজুকে অবরুদ্ধ করে রাখার ঘটনাটি সঠিক নয় বলে জানিয়েছে পুলিশ ও এমপির সফরসঙ্গীরা। গতকালের সংঘর্ষে কমপক্ষে ২০ জন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এর মধ্যে গুলিবিদ্ধ তিনজনকে সন্ধ্যায় নরসিংদী সদর হাসপাতালে নেওয়া হয়। তারা হলো নিলক্ষা ইউনিয়নের গোপীনাথপুর মধ্যপাড়ার জাকির হোসেনের ছেলে সজল হোসেন (২২), নিলক্ষা বড়বাড়ির আলাউদ্দিনের ছেলে ওবায়দুল্লাহ (১৮) ও একই গ্রামের মৃত আবদুল গফুরের ছেলে সাইজ উদ্দিন (৩৫)। পুলিশের গ্রেপ্তার এড়াতে তারা আহত অবস্থায় হাসপাতাল ছেড়ে পালিয়ে যায়।
নরসিংদী সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, আহতদের মধ্যে সজল পায়ে, ওবায়দুল্লাহ হাতে ও সাইজ উদ্দিন গলা ও কপালে গুলিবিদ্ধ হয়েছে। তাদের এক্স-রে করানোর জন্য প্রাইভেট হাসপাতালে পাঠানোর পর আর ফিরে আসেনি। বিষয়টি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে অবহিত করা হয়েছে।
রায়পুরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আজহারুল ইসলাম বলেন, গত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের পর থেকেই নির্বাচিত চেয়ারম্যান ও সাবেক চেয়ারম্যানের মধ্যে প্রভাব বিস্তারকে কেন্দ্র করে এই সংঘর্ষ চলে আসছে। কিছু দিন পর পরই থেমে থেমে এই সংঘর্ষ চলে। এই বিরোধ মিটানোর জন্য স্থানীয় সংসদ সদস্য নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলতে যান। এ অবস্থায় একটি পক্ষ মনে করে যে সংসদ সদস্য তাদের জন্য এসেছে। এর পর পরই দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বেধে যায়। এই সংঘর্ষ নিয়ন্ত্রণে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
যোগাযোগ করা হলে সংসদ সদস্য রাজিউদ্দিন আহম্মেদ রাজু বলেন, ‘আমি মীমাংসা করতে গিয়েছিলাম। পেছন থেকে দুই পক্ষ মারামারি শুরু করে। আমি রাগ করে চলে আসি।’ তিনি আরো বলেন, যত দিন দুই পক্ষ উচ্ছৃঙ্খলতা থেকে বেরিয়ে না আসবে আমি সেখানে যাব না। নিজের ক্ষতি না বুঝতে না পারলে আমি মীমাংসা করেও সফল হব না।’