৪৩টি কুমিরের বাচ্চা চুরি, কেউ কিছু জানে না

সুন্দরবনের করমজল বন্য প্রাণী প্রজননকেন্দ্র থেকে গত রোববার রাতে ৪৩টি কুমিরের বাচ্চা চুরির ঘটনা ঘটেছে। বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. সাইদুল ইসলাম আজ বৃহস্পতিবার বিষয়টি জানিয়েছেন। বন বিভাগের ধারণা, একটি চক্র কুমিরের বাচ্চাগুলো চুরি করে অন্যত্র পাচার করেছে।
এদিকে, কুমিরের বাচ্চা চুরির ঘটনা তদন্তের জন্য গত মঙ্গলবার দুপুরে পূর্ব সুন্দরবনের চাঁদপাই রেঞ্জ কর্মকর্তা মো. মেহেদীজ্জামানকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। আগামী দু-একদিনের মধ্যে তাঁকে তদন্ত প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই কেন্দ্রের একজন কর্মচারী জানান, করমজল প্রজননকেন্দ্রের দায়িত্বে থাকা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তৌহিদুল ইসলাম কৌশলে কুমিরের বাচ্চাগুলো অন্যত্র পাচার করেছেন। তিনি এখন নিজেকে রক্ষার জন্য ওই কেন্দ্রের কর্মচারী জাকির হোসেন ও মাহবুবকে দোষারোপ করে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার কাছে রিপোর্ট দিয়েছেন।
এ বিষয়ে তদন্তের দায়িত্ব পাওয়া পূর্ব সুন্দরবনের চাঁদপাই রেঞ্জ (মোংলা) কর্মকর্তা মো. মেহেদীজ্জামান জানান, করমজল বন্য প্রাণী প্রজননকেন্দ্রের দুটি কৃত্রিম পুকুর থেকে গত রোববার রাতে ৪৩টি কুমিরের বাচ্চা চুরি হয়ে গেছে। পরের দিন সোমবার সকালে ওই দুটি পুকুরে থাকা কুমিরের বাচ্চা গণনা করে ৪৩টি কম পাওয়া যায়। পরে সেখানকার দায়িত্বরত কর্মচারীরা ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বিষয়টি জানান। এরপর গত মঙ্গলবার দুপুরে পূর্ব সুন্দরবনে বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. সাইদুল ইসলাম ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে মো. মেহেদীজ্জামানকে তদন্ত কর্মকর্তা করে এক সদস্যের কমিটি গঠন করে দেন।
এই কর্মকর্তা আরো জানান, কোনো হিংস্র প্রাণী যদি প্যানে ঢুকে বাচ্চাগুলোকে আক্রমণ করত কিংবা খেয়ে ফেলত তাহলে সেখানে হাড়, মাংস, অন্যান্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ও রক্ত দেখা যেত। এমন কোনো আলামত সেখানে পাওয়া যায়নি। তাঁর ধারণা, প্রায় এক বছর বয়সী কুমিরের বাচ্চাগুলো চুরি করে পাচার করা হয়েছে। কোনো একটি চক্র এর সঙ্গে জড়িত রয়েছে বলে তিনি মনে করেন। তবে সেই চক্রের মধ্যে বন্য প্রাণী প্রজননকেন্দ্রের দায়িত্বে থাকা বন কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা রয়েছেন কি না, তা গভীরভাবে তদন্ত করা হচ্ছে।
বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. সাইদুল ইসলাম বলেন, আগামী দু-একদিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়া যাবে। এরপর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ বিষয়ে জানতে করমজল বন্য প্রাণী প্রজননকেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. তৌহিদুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে তাঁর ফোন নম্বর (০১৭১২৬৪৩১১৭, ০১৯৪৭৬৭৬১৫১) বন্ধ পাওয়া যায়। এ ছাড়া প্রজননকেন্দ্রের কর্মচারী জাকির হোসেনের নম্বরও (০১৮৩৪৫৪৬৯৫৪) বন্ধ পাওয়া যায়।
বিলুপ্তপ্রায় লবণাক্ত পানির প্রজাতির কুমিরের প্রজনন বৃদ্ধি ও সংরক্ষণে ২০০২ সালে পূর্ব সুন্দরবনের চাঁদপাই রেঞ্জের (মোংলা) করমজলে প্রায় ৩২ লাখ টাকা ব্যয়ে গড়ে তোলা হয় দেশের একমাত্র বন্য প্রাণী প্রজননকেন্দ্রটি।