পিঠে স্যাটেলাইট ট্রান্সমিটার, সাগরে দুই কচ্ছপ

বাংলাদেশে এমনকি পুরো পৃথিবীতে বিপন্ন হয়ে যাচ্ছে ‘বাটাগুর বাসকা’ প্রজাতির কচ্ছপ। তবে এ প্রজাতি সংরক্ষণ ও বংশ বিস্তারের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। দুটি কচ্ছপের পিঠের ওপর স্যাটেলাইট ট্রান্সমিটার বসিয়ে বঙ্গোপসাগরের মোহনায় অবমুক্ত করা হয়েছে। কচ্ছপের জীবনাচরণ নিয়ে তথ্য পেতে এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
গতকাল রোববার বঙ্গোপসাগরের মোহনার আদাচাই এলাকায় ওই দুটি কচ্ছপকে অবমুক্ত করা হয়। বন বিভাগ, যুক্তরাষ্ট্রের টারটেল সারভাইভাল অ্যালায়েন্স, অস্ট্রিয়ার ভিয়েনা জু ও প্রকৃতি জীবন ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে এ কার্যক্রম হাতে নেওয়া হয়। সংস্থাগুলোর সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে গতকাল মোংলার ফুয়েল জেটিতে আয়োজিত অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে এর কার্যক্রম শুরু হয়।
প্রকল্পের বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, এর ফলে কচ্ছপের জীবনাচরণের তথ্য ও পরিবেশগত ছবি সংগ্রহ করা সম্ভব হবে। এ গবেষণার মধ্য দিয়ে জানা যাবে এ প্রজাতির কচ্ছপের স্বভাব, খাদ্য সংগ্রহ, বিচরণ, পরিবেশসহ বঙ্গোপসাগরের গভীর ও না অগভীর পানিতে থাকতে পছন্দ করে সেসব বিষয়ে। এ ছাড়া এ কচ্ছপ বঙ্গোপসাগরের বাংলাদেশ অংশ ছেড়ে ভারত ও শ্রীলঙ্কা অংশে যায় কি না জানা যাবে তাও। এখন থেকে এক বছর ধরে কচ্ছপটির গতিবিধি পর্যালোচনা করা হবে। পর্যালোচনা ও গবেষণা শেষে সুন্দরবন ও বঙ্গোপসাগরে এ প্রজাতির কচ্ছপের আরো বাচ্চা অবমুক্ত করা হবে।
এ লক্ষ্যে করমজল বন্য প্রাণী প্রজনন এলাকায় ২০১৪ সালে গড়ে তোলা হয় ‘বাটাগুর বাসকা’ কচ্ছপ প্রজননকেন্দ্র। এ কেন্দ্র থেকে চলতি বছরের মাঝামাঝি সময়ে কচ্ছপের ডিম থেকে বাচ্চা ফুটে বের হওয়ার পর সেগুলো প্রাপ্তবয়স্ক হলে সুন্দরবন ও বঙ্গোপসাগরে অবমুক্ত করা হবে বলে জানিয়েছেন এ প্রকল্পের বিশেষজ্ঞরা। এর মাধ্যমে বিলুপ্তপ্রায় এ কচ্ছপ প্রজাতিকে রক্ষা করা সম্ভব হবে। করমজল কচ্ছপ প্রজননকেন্দ্রে বর্তমানে ১১৭ কিশোর ও ১০টি বড় বাটাগুর বাসক প্রজাতির কচ্ছপ রয়েছে। এর মধ্যে বড় বড় চারটি পুরুষ ও চারটি নারী কচ্ছপ রয়েছে। এ কচ্ছপ চলতি বছরের মাঝামাঝি সময়ে ডিম দেবে। এরপর ডিম থেকে ফুটে বের হওয়া বাচ্চাগুলো প্রাপ্তবয়স্ক হলে সুন্দরবন ও সাগরে অবমুক্ত করা হবে। করমজল প্রজননকেন্দ্রের এ কচ্ছপগুলো দেশের বিভিন্ন উপকূলীয় এলাকা থেকে সংগ্রহ করা হয়।
বন্য প্রাণী ও প্রকৃতি সংরক্ষণ অঞ্চল খুলনার বন সংরক্ষক জাহিদুল কবির বলেন, ‘দেশের সংকটাপন্ন এ প্রাণীটি বাংলাদেশ ও ভারতের অংশে মাত্র ১০০টির মতো আছে। বিলুপ্তপ্রায় এ প্রাণীকে আমাদেরই রক্ষা করতে হবে। এ জন্যই মূলত এ আয়োজন কিংবা উদ্যোগ।’ তিনি আরো বলেন, ‘বিলুপ্তির পথে এ প্রাণী রক্ষায় ২০০৮ সালে উদ্যোগ নেওয়া হয়। এরপর ২০১৪ সালে করমজলে এ প্রজাতির কচ্ছপ প্রজননকেন্দ্র গড়ে তোলা হয়েছে। মূলত এ প্রাণীটির স্বভাব, খাদ্য সংগ্রহ, বিচরণ, পরিবেশসহ বঙ্গোপসাগরের গভীর না অগভীর পানিতে থাকতে পছন্দ করে সেসব বিষয়ে জানার জন্য নিউজিল্যান্ডভিত্তিক স্যাটেলাইট ট্রান্সমিটার সিস্টেম স্থাপন করা হয়েছে।’
জাহিদুল বলেন, ‘জেলে-বাওয়ালিদের জালে যদি কখনো এ কচ্ছপ দুটি আটকা পড়ে তাহলে তারা যেন আমাদের খবর দেয়। তা না হলে তারা যেন দ্রুত জাল থেকে অবমুক্ত করে দেয়। এ জন্য জেলে-বাওয়ালি, র্যাব, কোস্টগার্ড, পুলিশ ও নৌবাহিনীর সহযোগিতা প্রয়োজন। সবার প্রচেষ্টা ছাড়া কোনোভাবেই এ প্রাণীটিকে রক্ষা করা সম্ভব হবে না।’
কচ্ছপ অবমুক্ত করার সময়ে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন টাটাল আইল্যান্ড-এর প্রধান বিজ্ঞানী ড. পিটার প্রাসাগ, পূর্ব সুন্দরবনের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. সাইদুল ইসলাম এবং প্রকৃতি ও জীবন ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান মুকিত মজুমদার বাবু।