বন বিভাগ নিশ্চিত, চিতা বিড়ালই দায়ী!

সুন্দরবনের দুই বন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, তাঁরা নিশ্চিত চিতা বিড়ালই করমজল প্রজননকেন্দ্রে কুমিরের ছানাগুলোকে মেরেছে। অথচ কুমিরের ছানা নিখোঁজ ও মৃত্যুর ঘটনায় গঠিত তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রজননকেন্দ্রের দুই কর্মচারী এসব ছানা পাচারের জন্য দায়ী।
এখন ওই দুই কর্মকর্তা বলছেন, তদন্ত প্রতিবেদন ছিল ‘অনুমান নির্ভর’। ওই তদন্ত প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করে প্রজননকেন্দ্রের দুই কর্মচারী জাকির ও মাহবুবকে বরখাস্ত করা হয়। একই সঙ্গে খুলনার দাকোপ থানায় মামলা করা হয়।
বর্তমানে চিতা বিড়াল আলোচনায় চলে আসায় এখন পূর্ব সুন্দরবন চাঁদপাই রেঞ্জের (মোংলা) কর্মকর্তা মো. মেহেদীজ্জামান জানাচ্ছেন, ওই তদন্ত ছিল ‘অনুমান নির্ভর’।
প্রজননকেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তৌহিদুর রহমান জানিয়েছেন, মাহবুব ও জাকির যেন ‘অহেতুক হেনেস্তা বা হয়রানির শিকার না হয়’ সেজন্য ঊর্ধ্বতন মহলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের প্রক্রিয়া চলছে।
গত ২৯ ও ৩০ জানুয়ারি করমজল কুমির প্রজননকেন্দ্র থেকে মোট ৪৩টি কুমিরের ছানা হারিয়ে যায়। ওই সব ছানার কোনো খোঁজ এখনো পায়নি বন বিভাগ।
গত ৫ ফেব্রুয়ারি ওই প্রজননকেন্দ্রে ১৯টি কুমিরের ছানাকে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়। বন বিভাগের কর্মকর্তারা এসব কুমিরের ছানার খণ্ডিত অংশ উদ্ধার করেন। ওই রাতেই একটি চিতা বিড়ালকে হত্যা করা হয়। বন বিভাগের কর্মকর্তারা দাবি করেন, ওই চিতা বিড়ালই কুমিরের ছানাগুলোকে হত্যা করে।
চলতি সপ্তাহেই ওই ঘটনার জন্য তিন সদস্যের আরেকটি তদন্ত কমিটি করা হয়। যার প্রধান করা হয় চাঁদপাই রেঞ্জ কর্মকর্তা মো. মেহেদীজ্জামানকে।
এ ব্যাপারে মো. মেহেদীজ্জামান জানান, আগামী এক-দুই দিনের মধ্যে তিনি তদন্ত প্রতিবেদন বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. সাইদুল ইসলামের কাছে জমা দেবেন। তিনি আরো বলেন, ‘প্রথমেই অনুমান করা হয়েছিল বাচ্চাগুলো কোনো হিংস্র প্রাণীভোগী প্রাণীতে খেয়ে গেছে এবং আক্রমণ করে মেরে ফেলেছে। কিন্তু প্রথম পর্যায়ে ঘটনাস্থলে তেমন কোনো আলামত বা চিহ্ন (রক্ত, হাড়, মাংস) না থাকায় সন্দেহ হয়েছিল কেন্দ্রের দুই কর্মচারী এটা করে থাকতে পারে। মূলত চিতা বিড়ালটিই এ ঘটনা ঘটিয়েছে বলে আমরা এখন পুরোপুরি নিশ্চিত হয়েছি।’ দুই কর্মচারী জাকির ও মাহবুবের বিষয়ে বিধি মোতাবেক নিয়মতান্ত্রিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে তিনি জানান।
প্রথম ও দ্বিতীয় দফায় ৪৩টি কুমিরের ছানার নিখোঁজ হওয়ার ঘটনায় জাকির ও মাহবুবকে দায়ী করে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেন মেহেদীজ্জামান। ওই প্রতিবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ওই দুজনের বিরুদ্ধে খুলনার দাকোপ থানায় একটি মামলা করা হয়।
এ বিষয়ে পর্ব সুন্দরবনের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. সাইদুল ইসলাম বলেন, ‘ঘটনাকে কেন্দ্র করে বন বিভাগ ও পুলিশের পৃথক তদন্ত চলছে। ওই তদন্ত শেষে ওই দুই কর্মচারীর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। এ ছাড়া করমজলে যেন এ ধরনের ঘটনা পুনরায় না ঘটে সেজন্য বাড়তি সতর্ক অবস্থা নেওয়া হয়েছে। তারপরও সিসি ক্যামেরা ও জোরদার টহলের মাধ্যমে কেন্দ্রের প্যানগুলো আরো এক/দুই সপ্তাহ পর্যবেক্ষণ করা হবে।’
‘চিতা বিড়ালের পক্ষে তা সম্ভব নয়’
বেসরকারি সংস্থা সেভ দ্য সুন্দরবন ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ড. শেখ ফরিদুল ইসলাম বলেন, ‘প্রথম দুই দফায় ৪৩টি কুমিরের বাচ্চা নিখোঁজ হওয়ার পর থেকে বন বিভাগ যদি কড়া নিরাপত্তা ও নজরদারি করত তাহলে তৃতীয় দফায় আরো ১৯টি বাচ্চা মারা যাওয়ার ঘটনা ঘটত না। আমি মনে করি এটা বন বিভাগের গাফিলতি। এ ছাড়া পাঁচ-ছয় দিনের ব্যবধানে একটি চিতা বিড়াল কোনোভাবেই ৬২টি কুমিরের বাচ্চা মেরে এবং খেয়ে ফেলতে পারে না। এটা অসম্ভব। এ ছাড়া আমি একাধিকবার গিয়ে দেখিছি সেখানে যেভাবে লোহার তারের তৈরি নেট দিয়ে মোড়ানো তার মধ্যে কোনো প্রাণীর প্রবেশও সম্ভব না। মূলত কুমিরের বাচ্চা নিখোঁজের ঘটনা ধামাচাপা দিতেই বিড়ালের নাটক সাজানো হয়েছে এবং বিড়াল দিয়েই মৃত কুমিরের বাচ্চাগুলো খাইয়ে উদোর পিণ্ডি বুদোর ঘাড়ে চাপানোর চেষ্টা হচ্ছে বলে আমি মনে করি। ’
ফরিদুল ইসলাম আরো বলেন, ‘এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত কোস্ট গার্ড, র্যাব, নৌবাহিনী বা সেনা বাহিনী দিয়ে করিয়ে মূল রহস্য উদঘাটনে সরকারের প্রতি আমি জোর দাবি জানাচ্ছি। এ ছাড়া চিতা বিড়ালটিকে হত্যা না করে করমজল থেকে দূরে হিরনপয়েন্ট ও হাড়বাড়িয়াসহ অন্যস্থানে ছেড়ে দেওয়া যেত।’