‘চিতা বিড়ালের পেটে কুমিরের মাংস, নাশকতাও হতে পারে’

খুলনা জেলা প্রশাসন গঠিত তদন্ত কমিটির দাবি, সুন্দরবনে করমজল কুমির প্রজননকেন্দ্রে মৃত কুমিরের বাচ্চাগুলোকে চিতা বিড়ালই খেয়েছে। ওই চিতা বিড়ালের পেটে কুমিরের বাচ্চার মাংস পাওয়া গেছে। কুমিরের বাচ্চার নিখোঁজ হওয়ার ঘটনার পেছনে নাশকতাও হতে পারে বলে দাবি ওই কমিটির।
খুলনার অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট নূরে আলম ওই কমিটির আহ্বায়ক। ওই কমিটিতে থাকা অন্য দুই সদস্য হচ্ছেন খুলনার দাকোপের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মারুফুল আলম ও দাকোপ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. মনিরুজ্জামান।
আজ সোমবার ওই কমিটি সরেজমিনে কাজ শুরু করে। এ কমিটি চলতি সপ্তাহের মধ্যে জেলা প্রশাসক নাজমুল আহসানের কাছে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেবেন বলে জানিয়েছেন কমিটির আহ্বায়ক নূরে আলম।
সরেজমিন পরিদর্শন শেষে তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক নূরে আলম বলেন, ‘দুই দফায় ৪৩টি কুমিরের বাচ্চা নিখোঁজ এবং ওই সময় দুটি মৃত বাচ্চা উদ্ধারের ঘটনায় নাশকতা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। এ ঘটনায় প্রজননকেন্দ্রের দুই কর্মচারী মাহবুবুল আলম ও জাকির হোসেনের বিরুদ্ধে দাকোপ থানায় মামলা করেছেন ওই কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তৌহিদুর রহমান। সেহেতু পুলিশের তদন্ত শেষ হলে বোঝা যাবে বিষয়টি নাশকতা কি না।’
নূরে আলম আরো বলেন, ‘গত ৫ ফেব্রুয়ারি ওই কেন্দ্র থেকে যে ১৯টি কুমিরের বাচ্চার মৃতদেহ উদ্ধার করা হয় তা চিতা বিড়ালের মাধ্যমে হয়ে থাকতে পারে। কারণ বন বিভাগের স্থাপিত সিসি ক্যামেরার ফুটেজ পর্যালোচনা করে দেখা গেছে চিতা বিড়ালসহ অন্যান্য বন্যপ্রাণীর আনাগোনা আছে সেখানে। চিতা বিড়ালটি প্যানে (কৃত্রিম পুকুর) ঢুকে বাচ্চা খাওয়ার দৃশ্য দেখা যায় ওই ফুটেজে। এ ছাড়া প্রাণিসম্পদ বিভাগ চিতা বিড়ালের পেট থেকে কুমিরের বাচ্চার মাংস পেয়েছে। আর প্রথম দিকে দুটি কুমিরের বাচ্চার মৃতদেহ উদ্ধার করা হয় তার ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন এখনো আসেনি। আসার পর মূল ঘটনার বিষয় নিশ্চিত হওয়া যাবে।’
নূরে আলম বলেন, ‘তবে কুমিরের বাচ্চা নিখোঁজ হওয়ার ঘটনা নাশকতা কি না এবং কেন্দ্রের নিরাপত্তা ব্যবস্থা, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষতা বৃদ্ধি, পুনরায় এ ধরনের ঘটনা যাতে না ঘটে সে সব বিষয়েও কাজ করছে তদন্ত কমিটি। এ প্রতিবেদনে করমজল বন্যপ্রাণী প্রজননকেন্দ্রের সার্বিক বিষয়ে বিস্তারিত সুপারিশমালা তুলে ধরা হবে।’
এর আগে বন বিভাগের গঠিত প্রথম তদন্ত কমিটি কেন্দ্রের দুই কর্মচারীকে দোষারোপ করে তাদের বিরুদ্ধে মামলা করে। পরবর্তীতে গঠিত তদন্ত কমিটি বাচ্চাগুলো চিতা বিড়ালে খেয়েছে বলে প্রতিবেদন জমা দেয় বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. সাইদুল ইসলামের কাছে। প্রথম দুই দিনে ৪৩টি বাচ্চা নিখোঁজের ঘটনায় রহস্য থাকলেও পরে যে ১৯টি বাচ্চার মৃতদেহ উদ্ধার করা হয় সেগুলো চিতা বিড়ালের আক্রমণে মারা গেছে বলে দাবি বন বিভাগের।
অনুসন্ধানে জানা যায়, ২০১৩ সালে প্রজননকেন্দ্রের প্যান থেকে ৮টি, ২০১৪ সালে ১১টি এবং ২০১৫ সালে আরো ১৭টি কুমির বাচ্চা উধাও হয়েছিল। কিন্তু বন বিভাগের কাছে এসবের কোনো হিসাব পাওয়া যায়নি। আর ২০০২ সালে এ কুমির প্রজননকেন্দ্রের যাত্রা শুরু হলেও এ পর্যন্ত কুমিরের সঠিক পরিসংখ্যান নিয়ে কোনো তালিকা নেই।
করমজল প্রজননকেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তৌহিদুল ইসলাম জানান, ২০১৪ সাল থেকে বন্যপ্রাণীর পরিসংখ্যান নিয়ে একটি রেজিস্ট্রার খোলা হয়। তিনি এখানে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে এ রেজিস্ট্রার নিয়মিত করা হয়েছে। এর আগে যেসব কর্মকর্তা দায়িত্বে ছিলেন তাঁরা এ রেজিস্ট্রার নিয়ে কাজ করেননি। আর এ কারণে বিভিন্ন মহলের অভিযোগ, একটি সংঘবদ্ধ চক্র স্থানীয় বনকর্মীদের সহযোগিতায় দীর্ঘদিন ধরে এ প্রজনন কেন্দ্রের কুমিরসহ অন্যান্য প্রাণী পাচার করছে।