চট্টগ্রামে ৩০ পাহাড়ে ঝুঁকি নিয়ে বসবাস

চট্টগ্রামে পাহাড়ের ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় বসবাস বন্ধের সিদ্ধান্ত দীর্ঘ সাত বছরেও কার্যকর হয়নি; বরং পাহাড় কেটে নতুন নতুন অবৈধ বসতি ও স্থাপনা তৈরির প্রবণতা বাড়ছে। এ নিয়ে দফায় দফায় উদ্যোগ নিয়েও পাহাড়ের দখল ঠেকানো যাচ্ছে না। ফলে ঝুঁকিমুক্তও করা যাচ্ছে না পাহাড়গুলো।
রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ ১৫ জুনের মধ্যে তাদের পাহাড়গুলোতে অবৈধভাবে থাকা লোকজনকে সরিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিল। কিন্তু স্বেচ্ছায় না যাওয়ায় ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে পাহাড়ের পাদদেশে ঝুঁকিপূর্ণ বসবাসকারীদের উচ্ছেদ করা হয়।
এ বিষয়ে ম্যাজিস্ট্রেট শরীফুল ইসলাম বলেন, ‘এখনই ধসে পড়বে এমন বিষয় নিয়ে আমরা উদ্যোগ নিচ্ছি। এ বিষয়ে পুরো এলাকার লোকজন, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ, সরকার ও পলিটিক্যাল যাঁরা আছেন, তাঁদের সবাইকে নিয়ে একটা সমন্বিত উদ্যোগ নেওয়ার কথা চলছে। যাঁরা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণভাবে আছেন, আমরা প্রাথমিকভাবে তাঁদের উচ্ছেদ করার জন্য এসেছি।’
প্রশাসনের হিসাবমতে, চট্টগ্রামের ৩০টি পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণভাবে এখনো সাত শতাধিক লোক বসবাস করছে। গত বর্ষা মৌসুমের আগে ৬৬টি পরিবারকে এসব ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা থেকে উচ্ছেদ করেও শেষপর্যন্ত সেই এলাকায় মানুষের বসবাস ঠেকাতে ব্যর্থ হয়েছে প্রশাসন। এ ছাড়া রাজনৈতিক ছত্রছায়া ও প্রভাবশালীর কারণে ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়গুলো ঝুঁকিমুক্ত করা যাচ্ছে না বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক।
এদিকে, বাটালী হিলের একটি অংশে পাহাড় কেটে ভবন নির্মাণের অভিযোগ করেছেন এলাকাবাসী। তাঁরা বলছেন, পাহাড় কাটার ফলে কবরস্থানসহ নানা স্থাপনা ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে।
তবে এলাকাবাসীর এসব অভিযোগ মানতে নারাজ এ কে খান কোম্পানি। তারা বলছে, প্রায় সাড়ে ১৩ একর নিজেদের ভূমিতে আন্তর্জাতিক মানের পাঁচতারা হোটেল তৈরি করছে এ কোম্পানি। পাহাড় কাটার কথা অস্বীকার করে তারা জানায়, পাহাড় রক্ষা করেই হোটেল নির্মাণ করবে কোম্পানিটি।
এ কে খান গ্রুপকে জরিমানা
এদিকে চট্টগ্রামের বাটালী হিলের দুটি পাহাড় কেটে ভবন নির্মাণের দায়ে একে খান গ্রুপকে এক কোটি টাকা জরিমানা করেছে পরিবেশ অধিদপ্তর। গতকাল মঙ্গলবার পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক (মনিটরিং অ্যান্ড এনফোর্সমেন্ট) মো. আলমগীর বাটালী হিলে পাহাড় কাটা নিয়ে শুনানি শেষে এ রায় দেন। রায়ে পাহাড় কাটায় পরিবেশ ও প্রতিবেশগত ক্ষতিসাধন করা হয়েছে বলে জানানো হয়।
মো. আলমগীর এনটিভি অনলাইনকে জানান, গত বছরের ১১ নভেম্বর একে খান গ্রুপ বাটালী পাহাড়ে পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে অবস্থানগত ছাড়পত্র নেয়। এর শর্তে পাহাড়, টিলা কাটার ওপর বাধা-নিষেধ রাখা হয়। নিষেধ অমান্য করে এ কে খান গ্রুপ দুটি পাহাড় কেটে জীববৈচিত্র্য ধ্বংসসহ পরিবেশের অপূরণীয় ক্ষতি করেছে।
গতকাল গ্রুপের দুই কর্মকর্তাকে পরিবেশ অধিদপ্তর ঢাকায় এনফোর্সমেন্ট কার্যালয়ে তলব করা হয়। পাহাড় কাটার বিষয়ে অনুমতি না থাকায় এ প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে এক কোটি টাকা জরিমানা করা হয়।
এ ব্যাপারে একে খান কোম্পানির জেনারেল ম্যানেজার ওসমান গনি মজুমদার জানান, প্রতিষ্ঠানের নির্বাহী পরিচালক আতিকুর রহমানসহ তিনি শুনানিতে অংশ নিয়েছেন। তবে তাদের কোনো কথা পরিবেশ অধিদপ্তর গ্রহণ করেনি বলে জানান তিনি।