রামপালে জাতীয় কমিটির প্রচারে বাধার অভিযোগ

বাগেরহাটের রামপালে সুন্দরবনসংলগ্ন এলাকায় কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের বিরুদ্ধে কর্মসূচি চলাকালে তেল-গ্যাস-খনিজসম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির সদস্য সচিব অধ্যাপক আনু মুহাম্মদসহ নেতাকর্মীদের বাধা দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
গতকাল শুক্রবার খুলনার কয়েকটি এলাকায় বিদ্যুৎকেন্দ্রবিরোধী প্রচারণা চালাতে গেলে এই বাধার অভিযোগ পাওয়া যায়।
জাতীয় কমিটির কয়েকজন নেতা অভিযোগ করে বলেন, শুক্রবার জাতীয় কমিটির সদস্য সচিব আনু মুহাম্মদের নেতৃত্বে খুলনা শহরের গল্লামারী, সাঁচিবুনিয়া, বটিয়াঘাটা, চালনা বন্দর এলাকায় নির্মাণাধীন রামপাল কয়লাবিদ্যুৎ কেন্দ্রের কারণে সম্ভাব্য পরিবেশদূষণ, ভূমিধস সম্পর্কে সরেজমিন অনুসন্ধান এবং স্থানীয় জনগণের সঙ্গে মতবিনিময় করার জন্য জনসংযোগে নামেন নেতাকর্মীরা। এ সময় স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করেন অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ।
জাতীয় কমিটির নেতাদের অভিযোগ, কমিটির নেতাকর্মীরা দাকোপ উপজেলার চালনা বন্দরে পৌঁছে পথসভা শুরু করেন। এতে অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বক্তৃতা দেওয়ার সময় সাদা পোশাক পরা পুলিশের চার জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বেশ কয়েকজন পুলিশ সদস্যকে সঙ্গে নিয়ে সভাস্থল ঘিরে ফেলেন। তাঁরা বক্তৃতারত অধ্যাপক আনু মুহাম্মদকে বারবার বাধা দিতে থাকেন। পরে পুলিশি বাধার মুখে চালনার উদ্দেশে রওনা দিলে সেখানেও পথে বাধা দেওয়া হয়। চালনায় সভা করলে সমস্যা হবে বলে পুলিশের পক্ষ থেকে হুমকি দেওয়া।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, ‘ভয়ভীতি দেখানোটা সরকারের নৈতিক পরাজয়। এসব ভয়ভীতি না দেখিয়ে অবিলম্বে সুন্দরবন তথা দেশবিনাশী এই প্রকল্প বন্ধ করেন।’
ঘটনাস্থলে উপস্থিত গবেষক মাহবুব সুমন বলেন, ‘জাতীয় কমিটির দলটি বটিয়াঘাটা বাজারে পৌঁছানোর পর সেখানে বেশ থমথমে অবস্থা বিরাজ করতে দেখা যায়। জানা যায়, স্থানীয় জনগণকে স্থানীয় মাস্তান, ক্যাডার ও পুলিশ বাহিনী নানাভাবে হুমকি-ধমকি দিয়ে আসছে, যাতে করে কেউ রামপাল কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্রবিরোধী কথাবার্তা না বলে, এ সম্পর্কিত কোনো সভা-সমাবেশে উপস্থিত না হয়। অন্যথায় তাদের ভয়ানক বিপদ হবে বলে জানানো হয়।’
অ্যাক্টিভিস্ট সাইয়িদা গুলরুখ বলেন, ‘অধ্যাপক আনু মুহাম্মদের নেতৃত্বে আমরা গতকাল গল্লামারী, বটিয়াঘাটা, চালনা এলাকায় কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্রের কারণে সম্ভাব্য পরিবেশদূষণ নিয়ে গণসংযোগে এলাকায় গেলে কয়েকজন একত্র হয়ে কথা বলা তো দূরের কথা, লিফলেট বিলি করা, এমনকি স্থানীয় মানুষদের সাথে আমাদের কথা বলতে পর্যন্ত বাধা দেয়। এলাকায় সরকার ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা ভয় দেখিয়ে একটা ত্রাসের রাজত্ব বানিয়ে রেখেছে।’
জাতীয় কমিটির সংগঠকদের সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়, চালনায় জাতীয় কমিটির পূর্বনির্ধারিত সমাবেশে পুলিশ অনুমতি না দেওয়ায় পথসভা এবং সংক্ষিপ্ত কর্মিসভা করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছিল। সে লক্ষ্যেই জাতীয় কমিটির দলটি চালনা যায়।
মাহবুব সুমন বলেন, ‘চালনা যাওয়ার সময়ই আমরা দেখতে পাই রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য পশুর নদীতে ড্রেজিং করার ফলে দাকোপ উপজেলার বহু জায়গায় ভাঙন শুরু হয়েছে এবং বহু কৃষিজমি ও ঘরবাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে।’
চালনা সমাবেশেও বাধা দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। কয়েকজন নেতাকর্মী জানান, কমিটির নেতাকর্মী ও সংগঠকরা চালনা পৌঁছার পর স্থানীয় লোকজন অধ্যাপক আনু মুহাম্মদের সঙ্গে দেখা করতে এলে পুলিশ আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠে। পুলিশ সভাস্থল ঘিরে রাখে এবং নেতাদের জানায়, এখানে কোনো ধরনের সমাবেশ করা যাবে না। এমনকি ঘরের ভেতরও বৈঠক করা যাবে না। এরপর স্থানীয় লোকজনের মধ্যে পাঁচজন করে এলাকা ত্যাগ করার নির্দেশ দেয় পুলিশ। পরে পুলিশি বাধায় সমাবেশ করতে না পারলেও প্রচারপত্র বিলি করেন নেতাকর্মীরা।