গুলিতে স্ত্রীসহ এসআই নিহত, পুলিশ-প্রত্যক্ষদর্শীর বিপরীত ভাষ্য
‘পুলিশকে আবদুস সাত্তার মেসেজ দিয়েছিল যে তিনি আত্মহত্যা করতে যাচ্ছেন। পুলিশ বাসায় আসে। ওকে বোঝানোর চেষ্টা করে। তবে দরজা খুলেননি সাত্তার। পুলিশ দরজা ভাঙার চেষ্টা করে। এর পরই দুইটা শব্দ হয়। তখনই নিজের পিস্তল দিয়া দুইটা গুলি করছে মনে হয়।’
গতকাল শনিবার মিরপুরের রূপনগর আবাসিক এলাকায় নিজ বাসা থেকে বাড্ডা থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আবদুস সাত্তার (৩২) ও তাঁর দ্বিতীয় স্ত্রী সোমা আক্তারের (১৮) লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। ওই বাসার মালিক দেলোয়ার হোসেন এসব কথা বলেন।
অভিযোগ উঠেছে স্ত্রী সোমাকে হত্যার পর আত্মহত্যা করেছেন এসআই সাত্তার।
আজ রোববার বিকেলে কথা হয় বাড়ির মালিক দেলোয়ার হোসেনের সঙ্গে।
দেলোয়ার হোসেন এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘ঘটনার সময় আমি বাসাতেই ছিলাম। শুনলাম পুলিশ এসেছে বাসায়। আমার কাছে না এসে তারা চলে যায় ছয় তলায়। পরে সাত্তারের বাসার দরজা ভাঙবে কি না তার অনুমতি নিতে আমার কাছে আসে।’
এসআই সাত্তারের সঙ্গে পুলিশের কথা হয়েছিল কি না জানতে চাইলে দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘হ্যাঁ কথা হইছে।’
পুলিশ খবর পেল কীভাবে জানতে চাইলে দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘পুলিশকে মেসেজ পাঠাইছেন এসআই সাত্তার যে, তিনি সুইসাইড করতে যাচ্ছেন। এরপর পুলিশ সাত্তারকে কনভিনস করার চেষ্টা করছে। পরে কাজ না হওয়ায় দরজা ভাঙে।’ তার মানে পুলিশের উপস্থিতিতেই কি ওখানে গুলি হয়েছে? দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘হ্যাঁ। পুলিশ সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়ে দরজা ভাঙছে।’
গুলির শব্দ যখন হয়, তখন কোথায় ছিলেন জানতে চাইলে দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘তখন আমি ওখানেই (ফ্ল্যাটের দরজার সামনে) ছিলাম।’
দেলোয়ার হোসেন জানান, পাঁচ/ছয় মাস ধরে ওই ফ্ল্যাটে থাকতেন সাত্তার।
এসআই সাত্তারের ফ্ল্যাটের ঠিক দুই সিঁড়ি ওপরে হচ্ছে ওই বাসার ছাদ। আর ওই ছাদের ওপরে ছোট দুটি ফ্ল্যাট আছে। এর একটি ফ্ল্যাটে ভাড়া থাকেন ফাহিমা আক্তার।
ঘটনা সম্পর্কে জানতে চাইলে, ফাহিমা আক্তার বলেন, ‘বিকাল ৫টার দিকে হঠাৎ বিকট শব্দ শুরু হয়। মনে হচ্ছিল কিছু ভাঙা হচ্ছে। এই শব্দ শুনে আমার ছয় বছর বয়সী মেয়েটি ভয় পাচ্ছিল। ভেবেছিলাম কোনো কাজ হচ্ছে। এরপর দেখলাম বাসার নিচে অনেক মানুষ, পুলিশের গাড়ি। একটু পরে স্বামীর ফোন আসে। কারণ আমার স্বামী অফিস থেকে ফিরেছেন কিন্তু বাসার ভেতরে পুলিশ কাউকেই প্রবেশ করতে দিচ্ছে না।’
কোনো গুলির শব্দ পেয়েছেন কি না জানতে চাইলে ফাহিমা বলেন, ‘না শুধু দরজা ভাঙ্গার শব্দ পেয়েছি।’
অপরদিকে, ২২ নম্বর সড়কের ৩২ নম্বর পান্থনীড় নামক বাড়ির ঠিক উল্টো পাশেই হচ্ছে ৩১ নম্বর বাড়ি। ওই বাড়ির দারোয়ান মো. আলী হোসেন জানান, সন্ধ্যার সময় হঠাৎ করে দেখেন বাসার সামনে অনেকগুলো পুলিশের গাড়ি। গাড়ি থেকে নেমে পুলিশরা বাসার ভেতরে যাচ্ছে। দেখে অনেক ভয় পায়, কারণ প্রথমে মনে হয়েছে আবার কোনো জঙ্গি আস্তানা পাওয়া গেল নাকি। পরে জানতে পারেন যে দুজন লোক মারা গেছেন।
এসআই সাত্তারকে কোনোদিন দেখেছিলেন কি না জানতে চাইলে আলী হোসেন জানান, অনেক বার দেখেছি। কারণ তাঁর মোটরসাইকেল নিয়ে এসে বাসার সামনে রেখে দিতেন। কোনো গুলির শব্দ পেয়েছেন কি না জানতে চাইলে আলী হোসেন বলেন, ‘না, কারণ আমি তখন গেটে ছিলাম না, ঘরের ভেতরে ছিলাম।’
এসআই মেসেজ পাঠিয়েছিল, এমন বিষয় অস্বীকার করেছেন রূপনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সৈয়দ সহিদ আলম। তিনি বলেন, ‘না এটা সত্য না । আমরা জনগণের সংবাদে এবং অজ্ঞাত সোর্সের সংবাদেই ওখানে গেছি। যাওয়ার পরে দরজা ভেঙে ভেতরে গিয়ে দুইটা লাশ পেয়েছি। এগুলো ছিল গুলিবিদ্ধ।’
ওসি আরো বলেন, ‘দরজা ভেঙেছি আমরা। সঙ্গে বাড়িওয়ালাও ছিল।’