হাসিমুখে আশরাফ বললেন, কিছু বলব না

স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রীর দায়িত্ব হারানোর কয়েক ঘণ্টার মধ্যে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম যুবলীগের একটি অনুষ্ঠানে যোগ দিলেও দপ্তর হারানোর বিষয়ে কিছু বলতে চাননি । উপস্থিত সাংবাদিকদের হাসিমুখে বলেন, ‘এ বিষয়ে কিছু বলব না।’
আজ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টায় পূর্বনির্ধারিত কর্মসূচি অনুযায়ী বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে দলীয় কার্যালয়ে সহযোগী সংগঠন যুবলীগের ইফতার অনুষ্ঠানে যোগ দেন তিনি। ইফতার অনুষ্ঠানের দুই ঘণ্টা আগে তাঁকে দপ্তরবিহীন মন্ত্রী উল্লেখ করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ প্রজ্ঞাপন জারি করে।
দপ্তর হারানো সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম অনুষ্ঠানস্থলে উপস্থিত হলে যুবলীগের নেতা-কর্মীরা তাঁকে স্বাগত জানিয়ে মঞ্চে নিয়ে বসান। অনুষ্ঠানে বক্তৃতার পর মঞ্চেই ইফতার করেন আশরাফ।
যুবলীগ আয়োজিত এই ইফতার অনুষ্ঠানে সৈয়দ আশরাফ বলেন, আগামী নির্বাচন হবে সাংবিধানিক নিয়ম মেনে। আর সেই নির্বাচনে অংশ নেওয়ার জন্য বিএনপির প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
আওয়ামী লীগ সামরিক শাসনের সময়ও নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছে উল্লেখ করে সৈয়দ আশরাফ বলেন, নির্বাচনই গণতন্ত্র রক্ষার একমাত্র পথ। আওয়ামী লীগ এ দেশের কোনো নির্বাচন বর্জন করেনি।
আর বিএনপির সমালোচনা করে সৈয়দ আশরাফ বলেন, রমজান মাসেও মিথাচ্যার করছেন বিএনপির শীর্ষ নেতারা।
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে রোজার মাসে মিথ্যাচার বন্ধের আহ্বান জানিয়ে আওয়ামী লীগের এই নেতা বলেন, ‘রাজনীতিতে কথায় কথায় খালেদা জিয়া মিথ্যাচার করেন। রোজা রেখে মিথ্যা কথা বললে রোজা হয় না। তাঁকে ইফতার পার্টিতে একটা সত্য কথা বলতে শুনিনি। কিন্তু সত্য সত্যই আর মিথ্যা মিথ্যাই।’
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আরো বলেন, ‘আপনি (খালেদা) আল্লাহর ওয়াস্তে রোজার মাসে মিথ্যাচার পরিহার করুন। জ্বালাও-পোড়াও বন্ধ করুন। তাহলে এ দেশের মানুষের ভাগ্যে পরিবর্তন আসবে। জ্বালাও-পোড়াও করলে এ দেশেরই ক্ষতি হবে। রোজা-রমজানের দিনে আপনাদের কাছে বলতে চাই, আর যেন একজন মানুষ রাজনৈতিক কারণে হত্যা না হয়।’
বক্তব্যে আশরাফ প্রধান রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ বিএনপির ‘গণতন্ত্রহীনতার’ কথা তুলে ধরে বলেন, ‘গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া ব্যাহত হলে অশুভ শক্তির হাতে ক্ষমতা চলে যাবে।’ রাজনৈতিক কর্মসূচির নামে সহিংসতার পথ পরিহার করার জন্য খালেদা জিয়ার প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘একদিন না একদিন বাংলার মানুষ প্রতিশোধ নেবে।’
যুবলীগ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘আওয়ামী লীগের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে একসঙ্গে কাজ করছে যুবলীগ। আমি যুবলীগকে আওয়ামী লীগের পরই বিবেচনা করি।’
ইফতার অনুষ্ঠান শেষে অনুষ্ঠানস্থল থেকে পাশের আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে যান আশরাফ। সেখানে যাওয়ার পথে সংবাদকর্মীরা দুইবার তাঁর সাথে কথা বলার চেষ্টা করলেও স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের রদবদল প্রসঙ্গে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি দপ্তরবিহীন মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফ। সাংবাদিকদের বারবার প্রশ্নে সৈয়দ আশরাফের মুখে ছিল হাসি, কিন্তু তিনি কোনো প্রশ্নে জবাব না দিয়ে শুধু বলেছেন, ‘এ বিষয়ে কিছু বলব না।’
যুবলীগ কার্যালয়ে আশরাফ অবস্থানকালে সাংবাদিকরাও তাঁর সাথে কথা বলার জন্য সেখানে ঢোকার চেষ্টা করেন। কিন্তু ভেতর থেকে সাংবাদিকদের চলে যাওয়ার অনুরোধ জানিয়ে বলা হয়, আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এখন সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলবেন না।
আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে প্রায় আধা ঘণ্টা অবস্থানের পর বেরিয়ে এলে সাংবাদিকরা আবার ঘিরে ধরেন আশরাফকে। কিন্তু যুবলীগ নেতা-কর্মীরা তাঁকে ঘিরে এগিয়ে নিয়ে জাতীয় পতাকাশোভিত গাড়ি পর্যন্ত পৌঁছে দেন।
গত মঙ্গলবার একনেক সভার পর প্রথম আশরাফকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতির গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়েছিল। তখন কিশোরগঞ্জের নিজ নির্বাচনী এলাকায় এক অনুষ্ঠানে তিনি গুজবে কান না দিতে সাংবাদিকদের পরামর্শ দিয়েছিলেন।
সাত বছর ধরে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে আছেন বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ সহযোগী, বাংলাদেশের প্রথম অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলামের ছেলে সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। ৬৩ বছর বয়সী এই নেতা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের পদেও রয়েছেন প্রায় একই সময় ধরে।
মন্ত্রণালয় সূত্রে আজ বৃহস্পতিবার জানা যায়, গত মঙ্গলবার একনেক বৈঠকেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দলের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামকে অব্যাহতি দিয়ে প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেনকে এলজিআরডি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করতে মন্ত্রিপরিষদ সচিবকে নির্দেশনা প্রদান করেন। ওই দিনই এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনের খসড়া তৈরি করে তা অনুমোদনের জন্য প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠানো হয়। ওই দিন সন্ধ্যা পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী এ প্রস্তাব অনুমোদন করেননি।
ওই দিন শেষ বিকেলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মোশাররফ হোসাইন ভুঁইঞা সাংবাদিকদের বলেন, ‘এ বিষয়ে আপনাদের দেওয়ার মতো কোনো সংবাদ আমার কাছে নেই। কোনো সংবাদ হলে আপনারা জানতে পারবেন।’
এর পর আজ বিকেলে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সৈয়দ আশরাফুল ইসলামকে এলজিআরডিমন্ত্রীর পদ থেকে অব্যাহতি দিয়ে ওই পদে প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেনকে দায়িত্ব দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে। ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন এলজিআরডি মন্ত্রণালয়ের পাশাপাশি আগের মন্ত্রণালয়ে (প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের) অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করবেন এবং সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম দপ্তরবিহীন মন্ত্রী থাকবেন বলে প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়েছে।