কুড়িগ্রামে বন্যা : ত্রাণ না পাওয়ার অভিযোগ
![](http://103.16.74.218/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2017/07/16/photo-1500221328.jpg)
কুড়িগ্রামে ব্রহ্মপুত্র ও ধরলাসহ সবকটি নদ-নদীর পানি সামান্য কমলেও জেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। জেলার ৫২ ইউনিয়নের সাড়ে ৫০০ পরিবারের দুই লক্ষাধিক মানুষ ১০ দিন ধরে পানিবন্দি থাকায় তাদের দুর্ভোগ চরমে উঠেছে। ত্রাণ না পেয়ে না খেয়ে দিন পার করছে বেশির ভাগ পরিবার।
ব্রহ্মপুত্রের পানি এখনো চিলমারী পয়েন্টে বিপৎসীমার ৬ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে ব্রহ্মপুত্র নদের অববাহিকার চিলমারী, উলিপুর, রৌমারী, রাজিবপুর, কুড়িগ্রাম সদর ও নাগেশ্বরী উপজেলার ৪২ ইউনিয়নের প্রায় দুই শতাধিক চর ও দ্বীপচরের পাঁচ শতাধিক গ্রামের দুই লক্ষাধিক মানুষ এখনো পানিবন্দি জীবনযাপন করছে। টানা ১০ থেকে ১২ দিন পানিবন্দি থাকা এসব বানভাসী মানুষের ঘরে সঞ্চিত খাবার শেষ হয়ে যাওয়ায় চরম খাদ্য ও বিশুদ্ধ খাবার পানির সংকটে পড়েছে। চারণ ভূমি দীর্ঘদিন বন্যার পানিতে তলিয়ে থাকায় গো-খাদ্য সংকটও তীব্র আকার ধারণ করেছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, বেশির ভাগ চরাঞ্চলের ঘর-বাড়ি এখনো বন্যার পানিতে তলিয়ে থাকায় এসব এলাকার মানুষ নৌকা ও কলা গাছের ভেলায় বসে থেকে দিন পার করছে। এক বেলা খেয়ে না খেয়ে ঘরের ভিতর পাতা উঁচু মাচানে ছেলেমেয়ে নিয়ে রাত পার করছে। এসব এলাকার মানুষজন দিনভর চেয়ে থাকছে ত্রাণের নৌকার আশায়। কিন্তু দিন শেষেও ত্রাণের কোনো নৌকার দেখা না পাওয়ায় আবারও অপেক্ষা করছে পরের দিনের।
কুড়িগ্রাম সদরের যাত্রাপুর ইউনিয়নের খেয়ার আলগার চর গ্রামের শাহাজাহান আলীর স্ত্রী আলপনা বেগম জানান, ১২ দিন ধরে বাড়ির ভেতর এক গলা পানি। ঘরের ভিতর মাচান উচুঁ করেও থাকার উপায় নাই। এজন্য পার্শ্ববর্তী একটি উচুঁ জায়গায় ছেলেমেয়ে নিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন তিনি। ঘরে কোনো খাবার নাই। স্বামী মানুষের নৌকায় করে যাত্রাপুর হাট থেকে ধার দেনা করে সামান্য চাল নিয়ে এসেছে। তাও শেষ হয়ে গেছে। এখনও সরকারি কোনো সাহায্য পাননি তিনি।
একই চরের রবিউল ইসলামের স্ত্রী শেফালী বেগম বলেন, ‘১০ দিন ধরে নৌকায় নৌকায় ঘুরতেছি। বাড়িতে থাকার কোনো উপায় নাই। সকাল থেকে না খেয়ে আছি। সাহায্য তো দূরের কথা এখন পর্যন্ত কেউ দেখতেও আসে নাই।’
উলিপুর উপজেলার বেগমগঞ্জ ইউনিয়নের মসলার চরের দিনমজুর আব্দুল মালেক জানান, এখনও বাড়ি থেকে পানি নামে নাই। চেয়ারম্যান ১০ কেজি চাল দিয়েছে। বাড়িতে ৮ জন মানুষ। এ চাল দিয়া তিন দিনও যায় নাই।
একই চরের আজিজুল ইসলামের স্ত্রী জেসমিন বলেন, ‘আমরা কোনো সাহায্য পাই নাই। এই চরের দুই এক জন পেয়েছে।’
একই অবস্থা ব্রহ্মপুত্র নদের অববাহিকার উলিপুর উপজেলার সাহেবের আলগা ইউনিয়নের গুজিমারির চর, চর বাগুয়া ও চর দুর্গাপুর, চিলমারী উপজেলার অষ্টমীরচর ইউনিয়নের মাহনতলা, আমতলা, বড়াইবাড়ী, শাখা হাতি, কড়াই বরিশালসহ ২শতাধিক চরাঞ্চলের।
চিলমারী উপজেলার অষ্টমীর চরের চেয়ারম্যান মো. আবু তালেব ফকির, উলিপুরের হাতিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বিএম আবুল হোসেন ও সদরের যাত্রাপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. আইয়ুব আলী সরকার জানান, তাদের ইউনিয়নের বন্যা দুর্গত পরিবারের মধ্যে মধ্যে মাত্র ৩০ ভাগ পরিবারকে ত্রানের ১০ কেজি করে চাল দেওয়া হয়েছে। বাকী ৭০ ভাগ পরিবার খাদ্য সংকটে থাকলেও তাদেরকে কোন ত্রান সহায়তা দেওয়া হয়নি।
কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক আবু ছালেহ মোহাম্মদ ফেরদৌস খান জানান, এ পর্যন্ত বন্যার্ত মানুষের জন্য ৪০০ টন চাল, ১১ লাখ ৫০ হাজার টাকা ও চার হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার বরাদ্দ পাওয়া গেছে। এগুলো বিতরণ করা হয়েছে।