সুন্দরবনে ফাঁকা গুলি, বনরক্ষী-জেলেদের পাল্টাপাল্টি বক্তব্য

সুন্দরবনে মোংলার বৈদ্যমারী এলাকায় জেলেদের লক্ষ্য করে বন বিভাগের সদস্যরা বেশ কয়েকটি গুলি ছুড়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। আর এতে জেলে পরিবারসহ সাধারণ গ্রামবাসীর মধ্যে ভীতি ও চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে।
আজ বৃহস্পতিবার ভোরে বৈদ্যমারী টহল ফাঁড়ির সামনের খাল দিয়ে জেলেরা দুটি নৌকা নিয়ে যাওয়ার সময় বনরক্ষীদের এই গুলি ছোড়ার ঘটনা ঘটে।
জেলেদের দাবি, বনরক্ষীদের চাহিদা অনুযায়ী ১০ হাজার টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে তাঁদের লক্ষ্য করে ফাঁকা গুলি ছোড়া হয়। অন্যদিকে বনরক্ষীরা বলছেন, ওই নৌকায় হরিণের মাংসের মতো অবৈধ কোনো সামগ্রী আছে বলে তাঁদের কাছে খবর ছিল। সে জন্য তল্লাশি চালাতে নৌকাটি থামার সংকেত দেন তাঁরা। তবে সেই সংকেত অমান্য করায় ফাঁকা গুলি ছোড়া হয়।
জানা গেছে, গত ৭ সেপ্টেম্বর পূর্ব সুন্দরবনের চাঁদপাই রেঞ্জ কার্যালয় থেকে দুটি নৌকার বিএলসি বা বোট লাইসেন্স সার্টিফিকেট ও ছয়জনের পাস পারমিট নিয়ে বনের মৃগামারী-বাদামতলা এলাকায় মাছ ধরতে যান মোংলার চিলা ইউনিয়নের দক্ষিণ চিলা গ্রামের শুকুর শেখ (৫৫), আসাদুল জমাদ্দার (৪০), কামরুল জমাদ্দার (৪০), ইলিয়াছ জমাদ্দার (৪৫), মনির জমাদ্দার (৩৫) ও টিটু শেখ (৪০)। বনের খালে খেপলা জাল দিয়ে ও বিল সেচে ছয়দিন ধরে মাছ শিকার করেন তাঁরা।
জেলে শুকুর ও আসাদুল বলেন, সেখান থেকে ফিরে আসার সময় আজ ভোর পৌনে ৫টার দিকে বৈদ্যমারী টহল ফাঁড়ি অতিক্রম করার সময় বনরক্ষীরা তাঁদের নৌকা দুটি থামানোর জন্য সংকেত দেন। সংকেত অনুযায়ী নৌকা থামানোর পর বনরক্ষীরা তাতে তল্লাশি চালিয়ে প্রায় দেড় মণ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ দেখতে পান। নৌকায় এত মাছ কেন, বিষ ছাড়া এত মাছ ধরা যায় নাসহ নানা ধরনের জেরা করতে থাকেন জেলেদের। একপর্যায়ে নৌকায় স্বাভাবিকের তুলনা বেশি মাছ রয়েছে বলে জেলেদের কাছে ১০ হাজার টাকা দাবি করেন বনরক্ষীরা। এ সময় টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানিয়ে নৌকা ছেড়ে দিয়ে দ্রুতগতিতে চালিয়ে যাওয়ার সময় জেলেদের লক্ষ্য করে প্রায় ১০ রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছোড়েন বনরক্ষী আশরাফুল ইসলাম, মো. মনিরুজ্জামান ও মাসুদ মোল্লা। এ ঘটনায় ভয় পেয়ে যান বলে জানান জেলেরা। তাঁরা দ্রুত নৌকা দুটি ঘাটে ফেলে রেখে যে যারমতো বাড়ি ফিরে যান।
এদিকে গুলির শব্দে বৈদ্যমারী এলাকায় সাধারণ লোকজনের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। কিছুক্ষণের মধ্যেই বৈদ্যমারী ফরেস্ট অফিসের সামনে কয়েক শ নারী-পুরুষ জড়ো হন। লোকজনের জটলা বাড়তে থাকায় বনরক্ষীরা নিজেদের অফিসে ফিরে যান। তবে নৌকা দুটি সেভাবেই ঘাটে পড়ে ছিল। সেখান থেকে কিছু জব্দও করা হয়নি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বনরক্ষী মো. মনিরুজ্জামান বলেন, তাঁদের কাছে গোপন খবর ছিল যে ওই নৌকা দুটিতে অবৈধ সামগ্রী হরিণের মাংস থাকতে পারে। তাই তাঁরা নৌকা দুটি আটকের চেষ্টা করেন। নৌকা থামানোর জন্য সংকেত দেওয়া হলেও জেলেরা সংকেত না মেনে দ্রুত নৌকা নিয়ে চলে যাওয়ার সময় ফাঁকা গুলি ছোড়া হয় বলে জানান এই বনরক্ষী। এ ছাড়া জেলেদের কাছে ১০ হাজার টাকা দাবির বিষয়টি সঠিক নয় বলেও দাবি তাঁর।
এ বিষয়ে পূর্ব সুন্দরবনের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. মাহামুদুল হাসান বলেন, ‘ঘটনার সম্পর্কে আমি ইতিমধ্যে জেনেছি এবং সেখানকার কর্মকর্তাদের একটি রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে। রিপোর্ট অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
ওই নৌকা দুটিতে অবৈধ কোনো ধরনের বনজ সম্পদ থাকতে পারে তাই রাত জেগে বনরক্ষীরা ওই এলাকায় নজরদারিতে ছিলেন বলেও জানান মো. মাহমুদুল হাসান। তিনিও বলেন, বনরক্ষীরা নৌকা দুটিকে সংকেত দিলে নৌকা না থামিয়ে দ্রুত চালিয়ে যাওয়ার সময় তাঁদের লক্ষ্য করে ফাঁকা গুলি ছোড়া হয়।