দ্বিতীয় দফা ময়নাতদন্তেও সিফাতের আত্মহত্যার আলামত মেলেনি

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী ওয়াহিদা সিফাতের দ্বিতীয় দফা ময়নাতদন্তেও মেলেনি আত্মহত্যার আলামত। লাশের মাথার পেছনে ডান দিক থেকে বাম দিক পর্যন্ত বড় ধরনের আঘাতের চিহ্ন এবং মস্তিষ্কে রক্ত জমাট বেঁধেছিল বলে ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
আদালতের আদেশে কবর থেকে সিফাতের লাশ উত্তোলনের পর রংপুর মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক বিভাগের তিন সদস্যের মেডিকেল বোর্ড দ্বিতীয় দফা ময়নাতদন্ত সম্পন্ন করে। তবে ভিসেরা প্রতিবেদন না আসায় মেডিকেল বোর্ডের সদস্যরা দ্বিতীয় দফা ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে মৃত্যুর কোনো কারণ উল্লেখ করেননি।
আজ রোববার রাজশাহী মহানগর আদালত পরিদর্শক আবুল হাশেম জানান, সিফাতের দ্বিতীয় দফায় করা ময়নাতদন্তের একটি প্রতিবেদন গত বৃহস্পতিবার রংপুর থেকে তাঁর হাতে এসে পৌঁছেছে। তবে এতে সিফাত হত্যার মৃত্যুর কোনো কারণ উল্লেখ করা হয়নি। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ঢাকা থেকে ভিসেরা প্রতিবেদন না আসা পর্যন্ত সিফাতের মৃত্যুর কারণ নির্ণয় করা সম্ভব হবে না।
দ্বিতীয় দফা ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে সিফাত হত্যা মামলার বাদীপক্ষের আইনজীবী জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতির বিভাগীয় প্রধান অ্যাডভোকেট দিল সেতারা চুনি জানান, দ্বিতীয় দফায় করা ময়নাতদন্তে আত্মহত্যার কোনো আলামত পাওয়া যায়নি। সিফাতকে হত্যা করা হয়েছে, এই অভিযোগ সঠিক প্রমাণিত হতে যাচ্ছে বলে দাবি করেন তিনি।
তবে সিফাত হত্যা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা রাজশাহী মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাহিদুল ইসলাম জানান, দ্বিতীয় দফায় করা ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন এখনো তাঁর হাতে আসেনি। প্রতিবেদন হাতে পেলে বিস্তারিত বলা যাবে বলে জানান তিনি।
সিফাত হত্যা মামলার বাদীর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গত ৪ জুন রাজশাহী মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতের বিচারক জয়ন্ত রানী দাশ সিফাতের লাশ কবর থেকে তুলে পুনরায় ময়নাতদন্তের আদেশ দেন। আদালত রংপুর নগরীর মুন্সিপাড়া কবরস্থানে দাফন করা সিফাতের লাশ উত্তোলন করে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক, রংপুরের জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের সমন্বয়ে কমিটি করে পুনরায় ময়নাতদন্তের আদেশ দেন।
মামলার বাদীপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট দিল সেতারা চুনি জানান, ভিসেরা প্রতিবেদন না পেয়েই রাজশাহী মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের চিকিৎসকরা তড়িঘড়ি করে সিফাতের ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন দেওয়ায় বাদীপক্ষের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত পুনরায় ময়নাতদন্তের এই আদেশ দিয়েছিলেন।
আদালতের আদেশের পরিপ্রেক্ষিতে গত ২১ জুন রংপুরের নির্বাহী হাকিমের উপস্থিতিতে পুলিশ রংপুর নগরীর মুন্সিপাড়া কবরস্থান থেকে সিফাতের লাশ উত্তোলন করে। পরদিন রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের গঠিত তিন সদস্যের মেডিকেল বোর্ড ময়নাতদন্ত সম্পন্ন করে। বোর্ডের তিন সদস্যের মধ্যে ছিলেন সহযোগী অধ্যাপক ডা. রফিকুল ইসলাম ও মেডিকেল অফিসার ডা. হরেন্দ্রনাথ গোস্বামী। অপরজনের নাম জানাতে পারেননি মামলার বাদীপক্ষের আইনজীবী।
গত ২৯ মার্চ রাত ৯টা ২৫ মিনিটে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মৃত অবস্থায় নেওয়া হয় গৃহবধূ ওয়াহিদা সিফাতকে। পাঁচ বছর আগে সিফাত ভালোবেসে বিয়ে করেছিলেন মোহাম্মদ হোসেন রমজানের ছেলে মো. আসিফকে। বেকার আসিফ ব্যবসা করতে সিফাতের বাবার কাছ থেকে ২০ লাখ টাকা যৌতুক এনে দিতে তাঁকে চাপ দেন। এতে সিফাত রাজি না হওয়ায় দিনের পর দিন তাঁর ওপর চলতে থাকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন। নগরীর রাজপাড়া থানায় দায়ের করা মামলায় এমনই অভিযোগ করেন ওয়াহিদা সিফাতের চাচা মিজানুর রহমান খন্দকার। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০ (সংশোধনী/০৩)-এর ১১ (ক)/৩০ ধারায় যৌতুকের দাবিতে হত্যা ও সহায়তা করার অপরাধে দায়ের করা এই মামলায় সিফাতের স্বামী মো. আসিফসহ তিনজনকে আসামি করা হয়। অন্য আসামিরা হলেন সিফাতের শ্বশুর মোহাম্মদ হোসেন রমজান ও শাশুড়ি নাজমুন নাহার নাজলী। রাজপাড়া থানার পুলিশ মামলাটি তদন্তে সফল না হওয়ায় মামলাটি মহানগর গোয়েন্দা পুলিশে (ডিবি) হস্তান্তর করা হয়েছে।
ডিবির ওসি খন্দকার জাহিদুল ইসলাম বর্তমানে মামলাটি তদন্ত করছেন। তবে পুলিশ মহাপরিদর্শকের মনিটরিং সেল মামলাটি তদারকি করছে।
ডিবির ওসি জানান, সিফাতের স্বামী মো. পিসলি কারাগারে আটক রয়েছেন। মামলার অপর দুই আসামি সিফাতের শ্বশুর-শাশুড়িকে আটক করার চেষ্টা চলছে।