চাকরির কথা বলে ডেকে নিয়ে ‘অপহরণ’ ও টাকা দাবি

একটি প্রতিষ্ঠান থেকে ফোন করা হয় সোহেল রানাকে (২৬)। বলা হয়, চাকরি বিষয়ক একটি ওয়েবসাইট থেকে রানার জীবন বৃত্তান্ত নেওয়া হয়েছে। ঝালকাঠির ‘এরিয়া ম্যানেজার’ হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হবে। এজন্য সাক্ষাৎকার দিতে হবে।
আজ রোববার সাক্ষাৎকার দিতে ওই প্রতিষ্ঠানে যান সোহেল রানা। বলা হয়, ওই পদের বেতন ২৭ হাজার টাকা। তিন মাস পরে একটি গাড়িও দেওয়া হবে। তবে চাকরিতে যোগ দিতে হলে আজই জামানত হিসেবে ২১ হাজার টাকা দিতে হবে। রানা তা পারবেন না জানিয়ে বেরিয়ে আসেন। নিচে নামার পরই চার-পাঁচজন রানাকে পিস্তল ঠেকিয়ে মাইক্রোবাসে তুলে। চোখ, হাত পা বেঁধে গাড়ি চালায়।
আজ রোববার রাজধানীতেই এ ঘটনা ঘটে। দুপুরের দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় উদয়ন স্কুলের সামনে থেকে উদ্ধার করা হয় সোহেল রানাকে। মাইক্রোবাস থেকে রানাকে সেখানে ফেলে পালিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা।
ওই প্রতিষ্ঠানের নাম মার্কেন্টাইল ইসলামী লাইফ ইনস্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড। তোপখানায় ওই প্রতিষ্ঠানের কার্যালয়। ৪৫ তোপখানার একটি ভবনের ১৪তলায় ওই প্রতিষ্ঠানের কার্যালয়। ওই কার্যালয়েই ডাকা হয় সোহেল রানাকে।
সোহেল রানা সরকারি তিতুমীর কলেজে এমবিএ করছেন। এ ঘটনা নিয়ে এনটিভি অনলাইনের সঙ্গে কথা বলেন সোহেল রানা।
ভাইভার কথা বলে ডেকে নিয়ে..
গত ২৫ অক্টোবর সোহানুর রহমান নামের এক ব্যক্তি রানাকে ফোন করে মার্কেন্টাইল ইসলামী লাইফ ইনস্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের সহকারী ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এএমডি) হিসেবে পরিচয় দেন। তিনি জানান, তিনি ‘বিডিজবসে’র (বিডি জবস ডটকম) মাধ্যমে সোহেল রানার সিভিটি পেয়েছেন। রানাকে সাক্ষাৎকারের জন্য ডাকেন তিনি। ওই সময় সোহেল রানা নিজের গ্রামে ছিলেন। কিন্তু চাকরির প্রস্তাব পেয়ে দ্রুত চলে আসেন। গতকাল রাতেই ফোনে সোহানুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করেন রানা। রোববার সকালে রানাকে তাঁর তোপখানার কার্যালয়ে ডাকেন সোহানুর। সকাল ৯টার দিকে তোপখানায় মার্কেন্টাইল ইসলামী লাইফ ইনস্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের কার্যালয়ে যান সোহেল রানা।
সাক্ষাৎকার শেষে রানাকে জানানো হয়, ঝালকাঠী জেলায় ‘এরিয়া ম্যানেজার’ পদে তাঁর চাকরি হয়ে গেছে। বেতন ২৭ হাজার টাকা। আর তিন মাস পরে তাকে একটি গাড়িও দেওয়া হবে। তবে যোগ দিতে হলে আজ তাকে (রানা) ২১ হাজার টাকা জামানত দিতে হবে। সব কিছু শুনে রানার কাছে বিষয়টি সন্দেহজনক মনে হয়। তখন রানা জানান, এত টাকা দেওয়ার মতো তাঁর সামর্থ্য নেই, তাই তিনি এই চাকরি করবেন না। এই বলে ওই কার্যালয় থেকে বের হয়ে নিচে নেমে আসেন তিনি।
রাস্তায় দাঁড়াতেই চার-পাঁচজন তাঁকে (রানা) পিস্তল ঠেকিয়ে একটি সাদা মাইক্রোবাসে তুলে হাত, পা ও মুখ বেঁধে ফেলেন। কিছুক্ষণ গাড়িতে ঘোরানোর পর রানার এ টি এম কার্ড কেড়ে নিয়ে একটি বুথ থেকে টাকা তুলে নেয়। এরপর ফোন করে তাঁর পরিবারের কাছে থেকে আরো দুই লাখ টাকা চাইতে বলেন। তখন সোহেল বলেন এত টাকা দেওয়ার মতো সামর্থ্য তাঁর পরিবারের নেই।
সোহেল রানা জানান, এই কথা শুনে দুর্বৃত্তরা সোহেলকে রড দিয়ে মারতে থাকে। তখন সোহেল ঢাকায় তাঁর বন্ধু মেহেদীকে ফোন করে কিছু টাকা জোগাড় করতে বলেন। মেহেদী জানতেন সোহেল আজ সাক্ষাৎকার দিতে কোথায় গিয়েছেন। ফোনে সোহেলের কথা শুনে কিছুটা সন্দেহ হয় মেহেদীর। সঙ্গে সঙ্গে সে বিষয়টি শাহবাগ থানায় জানান। এরপর শাহবাগ থানার পুলিশ তোপখানায় ওই কার্যালয়ে গিয়ে খোঁজ-খবর নেওয়া শুরু করে।
পুলিশের তৎপরতা টের পেয়ে দুপুরের দিকে সোহেলকে উদয়ন স্কুলের সামনে মাইক্রোবাস থেকে ফেলে দিয়ে পালিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। এরপর সোহেলকে প্রথমে পল্টন থানায় পরে শাহবাগ থানায় নিয়ে আসা হয়।
সোহেল বলেন, ‘তারা আমারে রড দিয়ে মারে আর বলে শালা জলদি টাকা নিয়ে আয়। না হলে তোরে মাইরা ফালামু। ওদের মধ্যে একজন আবার বলে এই শালার কাছে থেকে টাকা না পাইলে এরে বগুড়া নিয়ে যামু। সব কিছু থেকে এটা নিশ্চিত যে আমার অপহরণের সঙ্গে ওই অফিসের লোকজনই জড়িত আছে।’
এরপর থানায়
মেহেদী এনটিভি অনলাইনকে জানান, সোহেল গতরাতেই ওই সাক্ষাৎকারের ব্যাপারে তাঁকে জানায়। সোহেল যখন ফোন করে তাঁর কাছে জরুরিভাবে ১০ হাজার টাকা জোগাড় করার কথা বলে তখনই তাঁর (মেহেদী) সন্দেহ হয়। এরপর মেহেদী বিষয়টি শাহবাগ থানায় জানান। এর পরই থানা উপপরিদর্শক (এসআই) শাহ আলম তাঁর সঙ্গে ওই কার্যালয়ে যান। প্রতিষ্ঠানের এএমডি সোহানুর রহমানকে জিজ্ঞাসাবাদ করে বেরিয়ে আসেন তিনি। কিছুক্ষণের মধ্যেই মেহেদী জানতে পারেন, সোহেলকে উদ্ধার করা হয়েছে। তিনি পল্টন থানায় আছেন। দ্রুত পল্টন থানায় গিয়ে সোহেল রানাকে নিয়ে আসা হয় শাহবাগ থানায়। থানায় নিয়ে আসার পর চিকিৎসার জন্য সোহেলকে হাসপাতালে পাঠানো হয়।
যেভাবে পাওয়া গেল সোহেল রানাকে
শাহবাগ থানার এসআই শাহআলম এনটিভি অনলাইনকে জানান, সোহেলকে ওই প্রতিষ্ঠানের এএমডির সহায়তায় অপহরণ করা হয়েছে এমন অভিযোগ পেয়ে তিনি ওই প্রতিষ্ঠানের কার্যালয়ে যান। আর একই সঙ্গে সোহেলের মোবাইল নম্বর ‘ট্র্যাকিং’-এ দিয়েছিলেন। ‘নম্বর ট্র্যাকিং’-এ দেওয়া ও পুলিশের উপস্থিতি বুঝতে পেরেই সোহেলকে ছেড়ে দেয় দুর্বৃত্তরা।
এই ব্যাপারে শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল হাসান এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘সোহেল রানার অপহরণের বিষয়টি তিনি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেবেন।’
‘বরখাস্ত করা হয়েছে সেই এএমডিকে’
ঘটনা সম্পর্কে জানতে বিকেলে ৪৫ তোপখানা রোডের ১৪ তলায় মার্কেন্টাইল ইসলামী লাইফ ইনস্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের কার্যালয়ে গিয়ে ঊর্ধ্বতন কোনো কর্মকর্তাকে পাওয়া যায়নি। ওই কার্যালয়ের অফিস সহকারী মো. মনিরুজ্জামান এনটিভি অনলাইনকে জানান, ওই ঘটনার পর আজ দুপুরেই এএমডি সোহানুর রহমানকে বরখাস্ত করা হয়েছে। তিনি এরই মধ্যে অফিস থেকে চলে গেছেন।