ধর্ষণচেষ্টার শাস্তি ২০ হাজার টাকা জরিমানা!
![](http://103.16.74.218/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2015/08/10/photo-1439220041.jpg)
রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার সদর ইউনিয়নে গত শনিবার আদিবাসী এক গৃহবধূকে (২২) ধর্ষণের চেষ্টা করেন এক যুবক। এই ঘটনায় ওই ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মামলা করতে না দিয়ে আজ সোমবার সালিশ বসিয়ে অভিযুক্ত যুবককে ২০ হাজার টাকা জরিমানা করেন এবং কয়েকটি বেত্রাঘাত করেন।
শাস্তি পাওয়া যুবকের নাম রকি (২৫)। তাঁর বাড়ি উপজেলার মাধাইপুর গ্রামে। তিনি সদর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মাসিদুল গণির চাচাতো ভাই দুলাল উদ্দীনের বাড়িতে কয়েক বছর ধরে কাজ করছেন।
স্থানীয় লোকজন জানান, গত শনিবার আদিবাসী ওই গৃহবধূ তাঁর বাড়িতে কাজ করছিলেন। তখন রকি তাঁর স্বামীর খোঁজে বাড়িতে যান। এ সময় রকি ওই গৃহবধূকে ধর্ষণের চেষ্টা চালান। ওই গৃহবধূর চিৎকারে প্রতিবেশীরা এগিয়ে এসে রকিকে হাতেনাতে আটক করে। খবর পেয়ে ইউপি চেয়ারম্যানের চাচাত ভাই দুলাল উদ্দীন রকিকে ছাড়িয়ে নিয়ে যান।
স্থানীয় লোকজন আরো জানান, এ ঘটনায় ওই গৃহবধূর স্বামী থানায় ধর্ষণ চেষ্টার মামলা করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু স্থানীয় ইউপি সদস্য ও চেয়ারম্যান তাঁকে মামলা করা থেকে বিরত রাখেন। পরে আজ সোমবার সকালে নবগ্রাম এলাকার জনৈক বজলুর রহমানের চাতালে কথিত সালিশে এর আপস করা হয়। সেই সালিশে সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাসিদুল গণি নিজে উপস্থিত ছিলেন। তাঁর সভাপতিত্বে ওই সালিশ অনুষ্ঠিত হয়। এ ছাড়া চেয়ারম্যানের ভাই রেন্টু মিয়া, স্থানীয় ইউপি সদস্য শহিদুল ইসলাম ও গ্রাম্য মাতব্বর ফজলুর রহমানসহ আরো কয়েকজন সালিশে উপস্থিত ছিলেন। সালিশে তাঁরা রকিকে ২০ হাজার টাকা জরিমানা করেন। একই সঙ্গে তাঁকে কয়েক ঘা বেত্রাঘাত করা হয়।
আজ সোমবার নবগ্রাম টুকটুকিপাড়ায় ওই গৃহবধূর বাড়িতে গেলে তিনি জানান, সালিশে রকিকে ২০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। তবে সে টাকাও তিনি পাননি।
গৃহবধূর মা বলেন, ‘এই গ্রামেই চেয়ারম্যান-মেম্বারের বাড়ি। তাই তাঁদের কথায় তাঁদের ওপরই ভরসা রেখেছিলাম। তাঁরা এর বিচার করেছেন। আগামীতে এমন ঘটনা ঘটলে রকিকে উপযুক্ত শিক্ষা দেওয়া হবে বলে তাঁরা জানিয়েছেন।
কথা বলতে গিয়ে দুলাল উদ্দীনকে তাঁর বাড়িতে পাওয়া যায়নি। ওই বাড়িতে অভিযুক্ত যুবক রকিও ছিল না। তাই এ ব্যাপারে তাঁদের কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
তবে স্থানীয় ইউপি সদস্য শহিদুল ইসলাম জানান, জরিমানার টাকা রকি কাল মঙ্গলবার পরিশোধ করবে বলে কথা হয়েছে। নারীঘটিত বিচার গ্রাম্য সালিশে করার এখতিয়ার আছে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে ইউপি সদস্য বলেন, ‘এখতিয়ার নেই, তবে এলাকায় শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখার স্বার্থে সবাই মিলেই তা করা হয়েছে।’
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ইউপি চেয়ারম্যান মাসিদুল গনি মুঠোফোনে বলেন, ‘ঘটনা শুনেছি। গৃহবধূর অভিযোগ মিথ্যা।’
সালিশে আপনি ছিলেন কি না, জানতে চাইলে চেয়ারম্যান দাবি করেন, সালিশে তিনি ছিলেন না।
তবে সরেজমিনে গেলে আদিবাসী গ্রামবাসী জানিয়েছেন, অভিযুক্ত রকি চেয়ারম্যানের চাচাতো ভাইয়ের বাড়িতে কাজ করেন। এ জন্য তিনি বিষয়টি পুলিশকে জানাতে দেননি। পরে তিনি নিজে উপস্থিত থেকেই এর আপস করেছেন। গৃহবধূর অভিযোগ মিথ্যা বলে প্রচার করে তিনি বিষয়টির ধামাচাপা দেওয়ারও চেষ্টা করেছিলেন।
জানতে চাইলে গোদাগাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এস এম আবু ফরহাদ বলেন, ‘নারী ও শিশু নির্যাতনের কোনো ঘটনা গ্রাম্য সালিশে আপস করার বিধান নেই। ওই ঘটনা আমাকে কেউ জানায়নি। জানালে ওই যুবককে গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনতাম। এখন খোঁজ-খবর নিয়ে এ ঘটনায় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’