নিয়োগের ছয় মাসের মাথায় ওএসডি

নিয়োগের মাত্র ছয় মাসের মধ্যে রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আবুল হায়াতকে ওএসডি (বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা) করা হয়েছে। তাঁকে রাজশাহী শিক্ষা বোর্ড থেকে প্রত্যাহার করে ঢাকার মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে যুক্ত করা হয়েছে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সহকারী সচিব ফাতেমাতুল জান্নাত স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে বৃহস্পতিবার এ নির্দেশ দেওয়া হয়। বিকেল ৪টায় এ সংক্রান্ত একটি আদেশ রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডে ফ্যাক্সযোগে পৌঁছে।
বিষয়টি নিশ্চিত করে রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডের সচিব অধ্যাপক আবুল কালাম আজাদ এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘এ সংক্রান্ত একটি প্রজ্ঞাপন রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডে পাঠানো হয়েছে। এর আগে চেক জালিয়াতিসহ বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগে বোর্ড চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আবুল হায়াতের বিরুদ্ধে তদন্ত হয়। তাতে অনিয়মের বিষয়গুলো ধরা পড়ে। এ কারণে চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।’
বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার বিকেল ৪টায় সরকারি আদেশ শিক্ষা বোর্ডে আসার পরও বিকেল ৫টা পর্যন্ত অফিস করেছেন প্রফেসর ড. আবুল হায়াত। এ নিয়ে বোর্ডের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
সন্ধ্যায় অধ্যাপক ড. আবুল হায়াতের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি।
চলতি বছরের ১৬ ফেব্রুয়ারি আবুল হায়াত রাজশাহী মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডে চেয়ারম্যান হিসেবে যোগ দেন। এর আগে তিনি রাজশাহী মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ হিসেবে কর্মরত ছিলেন। রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডে যোগদানের কিছুদিন পর তাঁর বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম ও নিয়োগ বাণিজ্যের অভিযোগ ওঠে।
সে সময় থেকেই ড. আবুল হায়াতকে প্রত্যাহারের দাবিতে আন্দোলনে নামে সরকার সমর্থিত জাতীয় শিক্ষক-কর্মচারী ফ্রন্ট রাজশাহী জেলা শাখা। গত ৭ এপ্রিল ফ্রন্টের নেতারা ১৫ দিনের মধ্যে আবুল হায়াতকে প্রত্যাহারের দাবিতে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে শিক্ষামন্ত্রীর কাছে স্মারকলিপি পেশ করেন। এর পর লাগাতার আন্দোলন চলছিল তাঁর বিরুদ্ধে।
যোগদানের কয়েক দিন পর গত ৩ মার্চ আবুল হায়াত বোর্ড সভার অনুমোদন ছাড়াই গত ৩ মার্চ কাজল কিংকর তেওয়ারি নামের একজনকে তাঁর একান্ত সচিব এবং মতিউর রহমানকে সমন্বয়কারী কর্মকর্তা হিসেবে অস্থায়ী ভিত্তিতে নিয়োগ দেন। এসব নিয়োগে অনিয়ম হয়েছে এমন অভিযোগ তুলে কর্মকর্তাদের যোগদানে বাধা দেন শিক্ষা বোর্ডের কর্মকর্তা-কর্মচারী ইউনিয়নের নেতা-কর্মীরা।
পরে চেয়ারম্যানের নির্দেশে ওই দুই কর্মকর্তাসহ আরো একজনকে শিক্ষা বোর্ড মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজে অস্থায়ী ভিত্তিতে নিয়োগ দেওয়া হয়। তিনজনেরও বেতন ছাড় করার জন্য সচিব আবুল কালাম আজাদকে নির্দেশ দেওয়া হলে, তিনি তা নাকচ করে দেন। নিয়োগগুলো বিধিসম্মত নয় — এ যুক্তি দেখিয়ে তিনি বেতন ছাড় বন্ধ রাখেন।
এ নিয়ে চেয়ারম্যানের সাথে সচিবের বিরোধ শুরু হয়। তবে জানা গেছে, এর জের ধরে গত ১৩ জুলাই বিকেলে সচিবের দপ্তরে গিয়ে তাঁকে লাঞ্ছিত করে চেয়ারম্যানের পক্ষের কয়েকজন কর্মচারী।
এ ঘটনায় ওই দিন চেয়ারম্যানকে লিখিত অভিযোগ দিলেও তিনি অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায়, গত ১৫ জুলাই সচিব শিক্ষা বোর্ডের তিন কর্মচারীকে আসামি করে রাজশাহী নগরীর রাজপাড়া থানায় মামলা করেন। তবে মামলার কোনো আসামিকে এখনো পুলিশ গ্রেপ্তার করেনি।