বোনকে বলেছিলেন, ‘আমি একটু ঢাকার বাইরে যাচ্ছি’

অফিস থেকে পাঁচদিনের ছুটি নিয়েছিলেন সাংবাদিক ফয়সাল আহমেদ। বড় বোন শিউলিকে বলেছিলেন, ‘আমি একটু ঢাকার বাইরে যাচ্ছি।’ পরিবারের কারো সঙ্গে এতটুকুই শেষ কথা। কিন্তু এই যাওয়াই যে শেষ যাওয়া হবে, কে জানত?
নেপালের ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বিধ্বস্ত হওয়া বিমানের যাত্রীদের একজন ছিলেন বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল বৈশাখী টিভির স্টাফ রিপোর্টার ফয়সাল আহমেদ (২৯)। গতকাল সোমবার কাঠমান্ডুর ত্রিভুবন বিমানবন্দরে অবতরণের সময় বিধ্বস্ত হয় ইউএস-বাংলার বিমানটি। বিমানে যাত্রী ছিলেন ৬৭ জন। চারজন ছিলেন ক্রু। এখন পর্যন্ত ৫০ জন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
বৈশাখী টেলিভিশনের প্রধান বার্তা সম্পাদক সাইফুল ইসলাম জানান, পারিবারিক প্রয়োজন উল্লেখ করে অফিস থেকে ছুটি নেন ফয়সাল। কিন্তু নেপাল যাওয়ার বিষয়টি কাউকেই বলেননি।
সাইফুল জানান, ফয়সালের বিষয়ে সবশেষ তথ্য জানতে বৈশাখী টেলিভিশনের অ্যাসাইনমেন্ট এডিটর মিঠুন মোস্তাফিজ, রিপোর্টার হাবিবুর রহমান ও ফয়সালের এক মামাকে কাঠমান্ডু পাঠানো হয়েছে। তাঁরা সেখানে পৌঁছেছেন। তাঁদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য গণমাধ্যমে বিবৃতি আকারে জানানো হবে।
জানা যায়, রাজধানীর ধানমণ্ডির ১৫ নম্বরে বড় বোন শিউলি আক্তারের বাসায় থাকতেন ফয়সাল। আর মা-বাবার সঙ্গে সবশেষ দেখা হয়েছে আট থেকে নয় মাস আগে।
বড় বোন শিউলি জানান, নেপাল যাওয়ার বিষয়ে কাউকে কিছু বলেননি ফয়সাল। সকালে বাসা থেকে বের হওয়ার সময় জানান যে তিনি ঢাকার বাইরে যাচ্ছেন। বিমান বিধ্ধস্ত হওয়ার অনেক পর তাঁরা জানতে পারেন ফয়সাল নেপাল গেছেন।
শরীয়তপুরের ডামুড্যা পৌর এলাকার সামসুদ্দিন সরদার ও সামসুন্নাহার বেগমের বড় ছেলে ফয়সাল আহমেদ। পাঁচ ভাই বোনের মধ্যে তিনি দ্বিতীয়। ২০০৪ সালে ডামুড্যা মুসলিম উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করার পর ঢাকায় তিতুমীর কলেজ ও স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটিতে পড়াশোনা করেন ফয়সাল। ব্যক্তিজীবনে অবিবাহিত ফয়সাল বৈশাখী টেলিভিশনের হয়ে প্রধানমন্ত্রীর বিট নিয়ে কাজ করতেন।
সন্তানের মর্মান্তিক মৃত্যুর খবরে বাবা-মা ও স্বজনদের আহাজারিতে ভারি হয়ে উঠেছে শরীয়তপুরের গ্রামের বাড়ির পরিবেশ। মা শামসুন্নাহার কিছুক্ষণ পর পরই অচেতন হয়ে পড়ছেন।
ফয়সালের বাবা সামসুদ্দিন সরদার স্থানীয় সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, ফয়সাল নেপাল গেছে তা পরিবারের কেউ জানত না। বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার অনেক পরে ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি বাহাদুর ব্যাপারী ফোন করে জানতে চান, ফয়সাল কোথায়? এরপর তিনি বড় মেয়ে শিউলিকে ফোন করেন। তিনি জানান, ফয়সাল ঢাকার বাইরে যাওয়ার কথা বলে বাসা থেকে বের হয়েছেন। রাতে তাঁরা নিশ্চিত হন ওই বিমানে ফয়সাল ছিলেন।
এদিকে সদা হাস্যোজ্জল ফয়সালের মৃত্যুর খবরে শোকের ছায়া নেমে এসেছে গণমাধ্যমকর্মীদের মাঝে। শোক ও সমবেদনা জানিয়েছেন, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি-ডিআরইউ ও বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন-ক্র্যাব নেতারা। ফেসবুকের পাতাজুড়ে ফয়সালের দীর্ঘদিনের সহকর্মীরা লিখেছেন নানান স্মৃতিকথা। পোস্ট দিয়েছেন অসংখ্য ছবি।
সোমবার ৬৭ যাত্রীসহ মোট ৭১ জন আরোহী নিয়ে ইউএস বাংলা এয়ারলাইনসের একটি ফ্লাইট ঢাকা থেকে রওনা দিয়ে নেপালের স্থানীয় সময় দুপুর ২টা ২০ মিনিটে কাঠমান্ডু বিমানবন্দরে পৌঁছায়। অবতরণের সময় বিমানটিতে আগুন ধরে যায়। এরপর বিমানবন্দরের কাছেই একটি ফুটবল মাঠে বিমানটি বিধ্বস্ত হয়।