কুড়িগ্রামে দেড় লাখেরও বেশি মানুষ চারদিন ধরে পানিবন্দি
![](http://103.16.74.218/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2015/08/24/photo-1440436768.jpg)
কুড়িগ্রাম জেলায় বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি হয়েছে। ধরলা নদীর পানি বিপৎসীমার ৩০ সেন্টিমিটার ও ব্রহ্মপুত্রের পানি বিপৎসীমার ১১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
জেলার ৫৫ ইউনিয়নের প্রায় ২৫০ গ্রামের দেড় লাখেরও বেশি মানুষ চারদিন ধরে পানিবন্দি জীবন যাপন করছে। জেলার নাগেশ্বরী পৌর এলাকার ডুবাছড়ি ব্রিজ ও সংযোগ সড়ক ভেঙে যাওয়ায় বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে ডায়নারপাড়, দীঘিরপাড়, জামতলা, চৌবাড়ী, বাবুরহাট, ডাকনিরপাট, ভগিরভিটা, আরাজীকুমরপুরসহ ১০ গ্রামের প্রায় ৩০ হাজার মানুষ। অপরদিকে জেলার নয় উপজেলার গ্রামাঞ্চলের কাঁচাপাকা সড়ক তলিয়ে থাকায় গ্রামাঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে।
কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার ব্রহ্মপুত্রের অববাহিকার ঝুনকার চরের বাসিন্দা আনোয়ার বলেন, ‘বন্যার পানিতে ঘরবাড়ি সব তলিয়ে আছে। আর থাকার মতো অবস্থা নাই। বউ, বাচ্চা, হাঁস-মুরগি নিয়ে উচু বাঁধে আশ্রয় নিয়েছি। খাবার নাই, শুকনো খাবার খেয়ে কোনো রকমে দিন পার করছি।’
সদরের যাত্রাপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুল গফুর বলেন, ‘আমার ইউনিয়নে পানিবন্দি পরিবারের সংখ্যা প্রায় পাঁচ হাজার। এসব পরিবারের জন্য মাত্র তিন টন চাল বরাদ্দ পেয়েছি। তালিকা তৈরি হচ্ছে। আগামীকাল অথবা পরশুদিন বিতরণ করা হবে।’
নাগেশ্বরী পৌরসভার মেয়র আব্দুর রহমান বলেন, ‘পানির প্রবল স্রোতে ডুবাছড়ি সেতু ভেঙে ১০ গ্রামের মানুষের যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। আমি সেতুটি পরিদর্শন করেছি। দ্রুত যোগাযোগের বিকল্প ব্যবস্থা করাসহ সেতুটি নির্মাণের জন্য চেষ্টা করা হবে।
কুড়িগ্রাম কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. শওকত আলী জানান, বন্যার পানিতে চারদিন ধরে নিমজ্জিত হয়ে আছে জেলার প্রায় ৪৬ হাজার হেক্টর জমির আমনক্ষেত।
দুর্গত এলাকায় ত্রান না পৌছায় দুর্ভোগে পড়েছে বানভাসী মানুষ। দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ খাবার পানি ও গবাদি পশুর খাদ্য সংকট।
জেলা প্রশাসন থেকে বন্যা দুর্গতদের জন্য ৮০ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হলেও তা এখনো বিতরণ শুরু হয়নি।
জেলা প্রশাসক খান মো. নুরুল আমীন বলেন, ‘বন্যা দুর্গতদের জন্য ৮০ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। যা উপজেলা প্রশাসন ও ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানদের মাধ্যমে দ্রুত বিতরণের কাজ চলছে। আরো বরাদ্দ চেয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে।’
কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মাহফুজুর রহমান বলেন, ‘গত ২৪ ঘণ্টায় চিলমারী পয়েন্টে ব্রহ্মপুত্রের পানি সাত সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার ১১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। অপরদিকে সেতু পয়েন্টে ধরলার পানি তিন সেন্টিমিটার কমলেও বিপৎসীমার ৩০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। নুনখাওয়া পয়েন্টে ব্রহ্মপুত্রের পানি ছয় সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার সামান্য নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।