খুলনায় মেয়র পদে পাঁচজনের মনোনয়নপত্র দাখিল

ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র ও কাউন্সিলর পদপ্রার্থীরা রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে তাঁদের মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।
মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিনে বৃহস্পতিবার মেয়র পদে বিএনপি, আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ও সিপিবি মনোনীত প্রার্থীরা মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। ৩১টি ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে ২৮৯ জন ও ১০টি সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর পদে ৪৮ জন মনোনয়ন জমা দিয়েছেন। এ সময় খুলনার নূর নগরে নির্বাচন কমিশন কার্যালয় ও আশপাশের এলাকা জুড়ে ছিল উৎসবমুখর পরিবেশ।
বৃহস্পতিবার দুপুর ২টা ১০ মিনিটে দলীয় নেতাদের নিয়ে সাবেক মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক বিস্কুট রঙের মুজিব কোট পরে মনোনয়নপত্র জমা দেন। এই সময় তাঁর সঙ্গে ছিলেন বঙ্গবন্ধুর ভ্রাতুস্পুত্র বিসিবি পরিচালক শেখ সোহেল, খুলনা চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি কাজী আমিনুল হক, অ্যাডভোকেট সাইফুল ইসলাম, অ্যাডভোকেট আনিসুর রহমান পপলুসহ প্রমুখ।
মনোনয়নপত্র জমা শেষে তালুকদার আব্দুল খালেক বলেন, তিনি যে উন্নয়ন কাজ শুরু করে এসে ছিলেন, বর্তমান মেয়রের সময় সে কাজ ব্যাহত হয়েছে। তিনি খুলনার উন্নয়ন অব্যাহত রাখতে এবং আধুনিক খুলনা গড়তে আবারও প্রার্থী হয়েছেন।
সাবেক মেয়র জানান, দেশে সুষ্ঠু সুন্দর পরিবেশ বিরাজ করছে। তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন, খুলনার ভোটাররা তাদের কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন পেতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মনোনীত প্রার্থী হিসেবে তাঁকে নৌকা প্রতীকে ভোট দিয়ে জয়ী করবেন। তিনি জোর দিয়ে বলেন, খুলনার প্রতিটি ওলি-গলি তাঁর পরিচিত। তিনি ওয়ার্ড কাউন্সিলর থেকে মেয়র হয়েছেন। তাঁর সময় খুলনায় যে উন্নয়ন কাজ হয়েছে তা ভোটাররা মূল্যায়ন করবে।
খুলনা সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে মেয়র পদে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী তালুকদার আব্দুল খালেক মনোনয়নপত্র জমা দেন। ছবি : এনটিভি
বিকেল ৩টা ৩০ মিনিটে ২০ দলীয় নেতাদের নিয়ে বিএনপির মনোনীত মেয়র পদপ্রার্থী নজরুল ইসলাম মঞ্জু সফেদ পাঞ্জাবি আর হাসি মুখ নিয়ে তাঁর মনোনয়নপত্র জমা দেন। এ সময় সাবেক সংসদ সদস্য কাজী সেকেন্দার আলী ডালিম, সাহরুজ্জামান মোর্তজা, সেকেন্দার জাফর উল্লাহ সাচ্চু, অধ্যক্ষ তরিকুল ইসলাম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার পর নজরুল ইসলাম মঞ্জু বলেন, এই সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন সুষ্ঠু হতে পারে না। তবু তাঁরা আন্দোলনের অংশ হিসেবে এই নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন।
মঞ্জু বলেন, খুলনা মহানগরীতে ধানের শীষ প্রতীক কোনো দিন হারেনি। বিগত নির্বাচনে বিএনপি প্রার্থী মেয়র নির্বাচিত হলেও তাঁকে আগের মতো প্রতিমন্ত্রীর মর্যাদা দেওয়া হয়নি। খুলনা সিটির জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয়নি, খুলনাকে বঞ্চিত করা হয়েছে। এবার ভোটাররা ভোটের মাধ্যমে তার জবাব দিবে। তিনি সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচনের স্বার্থে খুলনার পাঁচ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের (ওসি) বদলি করার আহ্বান জানান।
এ ছাড়া জাতীয় পার্টির শফিকুর রহমান (মূল নাম মুশফেকুর রহমান) দরবেশ বেশ নিয়ে দলীয় নেতাদের নিয়ে মনোনয়নপত্র জমা দেন। জাতীয় প্রার্থীর মেয়র পদপ্রার্থী মুশফেকুর রহমান হিসেবে পরিচিত হলেও খুলনা সদর থানাধীন এলাকায় ভোটার তালিকায় তাঁর নাম শফিকুর রহমান।
জাতীয় পার্টির একটি অংশের মতে, হত্যা মামলাসহ নানা তথ্য গোপন করতে তিনি এই নাম বদলের কৌশল নিয়েছেন।
খুলনায় নির্বাচন কমিশনের একটি দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, এই জাপা প্রার্থীর মনোনয়নে নিজেকে স্বশিক্ষিত উল্লেখ করাসহ নানা ধরনের অসঙ্গতি রয়েছে।
৪ লাখ ৯৩ হাজার ৯৩ জন ভোটারের খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে এবার মেয়র পদে আটটি মনোনয়নপত্র বিক্রি হলেও বৃহস্পতিবার বিকেল পর্যন্ত জমা পড়ে পাঁচটি।
নির্বাচন কমিশনের খুলনা আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা ও রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. ইউনুচ আলী এই তথ্য জানিয়ে বলেন, ৩১টি ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পদের জন্য ২৬২টি এবং সংরক্ষিত ১০টি ওয়ার্ডের জন্য মোট ৬২টি মনোনয়নপত্র বিক্রি হয়েছিল।