মোংলা বন্দরে শ্রমিকের মৃত্যু, বিক্ষোভ

মোংলা বন্দর চ্যানেলের হাড়বাড়িয়ায় এলাকায় অবস্থানরত একটি বিদেশি জাহাজে সিলিং (বস্তা বাধার রশি) ছিড়ে সারের বস্তা চাপা পড়ে এক শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। আজ সোমবার সন্ধ্যা পৌনে ৭টার দিকে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
দুর্ঘটনার পর থেকে ওই জাহাজের পণ্য খালাস কাজ বন্ধ রয়েছে। জাহাজে কর্মরত অবস্থায় শ্রমিকের মৃত্যুর ঘটনায় শহরজুড়ে শ্রমিকদের মধ্যে চরম অসন্তোষ বিরাজ করছে। রাতেই বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা মোংলা পৌর শহরের ট্রেডার্স মসজিদ রোডস্থ স্টিভিডরস (শ্রমিক ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান) মেসার্স খালিদ ব্রাদার্সের অফিসের সামনে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ করে। পরে শ্রমিক নেতারা ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
মোংলা বন্দর শ্রমিক কর্মচারী সংঘের সাধারণ সম্পাদক মো. ওমর ফারুক সেন্টু ও স্টিভিডরস মেসার্স খালিদ ব্রাদার্সের মোংলা অফিসের ম্যানেজার মো. কামরুজ্জামান শহীদ জানান, বন্দরের পশুর চ্যানেলের হাড়বাড়িয়ার ৭ নম্বর এলাকায় অবস্থানরত এমভি আতাকামা জাহাজে সার খালাস কাজে নিয়োজিত ছিলেন খালিদ ব্রাদার্সের খামালী শ্রমিক মো. হেলাল (৩২)। সোমবার সন্ধ্যা পৌনে ৭টার দিকে জাহাজের হ্যাচের মধ্যে (জাহাজ অভ্যন্তরে) কাজ করার সময় সিলিং ছিড়ে পড়লে সিলিংয়ে থাকা সারের বস্তার নিচে চাপা পড়েন হেলাল। এতে ঘটনাস্থলেই তাঁর মৃত্যু হয়। এরপর রাতেই জাহাজ থেকে হেলালের মরদেহ নামিয়ে শহরের শ্রম কল্যাণ সড়কের বালুরমাঠ এলাকার বাড়িতে নেওয়া হয়।
সিলিং ছিড়ে পড়ে খামালী শ্রমিক হেলালের মৃত্যু হওয়ায় তাঁর দাফন-কাফনের জন্য মঙ্গলবার সকালে নিহতের পরিবারের কাছে ১৫ হাজার টাকা দেওয়ার কথা জানিয়েছেন স্টিভিডরস ম্যানেজার শহীদ। তবে অন্য শ্রমিকেরা অভিযোগ করে বলেন, জাহাজের প্রতি সিলিংয়ে ২০টি করে বস্তা বাধার নিয়ম থাকলেও ওই কোম্পানির (খালিদ ব্রাদার্স) সুপারভাইজার মো. কাশেম খামালী শ্রমিকদের দিয়ে ৩৬ থেকে ৪০টি করে বস্তা বেঁধে দেওয়ার জন্য বাধ্য করেন। অতিরিক্ত বস্তা বোঝাইয়ের কারণেই সিলিং ছিড়ে এ দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে দাবি করেছেন শ্রমিকরা। তাঁরা আরো বলেন, যে সিলিং ছিড়ে পড়েছে তাতে ২০টির জায়গায় ৩৬টি সারের বস্তা ছিল। কয়েকজন স্টিভিডরস মালিকদের অব্যবস্থাপনা ও খামখেয়ালিপনার কারণেই দুর্ঘটনার শিকার হয়ে হতাহত হচ্ছে শ্রমিক-কর্মচারীরা। জাহাজে পণ্য বোঝাই-খালাস কাজে ওই স্টিভিডরস কোম্পানি দুর্বল সরঞ্জামাদি ব্যবহার ও শ্রমিকদের ঝুকিপূর্ণ কাজে বাধ্য করায় এ দুর্ঘটনা ঘটেছে বলেও দাবি করেছেন শ্রমিকরা।
এ ছাড়া বন্দরের শ্রম আইন অনুযায়ী নিহতের পরিবারকে ন্যায্য পাওনাদি পরিশোধের জন্য সংশ্লিষ্ট স্টিভিডরসের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বন্দরে কর্মরত শ্রমিক-কর্মচারী ও নেতারা। বন্দরের খামালী শ্রমিক হেলালের মৃত্যুতে শোক ও পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানিয়েছেন মোংলা বন্দর শ্রমিক কর্মচারী সংঘের সাধারণ সম্পাদক মো. ওমর ফারুক সেন্টুসহ অন্য নেতারা।