রাজশাহীর গর্ব, ‘বিশ্বের বৃহত্তম ডিজিটাল ঘড়ি’

রাজশাহী নগরের উপকণ্ঠে কাপাশিয়া গ্রামের সরদারপাড়ায় কয়েকজন যুবক মিলে তৈরি করেছেন ৭৮৫ বর্গফুটের বিশাল এক ডিজিটাল ঘড়ি। তাঁদের দাবি, এই ডিজিটাল ঘড়িই বিশ্বের সবচেয়ে বড় ঘড়ি। গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় ঘড়িটি উদ্বোধনের পর থেকেই দর্শনার্থীরা ঘড়িটি দেখতে ছুটে আসছে। দর্শনার্থীদের দাবি, ‘ঘড়িটি রাজশাহীর গর্ব।’
সরেজমিন দেখা গেছে, ঘড়িটির উচ্চতা ১৭ দশমিক ৫ ফুট, আর প্রস্থ ৪৪ দশমিক ৯ ফুট। প্রায় দুই বছরের চেষ্টায় বিদ্যুৎচালিত এই বিশাল ঘড়ি তৈরি হয়েছে। ৪৮টি টিউব লাইট, স্টিলের বডি আর বাঁশের ফ্রেম দিয়ে এটি তৈরি করতে খরচ হয়েছে আড়াই লাখ টাকা।
কাপাশিয়া গ্রামের বাসিন্দা মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘কোনো কিছু উদ্ভাবনের খবর শুনে এর আগে কখনো কাপাশিয়া গ্রামে সাধারণ মানুষের ভিড় জমেনি, যা শুক্রবার রাত থেকে হচ্ছে। ঘড়িটি দেখতে এত মানুষের সমাগমে গ্রামের মানুষ আনন্দিত।’
আরেক বাসিন্দা লুৎফর রহমান বলেন, ‘যারা ঘড়িটি উদ্ভাবন করেছে, তাদের প্রতি গ্রামবাসী কৃতজ্ঞ। তারা অনেক পরিশ্রম করে এটি তৈরি করেছে। এই ঘড়িটিই হয়তো কাপাশিয়ার মুখ উজ্জ্বল করবে।’
ঘড়ি দেখতে আসা পুঠিয়ার যুবক আসাদুল হক বলেন, ‘এই ঘড়ি তৈরির খবর শুনে একনজর দেখতে চলে এসেছি। যদিও দিনের বেলা শুধু ঘড়ির ফ্রেম ছাড়া দূর থেকে কিছুই বোঝা যায় না। তবে কাছে এসে দেখা যাচ্ছে ঘড়িটি। এতেই ভালো লাগছে।’
শুক্রবার সন্ধ্যায় উদ্বোধনের পর ঘড়িটি তৈরির মূল সমন্বয়কারী আকুল হোসেন মিঠু দাবি করেন, এটিই বিশ্বের সবচেয়ে বড় ডিজিটাল ঘড়ি। রাতের বেলা এই ঘড়িটির সময় দেখা যাবে অন্তত ১০ কিলোমিটার দূর থেকে।
মিঠু জানান, এলাকাবাসীর সহযোগিতায় ঘড়িটি নির্মাণ করা হয়েছে। গ্রামেগঞ্জের অবহেলিত প্রতিভার যেন মূল্যায়ন করা হয়, সেই দাবিকে সামনে আনতেই ঘড়িটি নির্মাণ করা। এলাকার গর্ব ঘড়িটি নির্মাণে কেউ দিয়েছেন বাঁশ, কেউ বিদ্যুতের তার, কেউ বাল্বসহ আনুষঙ্গিক জিনিসপত্র দিয়েছেন। আবার যাঁরা কিছুই দিতে পারেননি, তাঁরা দিয়েছেন শ্রম। ফলে গ্রামের সবার ঐকান্তিক পরিশ্রমের ফসল হিসেবেই ঘড়িটি তৈরি হয়েছে।
বিভিন্ন বইপত্র ঘেঁটে এবং ইন্টারনেট থেকে সাহায্য নিয়ে বছর দুয়েক আগে ডিজিটাল ঘড়িটি নির্মাণকাজে হাত দেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর মিঠু। মিঠু জানান, এ ঘড়ির নির্মাণকাজে যাঁরা সর্বাত্মকভাবে সহযোগিতা করেছেন তাঁরা হলেন সোহেল রানা, রাজন, শামসুল আলম, সেলিম, মোস্তাফিজুর রহমান, মুন্না, ফজলুল হক, মারুফ, শাহীন প্রমুখ।
মিঠু আরো জানান, রাতে ঘড়িটি দূর থেকে দেখা গেলেও দিনের আলোতে দেখা যাবে কাছ থেকে। তবে ঘড়িটিতে এলইডি বাল্ব সংযোজন করতে পারলে দিনের বেলাতেও দূর থেকে ঘড়িটির সময় দেখা যাবে। এ জন্য প্রায় আট লাখ টাকা ব্যয় হবে। এত টাকা তাদের পক্ষে এখন সংগ্রহ করা সম্ভব নয় বলে তাঁরা আপাতত শুধুমাত্র টিউব লাইট দিয়েই রাতের বেলা ডিজিটাল এই ঘড়িটি দেখার ব্যবস্থা করছেন।