মাদকবিরোধী অভিযান : পুলিশের বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানির অভিযোগ

মাদকবিরোধী অভিযানের অংশ হিসেবে একজনকে ধরতে গিয়ে তাঁর স্ত্রীকে শ্লীলতাহানির অভিযোগ উঠেছে পুলিশের বিরুদ্ধে। এমনকি বেসরকারি মেডিকেল কলেজপড়ুয়া ওই নারীকে থানায় ধরে নিয়ে যাওয়ার ঘটনাও ঘটে।
গত ২৯ মে খুলনা শহরের ময়লাপোতা এলাকার একটি বাড়িতে এ ঘটনা ঘটলেও সামাজিক অবস্থান ও লোকলজ্জার ভয়ে বিষয়টি এত দিন প্রকাশ করেনি পরিবারটি।
জানা গেছে, খুলনা শহরের একসময়ের বিখ্যাত চিকিৎসক মো. নাসিমউদ্দিনের ছোট ছেলে মাসুদউদ্দিন রাসেল কম্পিউটার, ল্যাপটপ, বিদেশি মোবাইল মেরামতের কাজ করেন।
প্রত্যক্ষদর্শী ও পরিবারটির সদস্যরা জানান, ঘটনার দিন বিকেলে ওই বাড়িতে অভিযান চালায় সোনাডাঙ্গা মডেল থানার একটি দল। পুলিশ সদস্যরা বাড়ির তৃতীয় তলার কলাপসিবল গেট ধাক্কা দিতে শুরু করেন। সে সময় বাড়ির ভেতরে ইফতারির আয়োজন চলছিল। দরজায় পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে রাসেলের স্ত্রী বোরকা পরতে যান। এসব কারণে দরজা খুলতে দেরি হয়। ফলে দরজা খোলার সঙ্গে সঙ্গে দুজন নারী পুলিশ রাসেলের স্ত্রীর দুই হাত ধরে রাখে। সঙ্গে থাকা পুরুষ পুলিশ সদস্যরা ওই নারীকে চড়-থাপ্পড় মারেন। বোরকার ভেতরে মাদক আছে অভিযোগ করে রাসেলের স্ত্রীর দেহ তল্লাশির নামে শ্লীলতাহানি করেন। পরে তাঁকে বাসা থেকে টেনেহিঁচড়ে সোনাডাঙ্গা থানায় নিয়ে যান পুলিশ সদস্যরা। সেখানে তাঁকে প্রায় পাঁচ ঘণ্টা আটক রাখা হয়।
তবে রাসেলের অভিযোগ, তাঁর নামে থানায় কোনো মামলা নেই। তার পরও কয়েক বছর ধরে ঈদের সময় এলেই পুলিশ তাঁর বাসায় এ ধরনের অভিযান চালায়। রাসেল আরো জানান, সোনাডাঙ্গা থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তৈমুর বর্তমান ওসিকে তাঁর স্ত্রীকে ছেড়ে দিতে অনুরোধ করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে প্রায় পাঁচ ঘণ্টা পরে ছেড়ে দেওয়া হয় ওই নারীকে।
রাসেলের স্ত্রী ওই মেডিকেল কলেজ ছাত্রীও অভিযোগ করে বলেন, তাঁর মুখের নেকাব টেনে ছিঁড়ে ফেলেছে পুলিশ।
খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের সোনাডাঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মমতাজুল হক জানান, মাদকবিরোধী অভিযানের অংশ হিসেবে মাদকসেবী হিসেবে পরিচিত রাসেলকে ধরতে তাঁর বাড়িতে অভিযান চালান তাঁরা। কিন্তু পুলিশের পরিচয় পাওয়ার পরও ঘরে দরজা খুলতে দেরি করা হয়। পরে পুলিশ ঘরে ঢুকে দেখতে পায় রাসেলকে পেছনের গেট দিয়ে পালানোর সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে। এতে উত্তেজিত হয়ে পুলিশ সদস্যরা রাসেলের স্ত্রীকে আটক করে সোনাডাঙ্গা থানায় নিয়ে আসেন। অবশ্য পরে সাবেক ওসির সুপারিশে তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
এক প্রশ্নের জবাবে ওসি মমতাজুল হক স্বীকার করেন, মাদকসেবী রাসেলের আস্তানায় পুলিশ কর্মকর্তাদের যাতায়াত করার ঘটনা রয়েছে বলে তিনি শুনেছেন। তবে রাসেলের স্ত্রীর শ্লীলতাহানির অভিযোগ অস্বীকার করেন। তিনি জানান, অভিযানে নারী পুলিশ সদস্যরা ছিলেন। তাঁরাই রাসেলের স্ত্রীকে থানায় নিয়ে আসেন।