আগুনে ঝলসে দেওয়া নুসরাত লাইফ সাপোর্টে

ফেনীর সোনাগাজীতে আগুনে ঝলসে দেওয়া মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহানকে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।
আজ সোমবার দুপুরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের সমন্বয়ক ডা. সামন্তলাল সেন গণমাধ্যমকে এই তথ্য জানান।
ডা. সামন্তলাল সেন বলেন, ‘১৫ পারসেন্ট বার্ন হলেই আমরা মনে করি মেজর বার্ন। এটা ৮০ পারসেন্ট বার্ন। আমরা মেডিকেল বোর্ড সিদ্ধান্ত নিলাম, কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে যদি শরীর ভালো থাকে তাকে আজকে আমরা ওটিতে নিয়ে যাব।’
‘কিন্তু সকালে এসে আমরা দেখি তার শ্বাসকষ্টটা বেড়ে গেছে। তখন যদি আমরা তাকে লাইফ সাপোর্টে না নিই, তাহলে শ্বাসটা থেমে যাবে। এ জন্যই তার অভিভাবকদের সঙ্গে কথা বলে লাইফ সাপোর্টে নিয়ে গেছি।’
‘এত বড় মেজর বার্নে সর্তিকার অর্থে রেজাল্ট ভালো হয় না। আমরা যা দেখি তাতে ব্যাক করার চান্স খুব কম। তারপরও তো মিরাকল, উপরওয়ালার একটা ইচ্ছা আছে,’ যোগ করেন দগ্ধ রোগীদের চিকিৎসায় অভিজ্ঞ এই চিকিৎসক।
নুসরাত এবার সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসা থেকে আলিম (এইচএসসি সমমান) পরীক্ষা দিচ্ছিলেন। তিনি সোনাগাজীর উত্তর চরচান্দিয়া গ্রামের মাওলানা এ কে এম মুসা মানিকের মেয়ে। তিন ভাই ও এক বোনের মধ্যে তিনি তৃতীয়।
গত শনিবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে মাদ্রাসা ভবনের ছাদে দুর্বৃত্তরা তাঁর গায়ে আগুন দেয়। তাঁকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় ফেনী সদর হাসপাতাল থেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে পাঠানো হয়। এ ঘটনায় দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি।
পরিবারের অভিযোগ, মাদ্রাসার অধ্যক্ষ এস এম সিরাজউদ্দৌলা গত ২৭ মার্চ নুসরাত জাহানের শ্লীলতাহানির চেষ্টা করেন। নুসরাত বিষয়টি বাসায় জানালে তাঁদের মা সোনাগাজী থানায় মামলা করেন। ওই মামলার পরিপ্রেক্ষিতে সোনাগাজী থানা পুলিশ অধ্যক্ষ সিরাজউদ্দৌলাকে গ্রেপ্তার করে।
এরপর মামলা প্রত্যাহারের জন্য নুসরাতকে চাপ দেয় সিরাজউদ্দৌলার লোকজন। কিন্তু নুসরাত অপারগতা প্রকাশ করেন। এ অবস্থায় আলিম পরীক্ষা শুরুর দিন থেকে ভাই নোমান নুসরাতকে পরীক্ষার হলে বসিয়ে দিয়ে আসতেন। শনিবারও তিনি তাই করেন। একটু পরেই মাদ্রাসার তিনতলার ছাদে বোরকা পরিহিত চারজন নুসরাতের গায়ে আগুন লাগিয়ে দেয়।
এদিকে গতকাল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজউদ্দৌলাকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে। এ ছাড়া আলিম পরীক্ষার জন্য মাদ্রাসা বন্ধ না রেখে সকাল ৭টা থেকে ৯টা পর্যন্ত চালু রাখা হয়েছিল। নুসরাতকে পুড়িয়ে হত্যাচেষ্টার ঘটনার পর শনিবার বিকেলে প্রতিষ্ঠানের নোটিশ বোর্ডে আগামী ১৭ এপ্রিল পর্যন্ত মাদ্রাসা বন্ধের ঘোষণা দিয়ে হোস্টেলের ছাত্রদের হল ত্যাগ করতে বলা হয়েছে। তবে আলিম পরীক্ষা কেন্দ্র হিসেবে মাদ্রাসা খোলা থাকবে।